টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে গৃহবধূকে গণধর্ষণ
ডেস্ক রিপোর্টঃ টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনায় তিন অভিযুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ধর্ষিতার স্বামী বাদী হয়ে শুক্রবার মধ্যরাতে ধনবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারসহ ছয় শ্রমিক নেতাকে অভিযুক্ত করা হয়। পুলিশ ওই রাতেই অভিযান চালিয়ে বাসচালক হাবিবুর রহমান ওরফে নয়ন (৩৩), সুপারভাইজার রেজাউল করিম ওরফে জুয়েল (৩৫) ও হেলপার আবদুল খালেক ওরফে ভুট্টুকে (৩০) গ্রেপ্তার করে। এরপর পুলিশ গতকাল বিকালে ৩ আসামিকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করে। টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক লুনা ফেরদৌস বাসচালক নয়ন ও সুপারভাইজার জুয়েলকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ছাড়া বাসের হেলপার ভুট্টু ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এর আগে বিচারক ধর্ষিত নারীর জবানবন্দি ২২ ধারায় রেকর্ড করেন। অন্যদিকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রেহানা পারভিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি চিকিৎসক দল গতকাল ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। রেহানা পারভীন জানান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর জানান, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত তিনজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। পুলিশের একটি দল ঘটনা তদন্ত করছে। এর সঙ্গে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধনবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাসান মোস্তফা জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আরও তথ্য জানা যাবে।
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের ঘুনিগজমতি গ্রামের বাসিন্দা লেগুনা গাড়ির চালক স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুরের শফিপুর এলাকায় ভাড়াটে বাসায় থাকতেন। ৩১শে মার্চ বৃহস্পতিবার তার স্ত্রী টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার দত্তবাড়ি গ্রামে বেড়াতে আসেন। পরদিন শুক্রবার ভোরে গাজীপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে ধনবাড়ীতে এসে বিনিময় পরিবহনের একটি বাসে উঠেন। বাসটিতে ওই সময় আর কোনো যাত্রী ছিল না। বাসটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার মিলে তাকে ধর্ষণ করে মধুপুর উপজেলা শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহ সড়কের নির্জন স্থানে ফেলে দেয়। পরে ধর্ষিতা অন্য একজনের মোবাইল ফোন দিয়ে ঘটনাটি স্বামীকে জানান। স্বামী এসে তাকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় পরিবহন ফেডারেশনের কতিপয় নেতা বিষয়টির আপসরফা করার আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। পরে কোনো উপায় না পেয়ে ধর্ষিতার স্বামী পুলিশের শরণাপন্ন হন। এদিকে টাঙ্গাইল পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান লালজু বলেন, বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। তবে অন্যভাবে জানতে পেরেছি যে, এ বিষয়ে আলোচনা করতে একটি দিন নির্ধারণ করেছে ফেডারেশনের কয়েকজন নেতা। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা পরিবহন সংস্থার জন্য লজ্জাজনক। ঘটনা সত্যি হলে আমরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করবো।
এদিকে এ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উঠেপড়ে লেগেছে। ৬ই এপ্রিল মীমাংসার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। টাঙ্গাইল মেডিকেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রেহেনা পারভীন জানান, ধর্ষিতাকে পরীক্ষা শেষে তার আলামত ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে।