এবার পুরুষ নির্যাতনের অভিযোগ!
ডেস্ক রিপোর্টঃ শামসুর রহমান (ছদ্মনাম)। তিনি স্ত্রীর নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনে মহিলা অধিদপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন মাস ছয়েক আগে। অধিদপ্তরের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, প্রতিদিনই শামসুর রহমানকে নির্যাতন করেন তার স্ত্রী। খারাপ ভাষায় গালিগালাজ, কামড়ানো, আর মেরে ফেলার ভয় দেখানোর মতো নির্যাতনের করা হয় তার ওপর।
শামসুর রহমান বলেন, স্ত্রীকে তিনি অনেক ভালোবাসেন। কিন্তু স্ত্রীর নির্যাতন সহ্য করতে পারছেন না তিনি। দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথাও চিন্তা করতে হয়। স্ত্রীকে নিয়েই থাকতে চান। তবে তার নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
অভিযোগটি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের এখতিয়ারভুক্ত না হলেও মানবিক বিবেচনায় শামসুর রহমানের অভিযোগটি আমলে নেয়া হয়। তারা স্বামী-স্ত্রীকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে ছয় মাস ধরে তাদের পর্যাবেক্ষণে রেখেছে।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের উপপরিচালক মোসা. ফেরদৌসী বেগম এই প্রতিনিধিকে বলেন, “পুরুষ নির্যাতনের বিষয়টি আমাদের সেলের এখতিয়ারভুক্ত নয়। তার পরও এমন ঘটনা আমাদের কাছে আসে। আমরা যতটা পারি সমাধানের চেষ্টা করি।”
মহিলা অধিদপ্তরে শামসুর রহমানের ঘটনাটিই প্রথম নয়। আরও অনেকে স্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে আসেন এই সংস্থায়। স্ত্রী চলে যেতে চান, কিন্তু স্ত্রীকে ফিরে পাওয়ার দাবি নিয়েও আসেন কেউ কেউ।
আজ রবিবার এমনই একটি অভিযোগ জমা পড়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে। অভিযোগ থেকে জানা গেছে, রাজন (ছদ্মনাম) ছয় বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেন নিলুফা বেগমকে (ছদ্মনাম)। এরই মধ্যে স্বামীর সহযোগিতায় বিদেশি ডিগ্রিও অর্জন করেন স্ত্রী।
মাস ছয়েক থেকে স্ত্রীর আচরণে পরিবর্তন দেখতে পান রাজন। স্ত্রী নিলুফা তাকে ছেড়ে যেতে চাইছেন। কিন্তু শামসুর রহমান তাকে যেতে দেবেন না। স্ত্রীর নানা অত্যাচার সহ্য করেও তাকে ধরে রাখতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে আবেদন করেন তিনি।
ঘটনাটি শুনে সংস্থার উপপরিচালক ফেরদৌসী বেগম দুই পক্ষকেই সান্ত্বনা দেন। তিনি বলেন, “সংসার ভেঙে ফেলা কোনোভাবেই যুক্তিসংগত কাজ নয়। কিন্তু স্ত্রী তার সিদ্ধান্তে অটল। তিনি বলেন, “আমি ওর (স্বামী) সংসার করব না।”
জানতে চাইলে শামসুর রহমান এই প্রতিনিধিকে বলেন, “ভাই, কী কমু, ও (স্ত্রী) আমার গায়ে হাত তোলে। শরীরে নখের আঁচড় আর কামড়ের দাগের কোনো অভাব নেই। বিশ্রী ভাষায় গালাগালি তো আছেই। তার পরও আমি চাই একসঙ্গে থাকতে। কিন্তু সে কথা শোনে না।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্ত্রী নিলুফা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এভাবেই নীরবে-নিভৃতে, কখনো বা সরবে নির্যাতনের শিকার হন কোনো কোনো পুরুষ। কিন্তু সামাজিক অবস্থান ও লোকলজ্জার ভয়ে তারা তা সয়ে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহিলা অধিদপ্তরের নারী নির্যাতন সেলে মোট অভিযোগের ৫ শতাংশ পুরুষ নির্যাতনের। তাদের মধ্যে কেউ এসেছেন স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমের প্রতিকার পেতে। আবার কেউ আসেন স্ত্রীর প্রতারণার হাত থেকে মুক্তি পেতে।
গত সপ্তাহের একটি ঘটনা। বিয়ের সপ্তাহ খানেক পরই তালাক চাইছেন স্ত্রী। আট লাখ টাকা কাবিনে তাদের বিয়ে হয়। জানা গেছে, এই নারীর এর আগেও একটি বিয়ে হয়। সেখানে স্বামীকে তালাক দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা পান। এরপর ফাঁদে ফেলেন কামাল নামের এই যুবককে।
বিবার মহিলা অধিপ্তরের সামনে এই প্রতিনিধিকে কামাল বলেন, “আমি বুঝতে পারিনি ও (স্ত্রী) প্রতারক। তার প্রেমের ফাঁদে আমি পা দিয়েছি। এখন আমি এ থেকে নিস্তার চাই।”
মহিলা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রতিদিন ২৫টির মতো অভিযোগ আসে তাদের কাছে, যার মধ্যে বেশির ভাগ পরকীয়া-সংক্রান্ত। মহিলা অধিদপ্তরের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে এমন অভিযোগ প্রতিদিন গড়ে ২৫টি করে আসে। এসব অভিযোগের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সমস্যা সমাধানে কাজ করে এই সেল। আর বাকি সমস্যাগুলো সম্পর্কে তাদের পরামর্শ দিয়ে বিদায় করা হয়।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের দেয়া তথ্যমতে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সমস্যার মধ্যে ৬০ শতাংশ অভিযোগ তারা সফলভাবে নিষ্পত্তি করতে পারে। বাকি অভিযোগগুলো তারা সমাধানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এরপর সেগুলো থানার মাধ্যমে কোর্টে পাঠানো হয়। আর এসব অভিযোগ পরিচালনায় সব ধরনের আইনি সহায়তা দিয়ে থাকে এই সেল। মহিলা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই দপ্তরের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের কার্যত শাস্তি দেয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। তারা দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে যৌক্তিক সমাধান করার চেষ্টা করে।