সিলেটে বৃষ্টিপাতের রেকর্ড জলাবদ্ধতায় নাকাল নগরবাসী
স্টাফ রিপোর্টার :: সিলেটে রেকর্ড গড়া বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর টানা বৃষ্টিপাতে রেকর্ড করেছে ১৪৭ মিলিমিটার। এর মধ্যে সকাল ১০টার পর থেকে ভারী বর্ষণ হয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ভারী বর্ষণের রেকর্ড ছিল ৬৪ মিলিমিটার।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী সবুজ সিলেটকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গতকাল সন্ধ্যা থেকে আজ সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের নতুন রেকর্ড করা হবে।
এদিকে, সিলেটে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কালবৈশাখি ঝড় ও বজ্রপাতে জনজীবনে নেমে আসে চরম ভোগান্তি। গতকাল সোমবার মধ্যরাত থেকে কয়েকদফা ঝড় বয়ে যায় সিলেটের বিভিন্ন জনপদের উপর দিয়ে। সেই সাথে মাঝারি, ভারী বর্ষণ এবং দমকা হাওয়া ছিল পুরো দিনই। নগরী ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকার অনেক বাড়ির টিন উড়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে গাছ ভেঙে পড়েছে। নগরীর নাইওরপুলে একটি ভারী বিলবোর্ড ভেঙে পড়েছে। শেষ রাতে কিছুটা বিরতির পর সকাল দশটা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত টানা বর্ষণে ভোগান্তি বাড়িয়ে দেয়। মাঝারি, ভারী বর্ষণ এবং দমকা হাওয়ার কারণে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের বেলকিভাজি আরো ভোগান্তির মাত্রা বাড়ায়। বিশেষ করে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে হিমশিম খেতে হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় অধিকাংশ পরীক্ষার হলে মোমবাতি জ্বালিয়ে পরীক্ষা দিতে হয় পরীক্ষার্থীদেরকে। পুরো দিনের প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টির সাথে বজ্রপাতও হয়। ভারী বৃষ্টির কারণে নগরের সাপ্লাই, লোহারপাড়া, হাওয়াপাড়া, সোনারপাড়া, শিবগঞ্জ, চারাদিঘিরপার, সুবিদবাজার, ঘাসিটুলা, লালাদিঘিরপার, উপশহর, বালুচর, ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কসহ বেশকিছু এলাকায় হাঁটু পরিমাণ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। নগরের আম্বরখানা এলাকায় সৃষ্টি হয় মারাত্মক জলাবদ্ধতা। বিশেষ আম্বরখানা থেকে শাহী ঈদগাহ রোড পর্যন্ত এলাকার পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ।
সাপ্লাই রোড এলাকার বাসিন্দা জুয়েল আহমদ জানান, জলাবদ্ধতার কারণে মঙ্গলবার সকালে তিনি চরম বিড়ম্বনায় পড়েন। সকালে বাসা থেকে বের হয়ে শাহী ঈদগাহ ওই এলাকায় যেতে তাকে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তিনি জানান, আম্বরখানা থেকে ইলেকট্রিক সাপ্লাই পর্যন্ত এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে যায়। এ কারণে যান চলাচলও বন্ধ হয়ে পড়ে। পানি ঢুকে অনেক সিএনজি অটোরিকশার ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ইলেকট্রিক সাপ্লাই থেকে পাঁয়ে হেঁটে তাকে কর্মস্থলে যেতে হয়। তিনি জানান, ওই এলাকায় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সোয়া ১টা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ ছিল।
নগরের মদিনা মার্কেট এলাকার বাসিন্দা ময়না মিয়া জানান, বেলা দেড়টার দিকে তার সহোদরের ওসমানী বিমানবন্দর থেকে একটি নির্ধারিত ফ্লাইট ছিল। কিন্তু, জলাবদ্ধতার কারণে তারা বেলা সোয়া ১টা পর্যন্ত আম্বরখানা এলাকায় আটকা পড়েছিলেন।
অপরদিকে, নগরীতে বিদ্যুতের যাওয়া আসা খেলা চলছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের পাশপাশি ভোগান্তিতে পড়ছেন ব্যাবসায়ী ঝড়ের কারনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। দিনমজুর শ্রমজীবীরা কাজের জন্য বাইরে বের হতে পারেননি। জলাবদ্ধতার কারণে অনেকের বাসাবাড়িতে পানি উঠে যায়।
এছাড়া সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের হাওর অঞ্চলে অনেক স্থানে ধানি জমি তলিয়ে গেছে। তরিঘড়ি করে ধানকাটার শ্রমিক না পেয়ে সংকটে পড়েছেন অনেক কৃষক। মুহুর্মুহু বজ্রপাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন প্রান্তিক জনপদের বাসিন্দারা। ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জনপদে বন্যারও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আবহাওয়া অফিস সিলেটের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ জানান, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে কালবৈশাখি ঝড় হচ্ছে। আরোও কয়েকদিন এই অবস্থা চলতে থাকতে পারে।
এদিকে, ঝড়ের সাথে সাথেই বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে সিলেট বিভাগের প্রায় প্রতিটি জনপদ। সিলেট সদর উপজেলাসহ বিয়ানীবাজার, বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, সুনামগঞ্জের জগন্নাথুপর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, ছাতক, বিশ^ম্ভরপুর, দিরাইসহ অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় জলাবদ্ধ হয়ে পড়ায় বন্ধ হয়ে যায় ক্লাস-কার্যক্রম।