দিতির চলে যাওয়া : স্মৃতিচারণে বেদনার সুর সহকর্মীদের

1বিনোদন ডেস্ক :: বাংলা সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা দিতি ওপারে চলে যাওয়ার খবরে বিভিন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মনে ‘স্তব্ধ আবহওয়া’ বিরাজ করছে। তার চলে যাওয়া শিল্পজগতের অপূরণীয় ক্ষতি হলেও মৃত্যুকে তো অস্বীকার করার কিছু নেই। ঠিক সেকারণেই দিতির এক সময়ের সহকর্মীদের মুখে এখন বেদনার সুর।
ববিতা
বাংলা সিনেমার গুণী অভিনেত্রীদের একজন দিতি। আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না। দিতি আর নেই। আমি লামিয়ার (দিতির মেয়ে) সাথে প্রায়শই কথা বলতাম। দিতির খোঁজখবর নিতাম। আর দিতির অভিনয় নিয়ে নতুন করে কিছু তো আর বলার নেই। সু-অভিনয় দিয়েই দর্শক হৃদয় জয় করেছেন। তবে চেন্নাই থেকে দেশে আনার পর ওকে দেখে আমার নিজেরই খারাপ লাগত। ও অনেক কষ্ট পেয়েছে শেষের দিনগুলোতে। আল্লাহ যেন দিতির জন্য বেহেশেত এর দুয়ার খোলা রাখেন।
মিশা সওদাগর
দিতি আপার চলে যাওয়া মানে, আমার বাংলা সিনেমার একজন অভিভাবকে হারালাম। আর পৃথিবীতে কারও জায়গা তো কেউ পূরণ করতে পারে না। আর সেক্ষেত্রে দিতি আপার তো নয়ই। আমি যখন খবরটি শুনলাম দিতি আপা আর নেই। আর সারা শরীর কিছুক্ষণের জন্য ঠান্ডা হয়ে গেল। বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য এ এক অপূরণীয় ক্ষতি। আল্লাহ তাকে যেন ভাল রাখেন।
রিয়াজ
দিতি আপার চলে যাওয়া মানে আমাদের সিনোমা কিংবা বাংলা সিনেমার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তার মতো একজন অভিনেত্রীর বেঁচে থাকলে বাংলা সিনেমাকে আরও সমৃদ্ধ করে যেতে পারতেন। আর দিতি আপার মৃত্যুর খবর এখনও কানে বাজছে। কিন্তু বিশ্বাস করাটা বড়ই বেদনাদায়ক হয়ে যাচ্ছে। সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে ওপারে ভাল রাখেন।
অপু বিশ্বাস
দিতি আপু যখন অসুস্থ হয়েছিলেন। তখন আমরা রাজাবাবু সিনেমার শুটিং করছিলাম। এরপর ছবিটিতে আপুর কিছু সিকোয়েন্স বাদ দিয়েই ছবিটি মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তার একটা কথা আমার কানে খুব বাজছে-অপু এখন অনেকেই অভিনয় করছে। তুমি তোমার জায়গা থেকে আরও ভাল করার চেষ্টা করো। দর্শকদের সামনে নিজেকে প্রতিটি ছবিতে নতুনরূপে তোমাকে দেখতে চাই। দিতি আপু মৃত্যুর আগে অনেক কষ্ট পেয়েছেন। আমি যতটুকু এ বিষয়ে জানতে পেরেছিলাম-ক্যামো থেরাপি দেওয়ার পর। তিনি এতটাই বদলে গিয়েছিলেন যা আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছিল। সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে তার কাছে ভাল রাখেন।
চঞ্চল চৌধুরী
এটা আসলে মর্মান্তিক একটি খবর। আর যেদিন শুনেছি দিতি আপু অসুস্থ হয়েছেন সেদিন থেকেই দীর্ঘায়ু কামনা করেছিলাম। বাংলা সিনেমার তিনি তো বড় মাপের একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তার সাথে আমার বেশকিছু নাটকে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল। তারপর যখন আমি অভিনয়ে আসলাম। এরপর দিতি আপার সাথে যখন প্রথম অভিনয় করলাম-আমি আপাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করি। সেদিন বলেছিলাম আপা ছোটবেলা থেকে আমি আপনার অভিনয়ের ভক্ত। আপনার অভিনীত সিনেমা দেখে বড় হয়েছি। আর প্রিয় নায়িকাও। আমার কাছে মনে হয় দিতি আপু বেশ আন্তরিকতা নিয়েই আমাদের সাথে কাজ করেছেন। যাই হোক মৃত্যুর উপরে তো কারও হাত নেই। আল্লাহর কাছে দোয়া করি।
