উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা
অহী আলম রেজা :: সবুজ জমিনে লাল বৃত্তের মাঝে সোনালি মানচিত্র আঁকা স্বাধীন বাংলার পতাকা এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করল ’৭১-এর এই দিনে। শাণিত হল বাঙালির মুক্তি আন্দোলন। রাজপথ, ভবন, গাছের চূড়া-যেদিকে চোখ যায় উড়ল সারি সারি পতাকা। লাঠি-বর্শা-বন্দুকের মাথায় বেঁধে পতাকা, মিছিলে মিছিলে গর্জে উঠল বাঙালি। গাইল কালজয়ী সেই গান-‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উড়ল কালো পতাকাও।
একাত্তরের এদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই বঙ্গবন্ধু তার ধানমণ্ডির বাসভবনে নিজ হাতে তোলেন স্বাধীন বাংলার পতাকা। উপস্থিত জনতা সম্মিলিত কণ্ঠে গাইলেন ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি। তার সুর অভূত এক কাঁপন তোলে বাতাসে। সামরিক কায়দায় জাতীয় পতাকাকে অভিবাদন জানায় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পতাকা হাতে মিছিলের সে াত নামে ধানমণ্ডিতে।
ঢাকার প্রেসিডেন্ট ভবন ও সেনাবাহিনীর সদর দফতর ছাড়া কোথাও উড়ল না পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা। আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলা হয় সব সরকারি-বেসরকারি ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তোলা হয় শোকের প্রতীক কালো পতাকাও। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সারাদেশে পতাকা বিতরণ করে। দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত নকশা দেখে বানিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে পতাকা তোলে জনতা। স্বাধীন বাংলার পতাকা হাতে পথে নামে মানুষ। ভুট্টো ও সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ¯ে¬াগান দেয়। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবি এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো ও জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলার পর প্রভাতফেরি বের করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। পল্টন ময়দানে ছাত্র-ছাত্রী ও সাবেক বাঙালি সৈনিকদের সমন্বয়ে গঠিত ‘জয় বাংলা বাহিনী’ আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ ও মহড়া করে। বাহিনীর সদস্যরা সামরিক কায়দায় জাতীয় পতাকার প্রতি অভিবাদন জানান। বাজানো হয় ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি। বাহিনীর গার্ড অব অনার নেন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নুরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আ স ম আবদুর রব ও আবদুল কুদ্দুস মাখন। পরে বাহিনীর পাঁচ শতাধিক সদস্য প্যারেড করে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যান ও তাকে অভিবাদন জানান। বঙ্গবন্ধু সালাম গ্রহণ শেষে জয় বাংলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, বাংলার জয় অনিবার্য। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সেনাবাহিনীর সদস্যদের বাধা উপেক্ষা করে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। চীন, ইরান, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসে সকালে তোলা পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে তোলা হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলা হয় ব্রিটিশ হাইকমিশন ও সোভিয়েত কনস্যুলেটে।