দশদিন বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন, ফেসবুকও বন্ধ রেখেছিলেন সামাদ
ডেস্ক রিপোর্টঃ উগ্রবাদীদের হুমকীর কারণে ১০ দিন সিলেটের বিয়ানীবাজারের নিজ বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন নাজামুদ্দিন সামাদ এমনকি দিন পনের নিজের ফেসবুক একাউন্টও বন্ধ (ডিএক্টিভ) রেখেছিলেন। সামাদের বন্ধুদের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে পরিস্থিতি কিছুটা ‘স্বাভাবিক’ হয়ে আসলে আবার ঢাকায় ফিরে যান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র। ফের সচল করেন ফেসবুক একাউন্টও। ফেসবুকে পুণরায় ধর্মান্ধতা ও মৌলবাদবিরোধী লেখালেখি করতেও দেখা যায়।
গত বুধবার ( ৬ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকায় অজ্ঞাত দুবৃত্তদের চাপাতি ও গুলির আঘাতে নিহত হন নিজামুদ্দিন সামাদ। তাকে হত্যা করার সময় খুনিরা “আল্লাহু আকবর” বলে স্লোগান দেয় বলে এলাকাবাসি জানিয়েছিলেন।
নাজিমউদ্দিন সামাদের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপারা ইউনিয়নের মাটিজুরা গ্রামে। বিয়ানীবাজারের প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী ও সেখানকার গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক হাসান শাহরিয়ার সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সামাদকে তাকে বিভিন্ন সময় হুমকী দেওয়া হয়েছিলো বলে শুনেছি। গত ৩০ অক্টোবর একইদিনে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দিপনকে হত্যা ও আরেক প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুকে হত্যাচেষ্টার পর কিছুটা ভয় পেয়ে যান। এর কিছুদিন পরই তিনি বিয়ানীবাজারে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। সেখানেই কিছুদিন অনেকটা আত্মগোপন করে ছিলেন।
তবে ১০ দিনের মতো বিয়ানীবাজারে অবস্থান করার পর সামাদ আবার ঢাকায় ফিরে যান বলে জানান শাহরিয়ার।
সিলেটের সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা করেন সামাদ। এই স্কুলে তাঁর সহপাঠী ছিলেন সিলেট জেলা সিপিবি নেতা গোলাম রাব্বি চৌধুরী। দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্বও গড়ে উঠেছিলো।
গোলাম রাব্বি চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, সামাদ আমার ছোটবেলার বন্ধু। সে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সবসময়ই সোচ্ছার এবং বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলো।
রাব্বি বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে সামাদের সাথে আমার শেষ দেখা হয়। এসময় সে তার ফেসবুক একাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছিলো। সিলেট শহীদ মিনারে আমাকে বলেছিলো- ‘কিছুটা চাপে আছি, তাই একাউন্ট ডিএক্টিভ করে রেখেছি।’
তবে ১৪/১৫ দিন পর সামাদ পুণরায় ফেসবুকে সক্রিয় হয়ে ওঠেন বলে জানান রাব্বি চৌধুরী।
তিন ভাই ইউরোপে থাকেন। তিনি দেশে হুমকীতে আছেন। তবু কেনো সামাদ দেশের বাইরে চলে গেলেন না এমন প্রশ্নের জবাবে বিয়ানীবাজারের গ্রামের বাড়িতে অবস্থানরত সামাদের চাচাতো ভাই বলেন, সে পড়ালেখা করতে চেয়েছে। কিছুতেই পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটুক তা চাইতো না। পরিবারের সব পুরুষ সদস্যরা দেশের বাইরে থাকায় দেশে থাকা বৃদ্ধ মাকেও সে দেখাশোনা করতো। তাছাড়া লেখালেখি বা হুমকীর বিষয়ে আমাদের কোনোদিনই কিছু বলেনি।
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বিয়ানীবাজারে আসেনি সামাদের মরদেহ। বৃহস্পতিবার রাতে সামাদের এই ভাই ফ্রান্স থেকে ঢাকা এসে পৌচেছেন। শুক্রবার তিনি মরদেহ তিনি বিয়ানীবাজার পৌছতে পারেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার বিয়ানীবাজারে নাজিমুদ্দিনের সামাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোক স্থব্ধ পরিবেশ। সামাদকে কেউ হত্যা করতে পারে এলাকার লোকজনও তা বিশ্বাস করছেন না। গ্রামের সবার সাথেই সুসম্পর্ক ছিল তাঁর। সিলেট স্কলারসহোম ও লিডিং বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নাজুমুদ্দিন সামাদের জন্য গ্রামের লোকদের গর্বও ছিল।
৫ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে নাজিম চতুর্থ। বড় ভাই জুলহাস উদ্দিন ও বাবা আব্দুস সামাদ আগেই মারা গেছে। তাঁর বড় ভাই শামীম উদ্দিন ও ছোট ভাই জসিম উদ্দিন থাকেন লন্ডনে। আর মেঝভাই সুনাম উদ্দিন থাকেন ফ্রান্সে।
বড় বোন পারুল বেগম বিবাহিত। ছোট বোন ও মা তইরুন্নেছাকে নিয়েই দেশে পরিবার ছিল সামাদের।