মাহিয়া মাহি
আমার সাথে প্রথম সিনেমাতে দিতি আপু আমার শ্বাশুড়ীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। আমি আপুকে তখন বলেছিলেন আমার ব্যক্তিজীবনে যখন বিয়ে করব তখন তোমার মত যেন একজন স্মার্ট শাশুড়ি হয়। আমি তাকে এরপর থেকে চাচিমা বলে ডাকতাম। এরপর আর কখনও অভিনয় করা হয়নি আপুর সাথে। কিন্তু খুব ভাল একজন মানুষ ছিলেন। অনেক আদর করতেন। আর তার ব্যক্তিত্ব ছিল বেশ আকর্ষণীয়। আমার বেশ ভাল লাগত।
বাংলা সিনেমায় অভিনয় করে সু-অভিনেত্রী হিসেবেই সুনাম কুড়িয়েছেন দিতি। ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে নিভে গেল জীবন প্রদীপ। ঢাকার এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এদিকে টানা তিন মাস ক্যানসার চিকিৎসার পর ভারতের মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব অর্থোপেডিকস অ্যান্ড ট্রমাটোলজি (এমআইওটি) হাসপাতাল থেকে গত ৮ জানুয়ারি অসুস্থতা নিয়েই দেশে ফিরেন অভিনেত্রী দিতি।
একই দিন সরাসরি ভর্তি করানো হয় গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে। এতদিন তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। অসুস্থ হওয়ার আগে দিতি দুটি নতুন ধারাবাহিক নাটকে কাজ করছিলেন। একটি ‘লাইফ ইন আ মেট্রো’, অন্যটি ‘মেঘে ঢাকা শহর’। অপরদিকে তিনি বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ‘রাজা বাবু’ ছবির কাজও করছিলেন
দিতি অভিনীত সর্বশেষ ছবি ‘সুইটহার্ট’ গত মাসে মুক্তি পায়। এ ছাড়া মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ‘ধূমকেতু’ ছবিটি। সুভাষ দত্তর ‘স্বামী স্ত্রী’ ছবিতে আলমগীরের স্ত্রীর চরিত্রে দারুণ অভিনয় নৈপুণ্যের জন্য প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। জীবদ্দশায় প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন দিতি।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘হীরামতি’, ‘দুই জীবন’, ‘ভাই বন্ধু’, ‘উছিলা’, ‘লেডি ইন্সপেক্টর’, ‘খুনের বদলা’, ‘দুর্জয়’, ‘আজকের হাঙ্গামা’, ‘স্নেহের প্রতিদান’, ‘শেষ উপহার’, ‘চরম আঘাত’, ‘স্বামী-স্ত্রী’, ‘অপরাধী’, ‘কালিয়া’, ‘কাল সকালে’, ‘মেঘের কোলে রোদ’, ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’, ‘মুক্তি’, ‘কঠিন প্রতিশোধ’, ‘জোনাকীর আলো’, ‘তবুও ভালোবাসি’, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’, ‘হৃদয় ভাঙা ঢেউ’, ‘মাটির ঠিকানা’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’।
১৯৬৫ সালের ৩১ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে জন্মছিলেন পারভীন সুলতানা দিতি। ১৯৮৪ সালে নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেন তিনি। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘ডাক দিয়ে যাই’। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। দিতি অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত  প্রথম চলচ্চিত্র ছিলো আজমল হুদা মিঠু পরিচালিত ‘আমিই ওস্তাদ’।