সড়ক বিভাগের টেন্ডার জালিয়াতির তদন্তে দুদক

dudokসুরমা টাইমস ডেস্কঃ সড়ক বিভাগ-কুমিল্লা জোনের আলোচিত সেই টেন্ডার জালিয়াতির তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)। ওই টেন্ডারে সর্বনিম্ন দরদাতা এম এ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মামুন মোল্লার অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক এই তদন্ত শুরু করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতা বিবেচিত হওয়ার পরেও এম এ ইঞ্জিনিয়ারিংকে (সড়ক বিভাগ কুমিল্লা জোনের টেন্ডার আইডি নং-১১০০৬) এর কার্যাদেশ না দিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে ঘুষের বিনিময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে কার্যাদেশ দেয় সড়ক বিভাগের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী।
প্রায় নব্বই লাখ টাকা অস্বাভাবিক বেশি দরে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে দেওয়া এই কার্যাদেশে ঘুষ লেনদেন হয়েছে লাখ লাখ টাকা।
সড়ক বিভাগের এই টেন্ডার দুর্নীতি-জালিয়াতি নিয়ে গত বছরের ৩ নভেম্বর খবর প্রকাশ করে সাপ্তাহিক শীর্ষ কাগজ।
‘সড়ক মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের দুর্নীতির এক জাজ্বল্য চিত্র’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই খবরে বলা হয়-
সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বর্তমানে যা সড়ক পরিবহন, মহাসড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় নামে পরিচিত- এ মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতির মুখরোচক অনেক কাহিনী শোনা যায়। এসব কাহিনী অনেক ক্ষেত্রে রূপকথাকেও হার মানায়। বাজেট বা বরাদ্দ যেমন বড়, দুর্নীতিও তেমনি বড় এ মন্ত্রণালয়ে। এইতো এ মন্ত্রণালয়ের অধীনই পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগ- যা শুধু রাষ্ট্র নয়, গোটা বিশ্বে আলোচিত একটি ঘটনা। মহাজোট সরকারের মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রীত্ব হারাতে হয়েছিলো যে ঘটনায়। এর আগে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বহুল আলোচিত হয়ে উঠেছিলেন বেপরোয়া দুর্নীতির কারণে। মাঝে দুর্নীতিবিরোধী ওয়ান-ইলেভেন সরকারের আমলে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যিনি ছিলেন সেই জেনারেল (অব.) আবদুল মতিনও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগের কারণেই তৎকালীন সরকার তাকে এ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলো।
বিশ্বব্যাপী আলোচিত পদ্মাসেতু দুর্নীতির মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত সপ্তায় সৈয়দ আবুল হোসেনসহ অভিযুক্ত সবাইকে দায়মুক্তি দিয়েছে। এর কারণ হিসেবে দুদক বলেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনোরকমের তথ্য-প্রমাণ দুদক পায়নি। অভিযুক্তরা দুদকের এই দায়মুক্তির সার্টিফিকেটের সঙ্গে সঙ্গে আপাতত হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন।
তবে এ প্রতিবেদনের আলোচনার বিষয় পদ্মা সেতু নয়। শীর্ষ কাগজের এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে যোগাযোগ বা সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অন্য একটি প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে। আলোচ্য এ প্রকল্পটি পদ্মা সেতুর মতো বড় নয়, বলা যায় সেই তুলনায় অনেক ছোট প্রকল্প এটি। কিন্তু, অর্থের অংকের দিক থেকে ছোট হলেও দুর্নীতি এবং জালিয়াতির বিচারে দেখা যাচ্ছে এর গুরুত্ব অনেক। কারণ, এটি সড়ক মন্ত্রণালয়ের নাড়ি ধরে টান দিতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় ও সড়ক অধিদফতরের সকল অপকর্ম ও দুর্নীতি যে একটি বিশেষ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে এবং এ সিন্ডিকেট যে কতটা শক্তিশালী ও বেপরোয়া তার জাজ্বল্য প্রমাণ পাওয়া যায় কুমিল্লা জোনের অধীন এই প্রকল্পের টেন্ডার দুর্নীতির ধারাবাহিক ঘটনা থেকে। সড়ক অধিদফতরের কুমিল্লা জোনের অধীন প্রকল্পটির ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির এই চিত্র শীর্ষ কাগজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। ঘটনা জানাজানি হয়ে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে এখন কানাঘুষা চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
