জয়কে অপহরণের চক্রান্তে ‘মাহমুদুর রহমানও ছিলেন’
ডেস্ক রিপোর্টঃ প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের চক্রান্তে এবার আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানেরও সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। একই চক্রান্তে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে শনিবার গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, মাহমুদুর রহমানকেও এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হবে। এছাড়া মিল্টন ভুঁইয়া নামে আরও এক আমেরিকা প্রবাসী বিএনপি নেতার নাম পেয়েছে পুলিশ। যিনি পুরো ষড়যন্ত্রের মধ্যস্থতা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে এ নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা একাধিকবার বৈঠক করেছেন। নিজেদের মধ্যে তারা মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করতেন। এমন কিছু মেইলও হাতে পেয়েছে পুলিশ। এসব তথ্য এখন যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কয়েকটি সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে জয় সম্পর্কে তথ্য ও অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত দলিল সংগ্রহের জন্য ঘুষ লেনদেনের ঘটনায় এফবিআইয়ের সাবেক স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাস্টিক, তার বন্ধু জোহান্স থ্যালার এবং থ্যালারের পরিচিত রিজভী আহমেদ সিজারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাস- এর সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ সিজার। পরে রিজভী আহমেদ এবং থ্যালের যথাক্রমে ৪২ মাস ও ৩০ মাসের সাজা হয়েছে। তাদের আরও দুই বছর নজদারিতে রাখারও নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। লাস্টিক অন্য ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে আছেন। এ সংক্রান্ত জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের প্রেস রিলিজে প্রকাশিত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গোপন তথ্য সংগ্রহের বিনিময়ে রিজভী আহমেদ সিজারের কাছ থেকে লাস্টিক ও থ্যালার কমপক্ষে ১০০০ ইউএস ডলার গ্রহণ করেন।
ডিবি সূত্রটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে এই ঘটনার পর বাংলাদেশের পুলিশ এফবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। দেশে তদন্ত শুরু করে। তদন্তে ষড়যন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় পুলিশ। সেই তথ্য যাচাই বাছাই করে শফিক রেহমানের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। তারপর তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ডিবি কর্মকর্তারা জানান, ২০১১ সালে সিজার তার বাবার রাজনৈতিক মতাদর্শে উজ্জীবিত হয়ে জয়কে অপহরণ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। এই সময় তার প্রথম পরিচয় হয় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক থ্যালারের সঙ্গে। থ্যালারের মাধ্যমে সিজার একজন এফবিআইয়ের এজেন্ট নিয়োগ করার অনুরোধ করেন। সিজার তাকে বলেন, ওই এজেন্টকে তিনি ৪০ হাজার ডলার ঘুষ দিতে রাজি। তখন এফবিআই এজেন্ট রবার্ট লাস্টিককে নিযুক্ত করেন। প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিএনপি নেতা মিল্টন ভূইয়া তথ্যের জন্য তাদের দুই হাজার ডলার ঘুষ পরিশোধ করেন।
সূত্রটি আরও জানায়, সিজার বিএনপি মতাদর্শে বিশ্বাস করেন। একাধিকবার তিনি বিএনপির বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাজ্য গিয়েছিলেন।
শফিক রেহমান এদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন বলে প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দারা তথ্য পাচ্ছেন। শফিক রেহমানকে আংকেল বলে ডাকতেন সিজার। ২০১২ সালে শফিক রেহমান নিউ ইয়র্কে যান। সেখানে সিজার, শফিক রেহমান, লাস্টিক ও থ্যালার ডারবান নামে একটি শপিং মলে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে শফিক রেহমানকে পারিবারিক বন্ধু বলে সিজার তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। বৈঠকে শফিক রেহমানের কাছে জয়ের ব্যাপারে লাস্টিকের সংগ্রহ করা বিভিন্ন তথ্য উপত্ত দেন। ভবিষ্যতে আরও তথ্য উপত্ত দেবেন বলে লাস্টিক তাদের আশ্বস্ত করেন। এফবিআই এজেন্ট ৪০ হাজার ইউএস ডলারের বাকি যে ডলার পাবেন তাও দ্রুত শফিক রেহমান মিল্টন ও সিজারকে দিতে বলেন। সেখানে তারা পরস্পর সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যাপারে আরও তথ্য সংগ্রহ করবেন বলেও জানান।
ডিবি সূত্রটি আরও জানায়, মেইলে সিজার সবকিছু মিল্টনকে জানাতেন। মিল্টনের মাধ্যমে মাহমুদুর রহমানও তথ্য প্রমাণ পেতেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে এসব তথ্য প্রমাণ সামনে নিয়ে ডিবি শফিক রেহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
এ বিষয়ে ডিবি দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ‘আদালতের আদেশ ও আইনানুসারে রিমান্ডে নিয়ে শফিক রেহমানকে প্রথম দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে বিস্তারিত বলা যাবে না।’
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শফিক রেহমান আমেরিকায় যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তাকে প্রতিটি ঘটনা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার শারীরিক অবস্থা ভালো রয়েছে।
এর আগে শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণের পর হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সহকারী কমিশনার (এসি) হাসান আরাফাত সাতদিনের রিমান্ড চান। আদালত তার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।