সিলেটের কয়েকজন পেশাজীবী নারীর সাফল্যগাথা
ডেস্ক রিপোর্ট :: জাগো নারী, জাগো বহ্নিশিখা কিংবা নারী জাগলে জাগবে দেশ। জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ভাষায়, ‘এ বিশে^র যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তাঁর করিয়াছে নারী অর্ধেক তাঁর নর’। এরকম বিভিন্ন কবিতায় নারীদের জাগরণের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেগম রোকেয়া ,সুৃফিয়া কামাল ও জাহানারা ইমামনহ অনেক মহীয়সী নারী নারীজাগরণে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। বাংলাদেশে নারীরা সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছেন পুরুষের সাথে সমান তালে। আজ ৮ মার্চ আর্ন্তজাতিক নারী দিবস। ‘অধিকার-মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমানে সমান’ -এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে পালন করা হবে আর্ন্তজাতিক নারী দিবস। সিলেটেও নারীরা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও বাধাবিপত্তি ডিঙিয়ে সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছেন। সিলেটে বিভিন্ন পেশায় সফল কয়েকজন নারীর কথা তুলে ধরা হলো।
সিটি ব্যাংক লিমিটেডের এভিপি ও সিনিয়র কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার ফাহমিদা জাহান
বলেন, ২০০৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডে অফিসার গ্রেড-১ হিসেবে চাকুরি জীবনে প্রবেশ করেন। ধাপে ধাপে অনেক পরিশ্রম ও একনিষ্ঠতার ফলে তিনি আজকের এ অবস্থানে এসেছেন। তিনি বলেন ব্যাংকিং পেশা নারীদের সবসময় আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে। এ পেশা নারীবান্ধব। তিনি আরও বলেন, কর্মক্ষেত্রে সবসময় সব সহযোগীদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে বৈষ্যমের শিকার হলেও কাজ ও মেধা দিয়েই তা এড়িয়ে গেছেন। তিনি বলেন, অনেক সময় নিজের ও পারিবারিক দুঃখ-বেদনা ভুলে গিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতে হয়। গ্রাহকদের সন্তুষ্টি অর্জনই থাকে মূল লক্ষ্য। তিনি তাঁর পেশায় সবসময় তাঁর পরিবার থেকে সার্বিক সহযোগিতা পেয়ে আসছেন।
অপরূপা বিউটি পার্লার উদ্যোক্তা গাজী লাইলী আক্তার স্বপ্না বলেন, ছিলেন নাট্যকর্মী। ২০০০ সালে প্রশিক্ষণ নেন বিউটিশিয়ানের ওপর। ২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে সুবিদবাজারে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৫ জন বিউটিশিয়ান নিয়ে খোলেন অপরূপা বিউটি পার্লার। ধীরে ধীরে এ প্রতিষ্ঠান ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। বর্তমানে এর ৬টি ব্র্যাঞ্চ রয়েছে। কর্মী রয়েছেন ১০০ এর উপর। তিনি জানান, তাঁর এ সাফল্যের পেছনে পরিবারের সহযোগিতা সবসময় পেলেও বাইরে থেকে বৈষ্যমের শিকার হয়েছেন। তবে থেমে যাননি। তিনি আর ও বলেন, যে-কোনো পেশায় সফলতার জন্য প্রচুর ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। কাজের প্রতি একাগ্রতা ও সাধনা নিয়ে যাবে সাফল্যের শিখরে। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সিলেট বিভাগীয় প্রধান সৈয়দা শিরীন আক্তারের মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়। তখন তিনি এসএসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বলেন,এ সময় পরিবার ও সমাজ থেকে নারীদের বৈষ্যমের শিকার হতে হয়। আমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে নিজে কিছু করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নিই। এ জন্য আমি বিয়ের পরও লেখাপড়া চালিয়ে যাই। পরে আইনি পেশায় চলে আসি। এ জন্য আমার প্রচুর পরিশ্রম ও সাধনা করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘজীবনে আইনি পেশায় নানা সময় নানা কারণে নারী বলে বৈষ্যমের শিকার হলেও সবসময় আমি আমার কাজ দিয়ে তা মোকাবিলা করতে চেয়েছি। এখনও পুরুষদের নারী বলে চিন্তাভাবনা প্রকাশ পায়। তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। নারীরা তাঁদের মেধা ও পরিশ্রম দিয়েই আইনি পেশায় আসেন।
তিনি বলেন নারীদের একসাথে দুইটা জিনিস প্রাধান্য দিতে হয়। পরিবার এবং পেশা। দুটির গুরুত্ব কোনোটার চেয়ে কোনোটা কম নয়। দুটিকে সবসময় সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পরিশ্রম,ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ়তা থাকতে হয়। তবেই নারীরা সফল হবে। পিৎজা হাট সিলেটর ক্যাশিয়ার সামিয়া লস্কর বলেন, নারী বলে নয়, নিজেকে নিজ পায়ে দাঁড়াব বলে গত আগস্টে পিৎজা হাট দিয়েই আমি চাকুরি জীবন শুরু করি। পরিবার ও সহযোগীদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেলেও বাইরে নানা সময় নানা কটু কথা শুনতে হয়। নারী বলে ব্যঙ্গ করা হয়েছ। তবুও দমে যাইনি। নারীদেরকে নারী না ভেবে সর্বক্ষেত্রে সমতা সৃষ্টি হোক- এই প্রত্যাশা করি।