শুধু শীর্ষ কাগজের অনুসন্ধানই নয়, সরকারের কেনাকাটা ও টেন্ডার সংক্রান্ত সবচে’ নির্ভরযোগ্য এবং বিচারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সর্বোচ্চ সংস্থা হিসেবে পরিচিত সিপিটিইউ (সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট) এর বিচারেও প্রমাণিত হয়েছে এ দুর্নীতির ঘটনা। অবাক ব্যাপার হলো, তারপরও থেমে নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের দুর্নীতিবাজচক্র। দেখা যাচ্ছে যে, তারা সরকারের কোনোরকমের নিয়ম-নীতিরই তোয়াক্কা করছে না। সরকারের স্বার্থ জলাঞ্জলি ও অর্থ লুটপাটে সিদ্ধহস্ত এ চক্রটি সিপিটিইউ’র রায় বাস্তবায়ন না করে উল্টো রায় যার পক্ষে ভুক্তভোগী সেই প্রতিষ্ঠানের মালিককে নানা রকমের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। শুধু তাই নয়, অন্য যে প্রতিষ্ঠানকে জালিয়াতির মাধ্যমে অতিরিক্ত মূল্যে কাজ দেওয়া হয়েছে বলে সিপিটিইউ’র বিচারে প্রমাণিত হয়েছে, রায়ের তোয়াক্কা না করে সেই প্রতিষ্ঠানকে বিলও পরিশোধ করছে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর।
বড় ঘাপলায় মন্ত্রণালয় যেভাবে জড়িত
কুমিল্লা জোনের একটি প্যাকেজের টেন্ডার দুর্নীতির ঘটনা নিয়ে সিপিটিইউ-তে আপিল হয়। সিপিটিইউ’র রায়ে সেই দুর্নীতি প্রমাণিতও হয়। কিন্তু, সেই দুর্নীতির খোঁজ জানতে গিয়ে শীর্ষ কাগজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে আরো বড় দুর্নীতির তথ্য- কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে অজগর বের হয়ে যাওয়ার মতো। দেখা যাচ্ছে, কুমিল্লা জোনে ইতিপূর্বে ১৮/১২/১৩ ইং তারিখে এক দফায় এই প্যাকেজটিসহ মোট ৬টি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিলো। সেই সময় ওই ৫টি প্যাকেজের মধ্যে মাত্র একটি প্যাকেজের ই-জিপি টেন্ডার হয়। বাকি ৫টি প্যাকেজের ম্যানুয়ালী অর্থাৎ সনাতন পদ্ধতিতে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। ই-জিপি টেন্ডারের ক্ষেত্রে প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে সর্বনিম্ন ২৩.৪০% কমে দরপত্র জমা পড়ে। অন্যদিকে ম্যানুয়াল পদ্ধতির টেন্ডারগুলোয় সর্বনিম্ন দর পড়ে যথাক্রমে প্রাক্কলিত মূল্যের ৯.৭৩%, ৯.৯৪%, ৯.৮৯%, ৮.৪০% এবং ৯.৯৪% ঊর্ধ্বে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, ই-জিপি টেন্ডারের তুলনায় ম্যানুয়াল পদ্ধতির প্রত্যেকটি টেন্ডারেই দর পড়েছে শতকরা প্রায় ৩৩% (২৩.৪০%+৯.৭৩%) বেশি মূল্যে। মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত ফাইলেই এসব তথ্য উল্লেখ আছে।
ফাইলে এই মর্মে উল্লেখও করা হয়েছে যে, “তাই স্বাভাবিকভাবে ধরে নেওয়া যায় যে, e-GP বহির্ভূত দরপত্রগুলো negotiation করে করা হয়েছে এবং এতে সরকারের নিয়ম ও স্বার্থ রক্ষিত হয়নি।”
মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত ফাইলের মন্তব্য অনুযায়ীই এটা পরিষ্কার যে, বাস্তবে এটি কোনো টেন্ডারই হয়নি। টেন্ডারের নামে ঠিকাদার এবং প্রকৌশলীর negotiation অর্থাৎ গোপন লেনদেনের মাধ্যমে টেন্ডারের মূল্য নির্ধারিত হয়েছে। সোজা কথায়, এটি সরকারি অর্থ ভাগ-বাটোয়ারার একটি প্রক্রিয়া ছাড়া অন্য কিছু নয়।
অবাক ব্যাপার হলো, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারটি কাগজে-কলমে তুলে ধরলেও সেটি সরকারি স্বার্থ রক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়নি। ব্যবহার করা হয়েছে শুধুমাত্র নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের কাজে। সরকারের নিয়ম ও স্বার্থ রক্ষা না করার অপরাধে মন্ত্রণালয় ওই সময় মাত্র একটি প্যাকেজের টেন্ডার বাতিল করলেও একই ঘটনার অন্য ৪টি প্যাকেজের টেন্ডার অনুমোদন করে দিয়েছে। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, ৪টি প্যাকেজের ঠিকাদাররা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছেন এবং কয়েক কোটি টাকা এতে লেনদেন হয়েছে। যে প্যাকেজের ঠিকাদার মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেননি শুধু তার টেন্ডারটি বাতিলের প্রক্রিয়ায় গেছে।
