শিল্পদূষণের জন্য দায়ীরা গণহত্যার আসামী হবে: হবিগঞ্জে সুলতানা কামাল
ডেস্ক রিপোর্টঃ এডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী ও যুদ্ধাপরাধীরা এদেশে গনহত্যা চালিয়েছে। দীর্ঘদিন পরে হলেও তাঁদের বিচার হচ্ছে। আজ যারা শিল্পবর্জ্য দূষণের মাধ্যমে অনেক মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, একদিন তারাও গনহত্যার দায়ে দায়ী হবে এবং তাদেরও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে ।
শনিবার, সকাল ১১ টায় হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহপুরে নতুন বাজার সংলগ্ন মাঠে “হবিগঞ্জে শিল্প দূষণ পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয় প্রতিরোধের দাবীতে’’ অনুষ্ঠিত এক জনসভায় বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কর্তৃক আয়োজিত এ জনসভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), স্থানীয় ভুক্তভোগী জনগন ও ওয়াটারকিপারস বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এ জনসভায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে স্থানীয় জনসাধারণ শিল্প দূষণের প্রতিবাদে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জমায়েত হয়।
বাপা’র সহসভাপতি এডভোকেট সুলতানা কামাল তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। নদীকে কেন্দ্র করে এদেশের সভ্যতা গড়ে উঠেছে, সেখানে নদী যদি ধবংস হয়ে যায় তবে মানুষ বাঁচবে কি করে ? এদেশের নদী-বাতাস ও সার্বিক পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে সর্বস্তরের জনগনকে একত্রিত হয়ে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি ।
বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, হবিগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে যে কোম্পানীগুলো কারখানা খোলার ছাড়পত্র পেয়েছে, সেগুলো কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পেয়েছে, সেটার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা দরকার । তিনি শিল্পদূষণের বিরুদ্ধ্যে চলমান আন্দোলনকে গতিশীল রাখতে স্থানীয় জনগণকে আরও বেশী সচেতন ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন ।
ওয়াটারকিপারস বাংলাদেশ-এর সমন্বয়ক ও বাপা’র যুগ্মসম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, বিগত ৫/৬ বছরে হবিগঞ্জের মাধবপুর ও সদর উপজেলার বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেকগুলো শিল্পকারখানা। এসকল অপরিকল্পিত শিল্প-কারখানার বর্জ্যে স্থানীয় গ্রামসমূহে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করছে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় জনগণ পরিবেশগত এই সংকটের বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছে এবং স্থানীয়ভাবে তারা সোচ্ছার হচ্ছে। তিনি এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আন্দোলন আপনারা শুরু করেছেন, এটা আপনারা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এজন্য আমরা আপনাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করে যাবো।
বাপা সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম বলেন, হবিগঞ্জে শিল্পাঞ্চল গরে উঠছে ভালো কথা কিন্তু প্রশাসনের নজরদারী না থাকার কারনে শিল্পবর্জ্যে স্থানীয় মানুষের জীবন বিপন্ন । এখানকার বায়ু ও পানি দূষণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে । এখন থেকে তা নিয়ন্ত্রন করা না গেলে ভয়াবহ পরিনাম অপেক্ষা করছে । এলাকার মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে দূষণ হওয়ার আগে প্ররিরোধ গড়বেন না হওয়ার পরে আহাজারী করবেন
সমাবেশ থেকে তিনটি দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো- কৃষি জমি বিনষ্ট করে কোন ধরণের শিল্প কারখানার অনুমোদন দেয়া যাবে না, যে সকল শিল্প-কারখানা ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে এগুলোর ইটিপি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোন ভাবে চালু করা যাবে না এবং এসকল শিল্প-কারখানার তথ্য জানতে সরকারী কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পরিবেশবিদদের সমন্বয়ে নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত রাখতে হবে।
জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন স্থানীয় ছাতিয়াইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন মনু, বাজিউড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম বাবুল, বাপা’ হবিগঞ্জ শাখার সহসভাপতি অধ্যাপক আবেদুর রহমান ও যুগ্মসম্পাদক সিদ্দিকী হারুন, নয়াপাড়া ইউপি সদস্য তবিবুর রহমান তবু, স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষে মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুর ওয়াহেদ, মহিউজ জামান হারুন, শেখ মোঃ জাহাঙ্গীর, কোহিনুর ইসলাম, শামিমুর রহমান, হিরু মিয়া, শহীদুল ইসলাম বাবু, সোহানুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন শিল্পদূষণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় নাগরিক সংগঠক আব্দুল কাইয়ুম।