কয়েস লোদী এবার কি বসতে পারবেন ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে
স্টাফ রিপোর্টার :: সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত মেয়র প্যানেলের প্রথম সদস্য কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর ভাগ্যে কী আছে? তিনি কি শেষপর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পাবেন? নাকি নানা জটিলতা সৃষ্টি করে কয়েস লোদীকে আগের মতো বঞ্চিত করা হবে ভারপ্রাপ্ত মেয়র পদ প্রাপ্তি থেকে- এমন প্রশ্ন সিসিকের বিভিন্ন ওয়ার্ডের মানুষের মধ্যে। প্যানেল মেয়রের প্রথম সদস্য হয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে মেয়রের চেয়ারে বসেও বসতে পারেননি কয়েছ লোদী। কী কারণে কয়েস লোদীকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র পদ থেকে বঞ্চিত করতে চায় একটি মহল তা আজও তিনি জানতে পারেননি।
২০১৩ সালের ১৫ জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পর কাউন্সিলরদের প্রথম সভা হয় ৯ অক্টোবর। এতে কাউন্সিলরদের গোপন ভোটে মেয়র প্যানেলের প্রথম সদস্য নির্বাচিত হন ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। ২০১৪ সালের ১০ জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মাসিক সভায় শেষে একজন কাউন্সিলর কয়েস লোদীকে মেয়র প্যানেলের প্রথম সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করার কথা জানিয়ে বলেন, আপনি পদত্যাগ করুন। আপনি পদত্যাগ না করলে আমরা আপনার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনব। তাৎক্ষণিক ওই কাউন্সিলরের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে বিষয়টিকে রসিকতা হিসেবেই নিয়েছিলেন কয়েস লোদী। কিন্তু ওই দিনই তার বিরুদ্ধে আনাস্থা জানান ২৬ জন কাউন্সিলর। এরপর মেয়র (বরখাস্তকৃত) আরিফুল হক চৌধুরী কয়েস লোদীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়টি সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আইন দেখতে বলেন। প্রধান নির্বাহী আইন বইটি দেখে মেয়রকে জানান, প্যানেল মেয়র-১ এর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার কোনো বিধান নেই। তবুও এর ৬ মাস পর একই বছরের ডিসেম্বর মাসে অনাস্থা প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়। ওই প্রস্তাবের কপিটি মেয়র নিজে মন্ত্রণালয়ে নিয়ে গিয়ে কয়েস লোদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলে জানান কয়েস লোদী।
ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যামামলায় অভিযুক্ত হন। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আরিফুল আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি আত্মসমর্পণ করার আগেই একটি অফিস আদেশের মাধ্যমে ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর মেয়র প্যানেলের দ্বিতীয় সদস্য কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি আরিফুলকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এক আদেশে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে প্যানেল মেয়র-১ রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র করার নির্দেশনা দেয়া হয়। আরেকটি চিঠির মাধ্যমে মন্ত্রণালয় জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ দেয় আরিফুল হক চৌধুরীকে। একই দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সন্ধ্যা ৭টায় চিঠিটি গ্রহণ করেন আরিফুল হক চৌধুরী।
স্থানীয় সরকারের আদেশ পেয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে ১২ জানুয়ারি সিসিকে একটি মিছিল সহকারে দায়িত্ব নিতে যান কয়েস লোদী। কিন্তু কয়েকজন কাউন্সিলরের বাধার মুখে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেননি তিনি। নগর ভবনে তাঁকে নিয়ে চলে হট্টগোল। পরে সমঝোতা হয়, কাউন্সিলররা বসে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়টি সুরাহা করবেন বলে জানালে দায়িত্ব না নিয়ে ফিরে যান কয়েস লোদী।
এদিকে, মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরী হাইকোর্টে ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি একটি রিট আবেদন দায়ের করেন। ওই রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে বিচারপতি নায়মা হায়দার ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম স্থানীয় সরকার আইন-২০০৯ এর ২১ ধারা অনুযায়ী সিসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। এরপরও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে দায়িত্ব পাননি কয়েস লোদী।
সর্বশেষ চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে ভারপ্রাপ্ত মেয়র পদে দায়িত্ব পালনে আইনি জটিলতার অবসান হয়েছে বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে কয়েস লোদীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী উপস্থিত হয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়র পদে প্যানেল মেয়র-১-এর দায়িত্ব পালনে আর কোনো আইনি জটিলতা নেই বলে জানান।
আইনজীবী বলেন, ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন নিয়ে প্যানেল মেয়র-১ ও প্যানেল মেয়র-২-এর দায়ের করা দুটি রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ যে রায় দেন, সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়। এর মধ্য দিয়ে আইনি জটিলতার অবসান হয়েছে জানিয়ে বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় হওয়ায় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ প্রদান করেছেন আদালত।
এ ব্যাপারে কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে জটিলতার কারণে মেয়রবিহীন সিসিকের উন্নয়ন কাজে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হচ্ছে। একটি পক্ষ নিজেদের ফায়দা হাসিলে স্বার্থে প্রতিবন্ধকতার জাল ছড়িয়ে দেয়। তা না হলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে কেন রিট পিটিশন দাখিল করে নগরের উন্নয়ন ব্যহত করা ষড়যন্ত্র করা হলো।
কয়েস লোদী বলেন, আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অন্যায় ও পরিকল্পিতভাবে যে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল হাইকোর্ট তা আইনসিদ্ধ নয় বলে রায় দেন। আইন অনুযায়ী কে ভারপ্রাপ্ত মেয়র স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তা নির্ধারণ করবে। যা খুব শীঘ্রই পরিষ্কার হবে।’