হবিগঞ্জে জিন্দা শাহর আবির্ভাব!

1ডেস্ক রিপোর্ট :: হবিগঞ্জে এক জিন্দা শাহ পীরের আবির্ভাব ঘটেছে। হাত-পা বেঁধে ঘণ্টাব্যাপী পানিতে ভেসে মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করছেন তিনি। দুপুরে কবর বাসে যান। থাকবেন তিন দিন। এটিকে তিনি কবর চিল্লা বলে দাবি করেন। আর তা দেখতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছেন। তবে এ নিয়ে দর্শণার্থীদের মাঝে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। কেউ বলছেন এটি কুসংস্কার, যাদু। আবার কেউ এটিকে পীরের কেরামতি ছাড়া অন্যকিছু মানতে নারাজ। এ নিয়ে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তি।

জানা যায়, শহরতলীর নয়াপাথারিয়া গ্রামে পাঁচ দিন আগে হঠাৎ এসে হাজির হন অপরিচিত এক লোক। তার মুখ ভরা দাড়ি ও গোঁফ রয়েছে। বয়সের ভারও অনেক বেশি। শরীরের চামড়ায় ভাঁজ ধরেছে। চোখগুলো লালচে হয়ে আছে। এখানে এসে কয়েকজনকে ডেকে এনে এ বৃদ্ধ বলেন, আমি অনেক জায়গায় গিয়েছি। কোথাও জায়গা পছন্দ হয়নি। গ্রামের শেষ প্রান্তে হাওরে প্রবেশের মুখেই একটি পুকুরপাড়ে লোকজনকে নিয়ে বলেন, জায়গাটি আমার পছন্দ হয়েছে। তোমরা জায়গা দিলে আমি কবর চিল্লা (কবরবাস) করতে চাই। তাদের বলেন, হাত-পা বেঁধে পুকুরের পানিতে ফেলে দিতে। তার কথামতো জায়গা দিতে রাজি হন পুকুরের মালিক।

সবকিছুই তার কথামতো করেন গ্রামের লোকজন। কিছু সময় পর দুই ঘণ্টার জন্য তাকে পানিতে ফেলে দেয় গ্রামের লোকজন। পানি থেকে উঠে খাওয়া, ধূমপান সবই হচ্ছে নিয়মিত। মানুষের সঙ্গে কথাও বলছেন স্বাভাবিকভাবেই। শুধু নামাজ পড়েন কি না জানেনা কেউই। তারা দেখেওনি। প্রায় পাঁচ দিন এভাবে চলার পর রোববার তিনি কবর বাসে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তার ঘোষণা অনুযায়ী পুকুরের পাড়ে একটি জায়গায় টিনের ছোট্ট ঘর বানিয়ে এর ভেতর কবর খুঁড়তে শুরু করেন গ্রামের কয়েকজন। বেলা আড়াইটায় তাকে কবরে ঢুকানো হয়। মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে তার কবর থেকে উঠার কথা রয়েছে।

এর আগে রোববার বেলা ১১টায় তিনি হাজারো মানুষের সামনে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ৪০ মিনিট পুকুরের পানিতে ভেসে থাকেন। বেলা আড়াইটায় কবরে যাওয়ার সময় তিনি ৩০০ গ্রাম আঙ্গুর ও একটি খালি প্লাস্টিকের কৌটা সঙ্গে নিয়ে যান। এসময় তার স্ত্রী জায়েদা খাতুন ও ছেলে শামীম উপস্থিত ছিলেন।

তিনি (জিতু মিয়া ওরফে জিন্দা শাহ) জানান, তার নাম জিন্দা শাহ। বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার তিমিরপুর গ্রামে। বয়স ৮৫ বছর। বিগত ৪৫ বছর ধরে তিনি এমন চর্চা করছেন। ইতিপূর্বে অসংখ্যবার তিনি বিভিন্ন জায়গায় পানিতে ভেসে কাটিয়েছেন। কবর বাস করেছেন। এখানে কবরে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যেতে পারেন গ্রামবাসীর এমন আশঙ্কার উত্তরে তিনি বলেন, আমার মৃত্যু হলে এজন্য কেউ দায়ি হবে না। আমার স্ত্রী-সন্তানরা আছে। তারাই এর দায় নেবে। কারো ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

জিতু মিয়ার দাবি, তিনি গত ৪৫ বছর ধরে বিভিন্ন মাজারে ঘুরে আধ্যাত্মিক সাধনা করছেন। নিজেকে তিনি হবিগঞ্জ শহরের আরেক আধ্যাত্মিক সাধক দেওয়ান মাহবুব রাজার ভক্ত দাবি করে বলেন, তার আদেশেই তিনি চিল্লায় যাচ্ছেন। আর এজন্য তিনি বেছে নিয়েছেন নয়াপাথারিয়া গ্রামকে। এর আগেও তিনি ১১ বার চিল্লায় গেছেন বলে জানান তিনি।

তার স্ত্রী জায়েদা খাতুন জানান, তার স্বামীর ভালো নাম জিতু মিয়া। তাদের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। স্বামী এখানে আছেন খবর পেয়ে তিনি ছুটে এসেছেন। মাঝে মাঝেই তার স্বামী এমন করে থাকেন। যখনই এমন করেন তখনই তিনি পাশে থাকেন। তিনিও কাউকে ভয় না পাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমি সব সময়ই তা দেখে আসছি। যদি আমার স্বামীর কিছু হয়, এজন্য গ্রামবাসী কেউ দায়ি হবে না।

জমির মালিক জুয়েল মিয়া জানান, এ ব্যক্তি পাঁচ দিন আগে এসে কয়েকজনকে ধরে এনে তাকে পানিতে ফেলে দিতে বলে। একেকবার পানিতে ফেলে দিলে ১/২ ঘণ্টা থাকেন। তিন দিনের জন্য এ ব্যক্তি কবর বাসে যেতে তার জমি ব্যবহার করতে চাইলে তাতে তিনি অনুমতিও দেন। তবে বিষয়টি তিনি থানায় অবহিত করেছেন। তিনি বলেন, ওই ব্যক্তির কথায় কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে তার বাড়িতে গাড়ি পাঠিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে এসেছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, আমরা বিশ্বাস করি না যে কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে তা সম্ভব। আমাদের মনে হচ্ছে- এটি যাদু জাতীয় কিছু হবে। কুসংস্কার হবে। কারণ তিনি দৈনন্দিন সবকিছু ঠিকমতো করছেন, নামাজও পড়েন না। সবার সঙ্গে ঠিকমতো কথাও বলছেন। যা কোনো অলি করবেন না। তারা বলেন, বিষয়টি আমাদের মুরুব্বীদের বলেছি। তারা আমাদের কথা বিশ্বাস করতে চান না। কেউ কেউ আবার আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। আসলে ঘটনাটি নিয়ে আমাদের মাঝে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।

আবার হাত-পা বেঁধে কোনো মানুষের পক্ষেই পানিতে ভেসে থাকা সম্ভব নয় বলে দাবি করেন কয়েকজন দর্শণার্থী। তারা জানান, নিশ্চয়ই তার মাঝে কোনো কিছু আছে। অলি আওলিয়া ছাড়া এটি সম্ভব নয়। যারা এটি বিশ্বাস করতে চায় না, তাদের হাত-পা বেঁধে পানিতে ফেলে দেখুন ভেসে থাকতে পারে কিনা।