ভূমিকম্পে ফাটলের পর ঝড়ে দোলে উঠলো হোস্টেল : ক্লাসরুমেই আবাসন ৩৭৫ ছাত্রীর
ডেস্ক রিপোর্টঃ গত বুধবারের ভূমিকম্পে ফাটল ধরেছিলো সিলেট নার্সিং কলেজের ছাত্রীনিবাসে। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ টিম আনিয়ে হোস্টেলটি পরীক্ষা করায়। বিশেষজ্ঞরা এখন পর্যন্ত ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ কী না তা জানাননি।
এ অবস্থায় শনিবার ভোরের ঝড়ে কেঁপে ওঠে পুরো ছাত্রী হোস্টেল। এতে ছাত্রীদের মধ্যে দেখা দেয় আতঙ্ক। ভয়ে চিৎকার শুরু করে ছাত্রীরা।
এরফলে শনিবার সকালে ছাত্রীনিবাসে থাকা ৩৭৫ শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার মৌখিক নির্দেশ দেন কলেজ অধ্যক্ষ শিল্পী চক্রবর্তী।
এদিকে পরীক্ষা চলায় বাড়িও যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে ক্লাসরুমেই ঠাঁই হয়েছে হোস্টেলের ৩৭৫ শিক্ষার্থীর। সেখানেই আবাসন গেড়েছে তারা।
শনিবার সকালে গিয়ে দেখা যায় হোস্টেল থেকে মালপত্র নিয়ে ক্লাসরুমে জড়ো করছেন ছাত্রীরা। বিছানাপত্রও পেতেছেন ক্লাসরুমে। এদের সবার চোখেমুখেই ভয়ের ছাপ।
জানা যায়, বুধবারের ভূমিকম্পে সিলেট নার্সিং কলেজের ছাত্রীনিবাসে শতাধিক ফাটল দেখা দেয়। এতে ওই ছাত্রীনিবাসটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। তবু বাধ্য হয়ে ওই হোস্টেলে ৩৭৫ জন ছাত্রী থাকছিলেন। শনিবার ভোরে ঝড় শুরু হলে কাঁপতে থাকে এই হোস্টেল। এসময় আতঙ্ক হল ছাড়তে শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
১৯৮২ সালে সিলেট নার্সিং ট্রেনিং সেন্টার নামে ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। ৪ তলা বিশিষ্ট ওই প্রতিষ্ঠানের নিচতলায় চলত একাডেমিক কার্যক্রম। আর বাকি তলাগুলোতে ৫০ জন করে ১৫০ ছাত্রীর আবাসনের ব্যবস্থা ছিল। তবে শুরু থেকেই নির্ধারিত আসনের চেয়ে বেশি ছাত্রী আছেন সেখানে।
২০১১ সালে ওই ট্রেনিং সেন্টারটি সিলেট নার্সিং কলেজে রূপান্তরিত হয়। করা হয় নতুন ভবনও। একপর্যায়ে পুরো চার তলা ভবনটিতে ছাত্রীদের আবসনের ব্যবস্থা করা হয়। ১৫০ থেকে আসনের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২৫০ আসনে। কিন্তু ওই হোস্টেলে বর্তমানে ৩৭৫ জন ছাত্রী থাকছেন।
হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা জানান, বুধবার রাতের ভূমিকম্পে একটি ছাত্রীনিবাসে শতাধিক স্থানে ফাটল দেখা দেয়। এ সময় তাড়াহুড়ো করে হোস্টেল থেকে বের হতে গিয়ে শিলা, ববি দাস, শিল্পী নামের তিন ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে যান। পরে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
ফাটল দেখা দেয়ায় রাতেই সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পরিচালকসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হোস্টেল পরিদর্শনে যান। ওই সময় তারা ওই ফাটলে তেমন কোনো সমস্যা হবে জানিয়ে ছাত্রীদের হোস্টেলে থাকার পরামর্শ দেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চার তলা বিশিষ্ট হোস্টেলের প্রায় শতাধিক স্থানে ফাটল ধরেছে। এ ছাড়াও নিচতলার বারান্দা অনেকখানি ‘দেবে’ গেছে। ছাত্রীদের রুমে বই-খাতা, কাপড়ের ব্যাগগুলো গুটানো রয়েছে।
নিচতলার দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি রুমের দেয়ালে বড় ধরনের ফাটল রয়েছে। এটা গত বুধবারের ভূমিকম্পে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই রুমের ছাত্রীরা।
স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভানেত্রী হাসনা আলম অমি বলেছেন, ‘অনেকের পরীক্ষা থাকায় ফাটল ধরার পরও বাধ্য হয়ে হোস্টেলে থাকতে হয়ছিলো। শনিবার কেঁপে ওঠার পর ছাত্রীরা ভয় পেয়ে গেছে। এখন আর এখানে থাকা সম্ভব নয়।’
হোস্টেলের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক কল্পনা দেবী ও সানজিদা ইয়াসমিন জানান, ভবনটি পুরোনো হওয়াতে ভূমিকম্পে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাত্রীদের মৌখিকভাবে হল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ক্লাসরুমে রাখা হয়েছে।
সিলেট নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ শিল্পী চক্রবর্তী বলেন, ‘চারতলা ছাত্রীনিবাসটি এখনো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি। বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করানোর পর পরিত্যক্ত করা হবে কি না সে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে ভবনে বেশ কিছু ফাটলের সৃষ্টি হওয়ায় ছাত্রীদের অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ ছবি : আনিস মাহমুদ, প্রথম আলো