দুই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ঠেলাঠেলি ঢাকায় ৭০ সিলেটি যাত্রীর ভোগান্তি
কাইয়ুম উল্লাস :সিলেটের অপারেশন টাওয়ার থেকে ক্লিয়ারেন্স না দেওয়ায় ঢাকাস্থ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সিলেটি ৭০ জন যাত্রী আটকা পড়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত টানা চার ঘন্টা বিমানবন্দরে যাত্রীরা ভোগান্তিতে ছিলেন। তবু কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের তেমন খোঁজই নেয়নি বলে অভিযোগ ওঠেছে। এতে অনেক যাত্রীই ফ্লাইট বাতিল করে রাতে চলে যান। কেউ কেউ আজ নতুন ফ্লাইটে সিলেট আসবেন। আটকা পড়া যাত্রীদের মাঝে ৫ জন রোগীও ছিলেন।
কয়েকজন যাত্রী জানান, দুপুর ২ টায় ছিল বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের বিজি ৬০১ বিমানের ফ্লাইট। বিমানটি সিলেটের উদ্দেশ্যে আসার কথা। কিন্তু যাত্রীদের কিছু না বলেই প্রথমে বিমান ছাড়ার সময় পরিবর্তন করে আড়াইটায় পেছানো হয়। যখন আড়াইটা বাজে, তখন বলা হয় আরও আধঘন্টা। এভাবে কোনো নোটিশ ছাড়াই আধঘন্টার কথা বলে ফ্লাইট নির্ধারণ করা হয় নির্ধারণ করা হয় বিকেল ৪ টা। ওই বিমানে সিলেটের ৭০ জন যাত্রী ছিলেন। ৫/৬ জন যাত্রী লন্ডন-কানাডা থেকে আসছিলেন। এর মধ্যে রোগীও ছিলেন তিন জন । বাকি যাত্রীরা ঢাকা থেকে সিলেটে আসার জন্য অপেক্ষমাণ ছিলেন।
আটকা পড়া যাত্রী সাপ্তাহিক হলি সিলেট সম্পাদক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, তারা সেই দুপুর থেকে চরম দুর্ভোগে বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্ত এই আধঘন্টা পর বিমান ছড়ার কথা বলে এভাবে বিকেল চারটা পর্যন্ত যাত্রীদের আটকিয়ে রাখা হয়। যখন চারটা বাজে, তখন সব যাত্রীরা বিমানে ওঠেন। কিন্তু তখন যাত্রীদের জানানো হয়, যান্ত্রিক ত্রুটি থাকায় বিমান ছাড়তে বিলম্ব হবে। যাত্রীরা এসময় বিমানের ভেতর চরম ভোগান্তিতে পড়েন। যাত্রীরা কোনো খাবার পাননি। উল্টো কর্মকর্তারা অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন।
বিমানে আটকা পড়া ফটো সাংবাদিক শাহেদ আহমদ জানান, রোগী যাত্রীও বিমানে ছিলেন। যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহালেও ঠিক কী কারণে বিমানটি আটকা পড়েছে তা ব্যাখ্যা করেননি কর্তৃপক্ষ। এতে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে না খেয়ে দুর্ভোগ পোহান যাত্রীরা। যখন জানানো হল, তখন সন্ধ্যা। এতে যাত্রীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। অনেক যাত্রী বাগবিত-া করে ফ্লাইট বাতিল করে বিকল্পভাবে চলে গেছেন। আর কিছু যাত্রীদের একটি হোটেলে রাখা হয়েছে, ভোরে তাদের সিলেট পৌঁছে দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, লন্ডন থেকে একটি বিমান সিলেট আসার কথা ছিল। একই সঙ্গে বিজি ৬০১ সিলেট আসার কথা। কিন্তু ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অপারেশন টাওয়ার একই সঙ্গে দুটো বিমান নামতে দিতে রাজি হয়নি। যে কারণে, দুর্ভোগে পড়েন সিলেটের যাত্রীরা।
বিমানবন্দর সূত্র আরও জানায়, গতকাল বিমান না ছাড়ার কারণে দিনভর দুর্ভোগে পড়া যাত্রীরা সন্ধ্যার পর বিক্ষোভ করেন। এসময় অনেক যাত্রীরা বিমান থেকে নামতে রাজি হননি। পরে তাদের স্টেশন ম্যানেজার সাকি রেজওয়ানা অনুরোধ করে বিমান থেকে নামান।
বিমানযাত্রী সিলেটের ছাত্রদল নেতা মাহবুবুল হক চৌধুরী জানান, ওই বিমানে একজন কবিও ছিলেন, তিনি কবি আসাদ চৌধুরী। সবাই দুর্ভোগ পোহালেও কর্তৃপক্ষ সন্তোষজনক কোনো আচরণ করেননি। উল্টো তথ্য গোপন করে সীমাহীন ভোগান্তিতে ফেলেছেন।
জানতে চাইলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্টেশন ম্যানেজার সাকি রেজওয়ানা বলেন, সিলেটের অপারেশন টাওয়ার থেকে বিমান ছাড়ার ক্লিয়ারেন্স দিচ্ছিল না। তাই যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। এটা ঠিক তাদের ঠিক মতো খাবার দিতে পারিনি। কিন্তু তার পরও আমরা বিমানের স্টাফদের খাবার থেকে বিকেলে যাত্রীদের হাতে খাবার বক্স দিয়েছি। যখন বলা হল, ফ্লাইট যাবেই না, যাত্রীদের নামতে হবে, তখন সামান্য হট্টগোল করেছেন যাত্রীরা। এতে কেউ কেউ রাগ করে চলেও গেছেন। (আজ) ভোর ৪ টায় একটি ফ্লাইট আছে। যারা যেতে রাজি হয়েছেন, তাদের বিমানের হোটলে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।