কবে হবে সিসিকের শিশু পার্ক জটিলতায় একযুগ পার

park picনুরুল হক শিপু :: নিজস্ব ভূমি আছে, সেই জমিতে সীমানাপ্রাচীর হয়েছে-আছে সুরম্য প্রধান ফটক। কিন্তু ২০০৪-০৫ অর্থবছরে নির্মাণকাজ শুরু হওয়া সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) একমাত্র শিশুপার্কটি আজও পায়নি পূর্ণতা। নানা জটিলতায় সীমানাপ্রাচীর আর ফটকেই আটকে আছে বহুলকাক্সিক্ষত পার্কটি। দীর্ঘ এক যুগেও এটিতে বসেনি কোনো রাইড। বার বার পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। পার্ক নির্মাণের শুরু দিকে বরাদ্দকৃত ১৭ কোটি ৫১ লাখ টাকার মধ্যে ১২ কোটি টাকা ফিরিয়ে নিয়েছে সংশ্লি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়। অবশ্য ৫ কোটি ৫১ লাখ টাকায়, পার্কের ৩ দশমিক ৭৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে সীমানারপ্রাচীর, কাউন্টার, প্রধান ফটক এবং পার্কের ভেতরের অভ্যন্তরিণ রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।
সিসিক সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ সুরমায় সিলেট মহানগরের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের আলমপুরে সিসিকের নিজস্ব অধিগ্রহণকৃত ৩ দশমিক ৭৭ একর ভূমিতে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে একটি শিশুপার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ২০০৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত পার্কের ভূমির উন্নয়ন, সীমানাপ্রাচীর, ফটক নির্মাণসহ আরও কিছু আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করা হয়। এরপর ৭ বছর থেকে পর্কটি বিভিন্ন জটিলতার কারণে রাইড বসানো হয়নি। প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় এরই মধ্যে সংশ্লি¬ষ্ট মন্ত্রণালয় বরাদ্দকৃত টাকার ১২ কোটি টাকা ফিরিয়ে নেয়। বাকি ৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা পার্কের উন্নয়নেই ব্যয় করা হয়।
সম্প্রতি পার্কে বিভিন্ন রাইড বসাতে উদ্যোগ নিয়েছে সিসিক কর্তৃপক্ষ। সিসিকের উদ্যোগের কারণে ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পার্কটির উন্নয়ন কাজ করাতে তৎকালীন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফকে একটি আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দেন। অর্থমন্ত্রীর ডিও লেটার পাওয়ার পর ২১ এপ্রিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রকল্পের তালিকা দিতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি প্রেরণ করে। সিসিকের প্রেরিত প্রকল্প তালিকা পেয়ে একই বছরের ২৫ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়কে অর্থ বরাদ্দ এবং প্রকল্প অনুমোদনের চিঠি দেয়স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কিন্তু ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও অর্থমন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দের প্রসঙ্গে সিসিক কর্তৃপক্ষকে কিছু জানানো হয়নি।
সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, দক্ষিণ সুরমার আলমপুরে সিসিকের শিশু পার্কটি চালু করে শিশুদের বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সম্প্রতি বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তা বাস্তবায়নে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে কাছে ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। ওই টাকা পেলে বিভিন্ন ধরনের রাইড বসিয়ে পার্ক চালু করা হবে। তিনি বলেন, আমি আসার আগে ‘সিলেট ন্যাচারাল পার্ক’ নামকরণ করার জন্য সিসিকের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল-যা আমি শুনেছি।
এলাকাবাসীরা বলছেন, শুধু রাজনৈতিক কারণেই এতদিন আলোর মুখ দেখেনি পার্কটি। পার্কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের নামে। পরবর্তীকালে পার্কের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠালে ‘সিলেট ন্যাচারাল পার্ক’ হিসেবে পার্কটির নামকরণ করার প্রচেষ্টা চলছে।
সুরমা নদীর দক্ষিণ পার ঘেঁষে অবস্থিত পার্কটিতে গেলেই শোনা যায় বহমান নদীর বয়ে যাওয়া পানির কলকল শব্দ। রয়েছে সারি সারি ফুলগাছ। সবুজ ঘাসের সমারোহ আর নির্মল বাতাস। তবে বর্তমানে পার্কটিতে সাধারণ মানুষ ঢুকতে না পারলেও মাদকাসক্ত ও ছিঁচকে চোরদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে স্থানটি-এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
সিলেট জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা ও জেলা শিশু সংগঠক সাইদুর রহমান ভূঞা বলেন, শিশুদের মনন বিকাশে মুক্ত প্রাঙ্গণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সিলেটে এত খোলা জায়গা থাকতেও শিশুদের জন্য তেমন কোনো বিনোদনকেন্দ্র নেই। দক্ষিণ সুরমায় নির্মিতব্য শিশুপার্কটি ওই এলাকার শিশুদের মানসিক বিকাশে সহায়ক হবে। তাই দ্রুতসময়ে এ পার্কের নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট হতে হবে।
এ ব্যাপারে সিসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, নানা কারণে পার্কটি সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে বিলম্ব হয়েছে। পার্ক এখন প্রস্তুত; শুধু রাইড বসানো প্রয়োজন। আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ দিতে আবেদন জানিয়েছি। খুব শীঘ্রই পার্কের রাইড বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। আর সেজন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে। তবে পার্ক যাতে তাড়াতাড়ি চালু করা যায়, যাতে আর বিলম্ব না হয়, যে দিকে নজর রেখেই আমরা অগ্রসর হচ্ছি।
২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌফিক বক্স লিপন বলেন, দীর্ঘ এক যুগ ধরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও পরিকল্পনার অভাবে আলমপুরে শিশুপার্কটির নির্মাণকাজ ব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে সিসিকের পক্ষ থেকে সংশ্লি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। আশা করি, শীঘ্রই পার্কটির নির্মাণকাজ শেষ হবে।