ভারতে বিয়ে বাড়িতে গুলি বরসহ হতা-হতের ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক
ডেস্ক রিপোর্ট :: বিয়ে বাড়িতে ঢাক ঢোল বাদ্য বাজিয়ে আমন্ত্রিত অতিথিদের মাঝে আনন্দের রীতি বেশ পুরনো। তবে ভারতের উত্তর প্রদেশের বিয়ে বাড়ির চিত্র কিছুটা ভিন্ন। এখানে ঢাক ঢোলের আওয়াজের চেয়ে গুলির আওয়াজই শুনতে বেশি পছন্দ করে বিয়েতে আসা লোকজন। আর এটাকে পূর্বপুরুষের কাছ থেকে পাওয়া ঐতিহ্যের অংশ বলেই মনে করেন স্থানীয়রা। কিন্তু সাময়িক আনন্দ করার ঐতিহ্যও যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে এ ব্যপারে কোন ধারণাই থাকে না বিয়েতে আসা আমন্ত্রিত অতিথিদের। বিয়ের অনুষ্ঠানে এসে নির্মম মৃত্যুর স্বীকার হতে হয় অনেককে, এমনকি এই তালিকা থেকে বাদ পরছেনা বর নিজেও।
উত্তর প্রদেশের একটি ছোট গ্রাম রায়পুর ভুদ যেখানে গত সপ্তাহে বিয়েতে গুলি করে আনন্দ করতে গিয়ে মারা গেছেন বরসহ বরের পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য। তবে নির্মম বিষয়টি হলো যার বন্ধুক থেকে গুলিটি ছোড়া হয়েছে সে কিন্তু বরের কোন শত্রু নয় বরং বরের পরিবারেই কোন এক সদস্য। তবে ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত নয় ঐতিহ্য হিসেবে গুলি করার প্রথা থেকেই উপরের দিকে গুলি ছুড়তে গিয়ে বরের গায়ে গুলি লাগলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। এই ঘটনার এখানেই শেষ নয় বরের সঙ্গে থাকা ১৭ বছরের একটি মেয়েও আহত হয় পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে এই সপ্তাহে বর এবং এই মেয়েটিই এমন ঘটনার শিকার হয়েছে। কিন্তু পূর্বেও আছে এসব ঘটনার বিরল দৃষ্টান্ত।
উত্তর প্রদেশে আর একটি গ্রামে গত মাসে ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে বরযাত্রী যাওয়ার সময় বরের বাবাসহ ১২ বছরের একটি শিশু গুরুতর আহত হয়। এদিকে বিয়ে দেখতে এসেও আহত হতে হয় একজন নারীকে। এই নিয়ে পর পর তিনটি গ্রামে ঘটে এমন আহত হওয়ার মতো মর্মান্তিক ঘটনা। এর মধ্যে আলিপুর গ্রামের ঘটনা আবার কিছুটা ভিন্ন। সেখানে বিয়েতে আসা লোকজন সবাই বেশ আনন্দের সঙ্গেই বরকে নিয়ে যাত্রা করেছিল। কিন্তু পথিমধ্যে শুরু হয়ে যায় তাদের তথাকথিত ঐতিহ্যের নামে গুলি ছোড়ার কর্মকান্ড। উপরের দিকে খোলা আকাশে গুলি ছুড়তে গিয়ে গুলি এসে লাগে বরের গায়ে শুধু তাই নয় বরের সঙ্গে সঙ্গে আহত হয় বরের দুইজন বন্ধু। বন্ধুদের বাঁচানো গেলেও শেষ রক্ষা হয় না বরের। এছাড়াও বিয়েতে আনন্দ করতে গিয়ে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুর খবরও শোনা যায় ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে।
তবে গুলি ছুড়ে আনন্দ করা উত্তর প্রদেশের প্রত্যেকটি পরিবারের ঐতিহ্যের চেয়ে বেশি প্রথা হয়ে দাড়িয়েছে। অনেকে আবার এক পরিবার আর এক পরিবারের অনুকরণও করছে। তবে এ ব্যাপারে দিল্লির আদালতে একটি রুল জারি হলে রাজ্য সরকার এটিকে অপরাধ আখ্যায়িত করে এমন অপরাধের শাস্তি হিসেবে ২৫ মাসের জেল নির্ধারন করেছে। তবে এতকিছুর পরেও কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না ঐতিহ্য নামে এই মরণখেলা। এদিকে অপর একটি আদালতে বলা হয়েছে, বিয়েতে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো লাইসেন্স করা থাকলেও সেগুলো যেন কোনভাবেই অপব্যবহার করা না হয় সেই ব্যাপারেও শাস্তির বিধান করেছে। তবে পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখা যায় বিয়ে বাড়িতে ছোড়া গুলির ঘটনায় আহত ও নিহতদের সংখ্যা যেন দিন দিন বেড়ই চলেছে।
১৯৮৫ সালে যা ছিল মাত্র দুই শতাংশ, ১৯৯২ সাল আসতেই তা বেড়ে দাড়িয়েছে ছয় শতাংশ। শুধু তাই নয় যতদিন যাচ্ছে ততই ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃতের সংখ্যা। আর এই নিয়ে রাষ্ট্র উদ্বিগ্ন হলেও উদ্বিগ্নতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না উত্তর প্রদেশের স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে।