প্রধানমন্ত্রী আজ হবিগঞ্জ আসছেন : দেড় লক্ষ লোক সমাগমের প্রত্যাশা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ দীর্ঘ ১৪ বছর পর আজ শনিবার এক দিনের সফরে হবিগঞ্জে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন ও জেলা আওয়ামী লীগ। পুরো জেলা জুড়ে বিরাজ করছে উৎসব মূখর পরিবেশ। সবার মুখে মুখে শুধু একই কথা আমরা বার বার নৌকায় ভোট দিচ্ছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা সরাসরি দেখতে পারিনি। এবার আমাদের আশা পূরণ হবে। প্রধানমন্ত্রীর হবিগঞ্জ আগমন উপলক্ষে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন সবাই। হবিগঞ্জ শহরের সর্বত্র পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ। বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের দেয়াল, বাসা বাড়ীর দেয়ালসহ রাস্তাঘাট পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজ সম্পন্ন। এদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবপুর উপজেলা থেকে শুরু করে জনসভাস্থল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে তোরণ, ফেস্টুন আর ব্যানারে ছেয়ে গেছে। জেলায় প্রায় দেড় সহস্রাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও এসব তোরণ নির্মাণ করা হয়। সকল উপজেলা সদরেই এই তোরণ এবং ব্যানার লাগানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন শেষে স্থানীয় নিউফিল্ডে জনসভায় ভাষন দিবেন। ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ’ শ্লোগান নিয়ে এই জনসভায় দেড় লক্ষ লোকের সমাগম হবে বলে প্রত্যাশা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমপি এডভোকেট মো. আবু জাহির। তিনি জানান, শেখ হাসিনার আগমনে উচ্ছ্বাসিত হবিগঞ্জবাসী। প্রতিদিনই নেতাকর্মীরা মিছিল মিটিং করছেন। নেতাকর্মীদের সমাবেশস্থলে আনার জন্য ৫ শতাধিক গাড়ী ব্যবহার করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন পেশাজীবিরাও আসবেন সমাবেশ স্থলে। বিদেশ থেকেও অনেক প্রবাসী নেতারা এসেছেন।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল আবেদীন সবুজ সিলেটকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রশাসনের সবাই এখন ব্যস্ত শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতির জন্য। সার্কিট হাউজকে সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে সালাম গ্রহণ করবেন সেটিও নতুনভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। হবিগঞ্জ শহরে তিনটি ও নবীগঞ্জের বিবিয়ানায় দুটি হেলিপ্যাড প্রস্তুত করা হয়েছে। হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জনসভাস্থলসহ হবিগঞ্জ শহরের সর্বত্র বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিশেষ বাহিনী এসএসএফ’র কর্মকর্তারা হবিগঞ্জে অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করছেন।
জেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আলমগীর চৌধুরী জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমনে হবিগঞ্জের উন্নয়নে নতুন কোন ঘোষনা আসবে এই প্রত্যাশা সবার। বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জেলার সবগুলো আসনে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত হওয়ায় এই প্রত্যাশা সবার।
হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট মো. আবু জাহির জানান, প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনেক দাবি জনগণের। সকল দাবীকে একত্র করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। তবে সবচেয়ে বড় দাবি হল হবিগঞ্জে একটি মেডিকেল কলেজ ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড এলাকায় অবস্থান করবেন। এ সময় তিনি বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড সম্প্রসারণ প্রকল্প নবীগঞ্জ, বিবিয়ানা ধনুয়া ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসবিশিষ্ট উচ্চ-চাপ পাইপ সঞ্চালন লাইন, বিবিয়ানা বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট- ০২ (৩৪১ মেগাওয়াট), ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়ক (এন-২) হাইওয়ে হতে বিবিয়ানা পাওয়ার প্ল্যান্ট সংযোগ সড়ক এবং ফায়ার সার্ভিস ডিফেন্স স্টেশন নবীগঞ্জ এর উদ্বোধন করবেন।
এ ছাড়া তিনি বিবিয়ানা বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট- ০১ (দক্ষিণ ৩৮৩ মেগাওয়াট) পারকুল নবীগঞ্জ, বিবিয়ানা বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট-০৩ (উত্তর ৪০০ মেগাওয়াট) পারকুল নবীগঞ্জ ও বিজনাই ব্রিজ, নবীগঞ্জ (রসুলপুর-রইছগঞ্জ-পানিউমদা রাস্তায় ৯০.১০০ মি. গার্ডার আরসিসি ব্রিজ নির্মাণ) এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। দুপুর পৌনে ১টা থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত নামাজ ও মধ্যহ্ন বিরতির জন্য হবিগঞ্জ সার্কিট হাউজে অবস্থান করবেন।
দুপুর ২টায় হবিগঞ্জ নিউফিল্ডের জনসভাস্থলে আধুনিক স্টেডিয়াম, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, নার্সিং ইনস্টিটিউট, নতুন জেলা পরিষদ অডিটরিয়াম ও কমিউনিট সেন্টার, জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবন, সার্ভার স্টেশন, আলেয়া জাহির কলেজ, বানিয়াচঙ্গ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, জেলা কমান্ডেন্ট আনসার ও ভিডিপি কার্যালয় ভবনের উদ্বোধন এবং আজমিরীগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, শাহজিবাজার (৩৩০ মেগাওয়াট) কম্বাইন্ড সার্কেল পাওয়ার প্ল্যান্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
দুপুর ২টা ১০ মিনিটে নিউফিল্ডে প্রধানমন্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সফর সঙ্গী হয়ে থাকতে পারেন আরো কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী।