বাহুবলের ৪ শিশুর স্মরণে নির্মিত হচ্ছে শ্রেণিকক্ষ ও পাঠাগার
ডেস্ক রিপোর্টঃ হবিগঞ্জের বাহুবলে সুন্দ্রাটিকি গ্রামে খুন হওয়া শিশুদের স্মরণে স্থানীয় স্কুলে নির্মাণ করা হচ্ছে শ্রেণিকক্ষ ও পাঠাগার। সেই সঙ্গে সরকারি খরছে নিহতদের পরিবারকে নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে ঘর।
এদিকে নিহতদের বাবা মা সরকারের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও ভুলতে পারছেন না সন্তান হারানোর কষ্ট। তবে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করার স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তারা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, নিহত ৪ শিশুর স্মরণে ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি ভবন নির্মাণ করা হবে। ওই ভবনে একটি ক্লাসরুম ও একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হবে। সংরক্ষিত মহিলা এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী ওই লাইব্রেরির বই কেনার জন্য অনুদান দেবেন। লাইব্রেরিতে কম্পিউটার ও প্রয়োজনীয় ফার্নিচারও থাকবে।
তিনি আরো বলেন, নিহত ৪ শিশুর পরিবারের সদস্যদের সরকারি খরচে ৪টি ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক কবির বিন আনোয়ার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, জাতীয় সংসদে আমি এ দাবি জানিয়েছিলাম। পাশাপাশি একটি ডিও লেটারও দিয়েছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে একটি প্রকল্প তৈরি করে দ্রুত প্রেরণের নির্দেশ দেন। এছাড়া আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল ৫০ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলেছেন। আশাকরি রোববার ওই টাকা পেয়ে যাব। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মোট ৫টি সেলাই মেশিন দেয়া হয়েছে। ৪টি নিহত চার শিশুর পরিবারকে দেয়া হবে। আরেকটি তাদেরই এক চাচাতো বোনকে দেয়া হবে। অচিরেই এগুলো তাদের বুঝিয়ে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে নিহত শুভ’র বাবা আব্দুল ওয়াহিদ জানান, আমাদের সন্তান চলে গেছে। তাদেরকে কেউতো ফিরিয়ে দিতে পারবে না। আমরা টাকা-পয়সা চাই না। শুধু সন্তান হত্যার বিচার চাই। খুনিরা দ্রুত গ্রেফতার হয়েছে, ইতোমধ্যেই নিজের মুখে স্বীকারও করেছে। এখন তাদের ফাঁসি দেখতে চাই আমরা। তবে সরকারের এ উদ্যোগে আমরা খুশি।
এদিকে ৪ শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত বশির মিয়াকে ৫ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. কাউছার আলমের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি বশির মিয়াকে ৫ দিন ও হাবিবুর রহমান আরজুকে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন জুসিডিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহাম্মদ খোন্দকার। এর মাঝে রিমান্ডের দু’দিনের মাথায়ই বুধবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেয় আরজু। এখনও পর্যন্ত পুলিশ রিমান্ডে রয়েছে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা আব্দুল আলী বাগাল, সালেহ উদ্দিন আহমেদ ও সাহেদ আলী।
এর আগে ১২ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হয় সুন্দ্রাটিকি গ্রামের মো. ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), তার দুই চাচাতো ভাই আব্দুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০) ও আবদাল মিয়ার ছেলে মনির মিয়া (৭) এবং তাদের আত্মীয় আবদুল কাদিরের ছেলে ইসমাঈল হোসেন (১০)।
এরপরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়রি করেন জাকারিয়া শুভর বাবা ওয়াহিদ মিয়া। ১৬ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন নিহত মনির মিয়ার বাবা আব্দাল মিয়া। ১৭ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) বাড়ির পার্শ্ববর্তী ইছাবিল নামক স্থান থেকে ওই চার শিশুর মাটিচাপা দেয়া লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওইদিনই পুলিশ গ্রেফতার আব্দুল আলী বাগাল ও তার ছেলে জুয়েল মিয়াকে। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় আরও ৫ জনকে। এখনও পর্যন্ত উক্ত মামলায় গ্রেফতার হয় মোট ৭ জন। এরমধ্যে ৩ জন রিমান্ডে এবং ