সিসিকের ৩ কোটি টাকার বর্জ্য স্টেশন প্রকল্প – চারটি স্টেশন নির্মাণ শেষ হয়নি ২৮ মাসেও
ডেস্ক রিপোর্ট :: সড়কটি যেন ছিল এক মিনিটের মৃত্যু। কেননা, ওই সড়কে এই এক মিনিট পথচারী নাক চেপে যাওয়া-আসা করতেন। সড়কের পাশে বর্জ্য-ময়লার স্তূপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকত। তীব্র দুর্গন্ধ বাতাসে মিশত। পাশেই একটি স্কুল। রোজ শিক্ষার্থীরা এই দুর্ভোগেই স্কুলে যেত। এখন পুরো সড়ক নয়; শুধু মোড় অতিক্রমকালে পথচারীদের নাক চেপে রাখতে হয়।
নাক চেপে পথ চলার অবসান করতেই নির্মাণ করা হচ্ছে বর্জ্য স্টেশন। কিন্তু বর্জ্য স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের কাজে দেখা দিয়েছে কচ্ছপগতি। এতে পথচারীদের দুর্ভোগ শেষ হয়েও হলো না শেষ। এখনো এই স্টেশন ঘিরে ৫৭টি রিকশাভ্যানের ময়লা বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। একই অবস্থা প্রকল্পের আওতাধীন নগরীর বাকি তিনটি স্টেশনেও।
সরেজমিনে দেখা গেল, রিকাবিবাজার-পুলিশ লাইন সড়কের ড্রেনের পাশে যেখানে ময়লা ছড়ানো থাকত, সেখানেই গড়ে তোলা হচ্ছে টিনশেডের একটি পাকা ঘর। পাকা ঘর নির্মাণ শেষ। টিনও লাগানো হয়েছে। এখন দেয়ালে পলেস্তারা লাগানো হচ্ছে। তার ওপর বসানো হচ্ছে টাইলস। টিনশেডের এই স্টেশনটি বাইরে ফিটফাট থাকলেও ভেতরে এখনো কিছুই প্রবেশ করেনি। স্টেশনে ময়লা পরিশোধন করার জন্য একটি বড় মেশিন বসানোর কথা, তা বসানো হয়নি। ট্রাক ঢোকার জন্য বানানো হয়নি সংযোগ রাস্তা।
পুলিশ লাইন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে শিক্ষার্থীরা মারাত্মক দুর্ভোগে ছিল। প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি, ময়লার গন্ধ থাকবে না। তবে, দ্রুত কাজ শেষ করা উচিত। এতে পথচারীরা ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবেন।
পুলিশ লাইনের নির্মাণাধীন পরিশোধন স্টেশনের ইনচার্জ হামিদুল জানান, এখানে প্রতিদিন ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকাসহ রিকাবিবাজার, মধুশহীদ, মিরের ময়দান, লামাবাজার, মেডিকেল, চৌহাট্টা ও দরগা এলাকা থেকে ৫৭টি রিকশাভ্যানে বর্জ্য আসে। ভেতরে স্টেশনে এখনো মেশিন বসানো হয়নি। তাই রাস্তার ওপর ময়লা ফেলা হয়। দুটি ট্রাক এখান থেকে ময়লা অপসারণ করে দক্ষিণ সুরমার পারাইরচকে ভাগাড়ে নিয়ে যায়।
সিসিক সূত্র জানায়, আরাবান প্রকল্পের আওতায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৭টি বিভাগীয় শহরে ময়লা পরিশোধন স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। ২০১৪ সালের জানুয়ারি সিলেটে এই প্রকল্পের আওতায় চারটি স্টেশন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে নগরীর পুলিশ লাইন, টিলাগড়, শাহী ঈদগাহ ও দরিয়ার শাহ মাজার সড়কে একযোগে স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। একেকটি স্টেশন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ লাখ টাকা। আগামি জুন মাস পর্যন্ত কাজের মেয়াদ আছে।
সরেজমিনে চারটি পরিশোধন স্টেশন এলাকা ঘুরে জানা গেল, দক্ষিণ সুরমার কদমতলীর দরিয়ার শাহর মাজারের পাশে নির্মাণাধীন বর্জ্য স্টেশনের টিনশেডের অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাকি কাজের কোনো খবর নেই। নসিবা খাতুন স্কুলের সামনে ময়লার স্তূপ পড়ে থাকত। সেখানে স্টেশন না দিয়ে একটি সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করেই দায়সারা দায়িত্ব শেষ করেছে সিসিক।
জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, রিকাবিবাজার মোড়ে বর্জ্য স্টেশনের ভেতরের মেশিন এখনো ঢাকা থেকে আসেনি। ঢাকা থেকে এই প্রকল্পের কাজ পরিচালনা হচ্ছে। তাই কাজে একটু ধীরগতি। মেশিন আসলে স্টেশনে পৌঁছে যাবে।