জানা গেছে, ওই সময় টেন্ডারগুলোর সিএস অর্থাৎ চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সড়ক বিভাগ থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের এ উইং থেকে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের (ম্যানুয়াল দরপত্রগুলোর) যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়। আলোচ্য এই প্যাকেজের ঠিকাদার বা তার কোনো প্রতিনিধি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ অর্থাৎ লেনদেন করেননি, তাই এ প্যাকেজের টেন্ডার বাতিল করে ই-জিপি পদ্ধতিতে পুনরায় টেন্ডার আহ্বানের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়। পুনরায় ই-জিপি পদ্ধতিতে টেন্ডার আহ্বান করা হলে প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে প্রায় ১৩.৭৯% কমে টেন্ডার জমা পড়ে। এতেই প্রমাণিত হয় যে, কার্যাদেশ দেওয়া ম্যানুয়াল পদ্ধতির ওই চারটি টেন্ডারে কত বড় ঘাপলা এবং লেনদেন হয়েছে।
পদে পদে দুর্নীতি
ম্যানুয়াল পদ্ধতির ওই প্যাকেজটির, পরে যেটির ই-জিপি পদ্ধতিতে টেন্ডার আহ্বান করা হয় এর আইডি নং ৮০৭১/ এসআইআর/ আরএইচডি/ কুমিল্লা জোন, কুমিল্লা/ ২০১৩-২০১৪। এর দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিলো চলতি বছরের ২৯ মে। মোট ৭টি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার জমা দেয়। এরমধ্যে মেসার্স এমএ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দর ছিলো ৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এটি সর্বনিম্ন দরদাতা বিবেচিত হয়।
টেন্ডারের মূল শর্ত ছিলো ৪ কোটি টাকার কাজ সফলভাবে করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। একই জোনে ৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকার কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিলও পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সন্তুষ্ট হয়ে এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরো ৬০ লাখ টাকার ভেরিয়েশন কাজ দেওয়া হয় একই প্রকল্পে। ২০১৪ সালের ৩১ জানুয়ারি এই ভেরিয়েশনের কাজও সম্পন্ন হয়।
টেন্ডারের সকল শর্ত পূরণ করার পরও অবৈধভাবে ৩য় সর্বনিম্ন দরদাতা ইউনুস এন্ড ব্রাদার্সকে ৬০ লাখ টাকা বেশি অর্থাৎ ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় এই প্যাকেজটির কার্যাদেশ দেওয়া হয় জালিয়াতির মাধ্যমে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, টেন্ডার খোলার পর সর্বনিম্ন দরদাতা বিবেচিত হওয়ার পর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জুনাইদ আহসানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এমএ ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রতিনিধিকে বলেন, আপনারাই কাজ পেয়েছেন। এমএ ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রতিনিধিকে তিনি কুমিল্লায় গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে বলেন। ঠিকাদার কুমিল্লায় না গিয়ে বলেন, আপনার ঢাকার বাসায় দেখা করবো। শনিবার ঢাকায় দেখা করার কথা ছিলো। সেই হিসেবে ওই শনিবার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জুনাইদ আহসানকে ঠিকাদার ফোন করেন। কিন্তু, জুনাইদ আহসান তার ফোন ধরেননি।
জানা গেছে, এ সময় ঠিকাদার ম্যাসেজ পাঠান। তাতেও কাজ হয়নি। এরপর ঠিকাদার কুমিল্লায় গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আতিকুল হকের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। আতিকুল হক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। পাশের কক্ষেই বসেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জুনাইদ আহসান। কিন্তু, জুনাইদ আহসান ঠিকাদারকে সাক্ষাত দেননি। এরপর ফোন করা হলে ফোনও ধরেননি।
