‘১০ দিনের মধ্যে’ কমছে তেলের দাম
ডেস্ক রিপোর্ট :: নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে অকটেন, কেরোসিন, পেট্রোল ও ডিজেল দাম কমিয়ে পরিপত্র জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
বুধবার সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “তেলের দাম ধীরে ধীরে আমরা সাশ্রয়ীভাবে দেখতে যাচ্ছি। তেলের মূল্যটাকে আমরা একটা যৌক্তিক রেটে নিয়ে যেতে চাচ্ছি।”
প্রথমে ‘সাত দিনের মধ্যে’ পরিপত্র দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে উল্লেখ করলেও পরে ‘সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে’ তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সেখানে (পরিপত্রে) অকটেন, কেরোসিন, পেট্রোল ও ডিজেল থাকবে। আমরা ইতোমধ্যে ফার্নেস অয়েলের দাম কমিয়েছি। এতে বেশ কিছু জায়গায় সাশ্রয় হচ্ছে। সে বিষয়গুলো সরাসরি আমাদের জনগণের পর্যায়ে পৌঁছছে।”
দাম কতোটা কমছে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমি আগেও বলেছি, ১০ টাকা থেকে কিছুটা কম বেশি থাকবে। এর মধ্যে আনার চেষ্টা করছি। দুই থেকে তিন ধাপে তেলটাকে আমরা সমন্বয় করব। সব তেলের ক্ষেত্রে নয়। ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সমন্বয় হবে। প্রথমটা হয়তো ১০ দিনের মধ্যে, তার থেকে ৬-৭ মাস পর আরেকটি ধাপ। তার ৬-৭ মাস পর আরেকটি ধাপ।
“প্রথম ধাপে কিছুটা বর্ধিত মূল্য কমাব। অন্য সেক্টরেও আমরা আবেদন করতে যাচ্ছি। গ্যাস ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও একটা চলমান প্রক্রিয়া আমরা রাখতে চাই। যেখানে দামের একটা সমন্বয়ের আরও প্রয়োজন আছে।”
নসরুল হামিদ তেলের সঙ্গে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের কথা বলেন এবং ভেজাল পেট্রোল বিক্রি বন্ধে পাম্পে পাম্পে অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন।
“কেউ যদি ভেজাল করে তাদের তাৎক্ষণিকভাবে লাইসেন্স বাতিল করা হবে। আগামীকাল থেকে তা শুরু হবে। আমাদের কাছে রিপোর্ট চলে আসছে। ১২ শ’ পেট্রোল পাম্পের মধ্যে কোন কোন পাম্প ভেজাল করছে, আমরা ধীরে ধীরে তাদের লাইসেন্স বাতিলের দিকে যাব। এখন আর জরিমানা না, সরাসরি লাইসেন্স বাতিলের দিকে যাব।”
সর্বশেষ ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয়ের সময় বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সেই হারে বর্তমানে প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রোল ৯৬ টাকা, কেরোসিন ও ডিজেল ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তখন প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলের দাম ৬০ টাকা স্থির হয়েছিল, যা গত ৩১ মার্চ কমিয়ে ৪২ টাকা করা হয়েছে।
বাংলাদেশে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও যানবাহন বৃদ্ধির কারণে গত কয়েক বছর ধরে ৫০ লাখ মেট্রিক টনের বেশি জ্বালানি তেলের চাহিদা তৈরি হয়েছে; যার মধ্যে প্রায় সবই আমদানি করতে হয়। বিশ্ব বাজারে গত দেড় বছর ধরে তেলের দরপতন চলার কারণে দেশের বাজারে সব ধরনের জ্বালানির দাম কমানোর দাবি ওঠে।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পক্ষে মত দেন। তবে ভর্তুকির লোকসান থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে তুলতে দাম অপরিবর্তিত রাখে সরকার।
সরকার সে অবস্থান থেকে সরে এসে ফার্নেস অয়েলের দাম কমানোর পর গত ৪ এপ্রিল জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ডিজেল-পেট্রোলের দামও কমানোর ইংগিত দেন।
‘পেট্রোল অকটেন আমদানি নয়, উৎপাদন’
নসরুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ এখন এমন পর্যায়ে এসেছে, যেখানে পেট্রোল আমদানি করতে হয় না। সরকার অকটেনও আর আমদানি করতে চায় না।
“আমাদের পেট্রোল ও অকটেন আমরা নিজেদের দেশেই উদপাদন (পরিশোধন) করব এবং সেটিই আমরা মার্কেট করব। এতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিকভাবে বিশাল সাশ্রয় হবে।”
‘আবাসিকে গ্যাস নয়, ব্যক্তিগত সিএনজি নয়’
নসরুল হামিদ বলেন, সরকার ‘যত্রতত্র’ গ্যাস ব্যবহার বন্ধ করতে চাইছে। ইতোমধ্যে গ্যাস ব্যবহারের বিষয়ে একটি ‘মহাপরিকল্পনা’ তৈরি করা হয়েছে। সরকার এখন সেদিকেই অগ্রসর হচ্ছে।
“আমারা মূলত আবাসিক খাত থেকে গ্যাস সরিয়ে এলপিজিতে যাওয়ার ওপর জোর দিচ্ছি।… সিএনজি থেকে আমরা আস্তে আস্তে সরে আসতে পারি কি-না, তবে গণপরিবহনে হয়তো সিএনজি কিছুটা থাকবে। আর গ্যাসের একটা মূল্য সমন্বয় আমরা চাচ্ছি।”
বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়েরও পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বিদ্যুতে ট্রান্সমিশনে এবং ডিস্টিবিউশনে আমাদের প্রচুর বিনিয়োগ হচ্ছে। সেইখানে বিতরণে এখনো আমরা লস দিয়ে যাচ্ছি। এই জায়গায় দাম সমন্বয় করতে হবে।