দক্ষিণ সুরমায় নৌকা ও ধানের শিষে ভাগ বসাতে চান স্বতন্ত্ররা
নুরুল হক শিপু: প্রার্থী ও সমর্থকদের কাটছে নির্ঘুম রাত। অব্যাহত আছে বিরামহীন প্রচারণা। দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের পাড়ামহল্লা ব্যানার-পোস্টারে এখন সয়লাব। প্রার্থীরা লিফলেট হাতে ছুটছেন ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি। দিনরাত চলছে গণসংযোগ, আলোচনাসভা আর উঠোনবৈঠক। পছন্দের প্রার্র্থীদের বিজয়ী করতে ভিলেজ পলিটিক্স এখন পুরো দমে চাঙা হয়ে গেছে। প্রতিপক্ষের সমর্থকদের ঘায়েল করতে বিভিন্ন ইউনিয়নে ছড়ানো হচ্ছে নানা রটনা। আলোচনাসভা উঠোনবৈঠকে বিতর্কিত সমর্থকরা বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না পেয়ে দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে গোপনে চালাচ্ছেন অপপ্রচার।
নির্বাচনকে ঘিরে সরগরম ৭টি ইউনিয়নের অলিগলি। ঘড়িতে সকাল ৮টা বাজলেই মাইকে বেজে ওঠে ‘মা-বোনদের বলে যাই, নৌকা মার্কায় ভোট চাই। ধানের শিষে দেখিয়া, ভোট দিবেন ঠাসিয়া। আনারস মার্কায় দিলে ভোট, শান্তি পাবে দেশের লোক।’ শুধু যে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পক্ষেই মাইকিং করা হচ্ছে এমন নয়; সংরক্ষিত নারী সদস্য ও সাধারণ সদস্য পদের প্রার্থীদের পক্ষেও চলছে মাইকিং, গণসংযোগ, আলোচনাসভা ও উঠোনবৈঠক।
আগামী ৭ মে চতুর্থ ধাপে দক্ষিণ উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে তেতলী, মোল্লারগাও ও কামালবাজারে মামলাজনিত জটিলতায় নির্বাচন হচ্ছে না। বাকি ৭টি ইউনিয়নে নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীরা মাঠ দখলের লক্ষ্যে শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দিনরাত। ভোট আদায়ের জন্য তারা দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। ৭টি ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা এগিয়ে থাকায় বেকায়দায় রয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা। তবে দুটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সাথে মূল লড়াইয়ে চলে আসবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
কুচাই ইউনিয়নে এবার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুজন। তারা হচ্ছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সিলেট মহানগর যুবলীগের সিনিয়র সদস্য ও মহানগর ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জাকিরুল আলম জাকির এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কালাম। এই দুজন প্রার্থীর মধ্যে এখন পর্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাকিরুল আলম জাকির। বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কালাম বিগত ১৮ বছরে ইউনিয়নে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন না করায় এবং প্রকাশ্যে একটিবারও বাজেট ঘোষণা না করায় পরিবর্তনের হাওয়া বইছে পুরো ইউনিয়ন জুড়ে। আবুল কালামের প্রতিদ্বন্দ্বী জাকির নির্বাচনি প্রচারণায় ভোটারদেরকে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। আর কালাম একাই চালাচ্ছেন গণসংযোগ। তাঁর সঙ্গে দলের কিংবা এলাকার বিশিষ্টজনদের দেখা যাচ্ছে না।
বরইকান্দি ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. রইছ আলীর সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বরইকান্দি ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাবীব হোসেনের। হাবিব হোসেন গত পাঁচ বছর উন্নয়ন করলেও এ ইউনিয়নের ভোটাররা স্বচ্ছ ইমেজের প্রশ্ন তোলেছেন। এই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে রেহান আহমদ হারিছ ভোটারদের মন জয়ে তার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তবে শেষ লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মাঝে।
সিলাম ইউনিয়নে উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ইকরাম হোসেন এবং বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেনের মধ্যে লড়াই হবে। এই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান অব্যাহত প্রচারণা চালালেও আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইকরাম হোসেন।
লালাবাজার ইউনিয়নে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তোয়াজিদুল হক তুহিন ও সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি প্রার্থী শফিক আহমদের মাঝে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। দুজনই ভোটারদের মন কাড়তে চষে বেড়াচ্ছেন প্রতিটি ঘর। এই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে পীর ফয়জুল হক ইকবাল আলোচনায় রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত এই ইউনিয়নে ত্রিমুখী লড়াইয়ে সম্ভাবনা রয়েছে।
জালালপুর ইউনিয়নে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শহীদুর রহমান শাহীন ও বিএনপি প্রার্থী জিয়াউর রহমান সাজু আলোচনায় থাকলেও বর্তমান চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা মাওলানা সুলাইমান হোসেন দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান থাকায় নিজস্ব ভোট ব্যাংক তৈরি করেছেন বলে এলাকায় গুঞ্জন চলছে। তবে সময় যত যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জনসমর্থন বাড়ছে বলে ভোটাররা মন্তব্য করেছেন।
মোগলাবাজার ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফখরুল ইসলাম সাইস্তা ও বিএনপি প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সোহেলের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাবেক চেয়ারম্যান চুনু মিয়া ও সাবেক আরেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান টুনু মিয়া ভাগ বসাতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই ইউনিয়নে ব্যক্তি ইমেজর কারণে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাইস্তা ভোটারদের কাছে একজন প্রিয় ব্যক্তি।
দাউদপুরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুল হক ও বিএনপি প্রার্থী এমএইচ খলিলের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম আলমের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা রয়েছে। ভোটাররা বলছেন, এই ইউনিয়নে লড়াই হবে ত্রিমুখী।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহেদ মোস্তফা সবুজ সিলেটকে জানান, আগামী ৭ মে ৭টি ইউনিয়নে নির্বাচন নির্বিঘœ করতে আমরা সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছি। আজ প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে প্রতিদিন ইউনিয়নে আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে কি না তা মনিটরিং করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে কাজ করছে। তিনি বলেন, লালাবাজারে ২ দিন আগে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ চারজন প্রার্থীকে ৫ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নির্বাচন নির্বিঘœ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, এবার ৭ ইউনিয়নে ১ লাখ ২৫ হাজার ৭১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬২ হাজার ৩৩ জন, মহিলা ভোটার ৬৩ হাজার ৩৮ জন। ৭টি ইউনিয়নে ৬৩টি ওয়ার্ড, সংরক্ষিত ২১টি ওয়ার্ড এবং ভোটকেন্দ্র থাকবে ৬৬টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৩৯০টি।