এই পর্যায়ে ঠিকাদার একটি সূত্রে জানতে পারেন, ৩য় সর্বনিম্ন দরদাতা ইউনুস এন্ড ব্রাদার্সকে কাজটি দেওয়া হচ্ছে ৬০ লাখ টাকা বেশিতে। এরমধ্যে ঘুষ হিসেবে ৩০ লাখ টাকা পেয়েছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী। খবরটির সত্যতা নিশ্চিত হয়ে ঠিকাদার সার্বিক ঘটনাবলী তুলে ধরে ২২/০৬/১৪ তারিখে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দেন এবং এর প্রতিকার চান। চিঠিটি সংশ্লিষ্ট শাখায় আসে। শাখার অফিসার, উপসচিব মো. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে ঠিকাদার সাক্ষাত করেন। চিঠির ফলাফল জানতে চান। কিন্তু, উপসচিব দেলোয়ার হোসেন তার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে চাননি। তাকে এড়িয়ে চলছিলেন। পরে একপর্যায়ে দেলোয়ার হোসেন তাকে বলেন, পিপিআর অনুসরণ করেননি কেন? সংশ্লিষ্ট উইংয়ের যুগ্মসচিব শফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও একই আচরণ করেন। অভিযোগ দায়েরের ব্যাপারে এরা ঠিকাদারকে পিপিআর অনুসরণ করার জন্য বলেন। ঠিকাদার পিপিআর অনুযায়ী ১৩/০৭/১৪ তারিখে একই বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলীর কাছে এবং ১৫/০৭/১৪ তারিখে আবার সচিবের কাছে অভিযোগ দাখিল করেন। কিন্তু, দেখা গেছে, মন্ত্রণালয় এ অভিযোগের বিষয়ে কোনোরকমের পদক্ষেপ না নিয়ে বরং উল্টো সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীকে শোকজ করেছেন, কেন এমএ ইঞ্জিনিয়ারিংকে কাজ সম্পন্নের সার্টিফিকেট দিয়েছেন তিনি।
ফলে বাধ্য হয়ে ঠিকাদার ১৬/০৭/১৪ তারিখে ২,২০,০০০/- টাকা জামানত দিয়ে সিপিটিইউতে ডিজি বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন। সিপিটিইউ’র রিভিউ প্যানেলের কাছে এ অভিযোগ বিচারের জন্য নির্ধারিত হয়। ২১/০৭/১৪ তারিখে সিপিটিইউ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়ে এই টেন্ডার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে বলে। এই চিঠির কপি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ছাড়াও ফ্যাক্সের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং প্রধান প্রকৌশলীর কাছে ওই দিনই পৌঁছানো হয়।
কিন্তু, সিপিটিইউ’র ওই চিঠির পরও জালিয়াতির মাধ্যমে রাতের অন্ধকারে ২২/০৭/১৪ তারিখে ১৭/০৭/১৪ অর্থাৎ পেছনের তারিখ দিয়ে ইউনুস এন্ড ব্রাদার্সকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এছাড়াও প্রতি পদে পদে আরো ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয় এই টেন্ডারটিতে। সিপিটিইউ’র শুনানি হয় ০৬/০৮/১৪ তারিখে এবং ১২/০৮/১৪ তারিখে রায় ঘোষণা হয়। কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই শুনানিতে অংশ নিয়েছেন।
কিন্তু, তাদের জালিয়াতি ও দুর্নীতি ধরা পড়ে যাওয়ায় মামলায় তারা হেরে যান। দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে ইউনুস এন্ড ব্রাদার্সকে যে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে তা বাতিল করে নিয়ম অনুযায়ী পুনরায় টেন্ডার মূল্যায়ন করে কার্যাদেশ দেওয়ার জন্য সিপিটিইউ আদেশ দিয়েছে।
অবাক ব্যাপার হলো, সিপিটিইউ’র এই আদেশেরও তোয়াক্কা করছেন না সড়ক বিভাগের দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীরা। বরং তারা এমএ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মালিককে প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিলসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। পাশাপাশি তাকে এই ভাগ-বাটোয়ারায় শরিক হওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে, যাতে ঠিকাদার কার্যাদেশের দাবি ছেড়ে দেন। শুধু তাই নয়, সর্বশেষ ঘটনা হলো, সিপিটিইউ’র রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সড়ক অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় অবৈধভাবে কাজ পাওয়া ইউনুস এন্ড ব্রাদার্সকে বিলও পরিশোধ করে দিয়েছে। ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স যথাযথ কাজ না করেই বিল তুলে নিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।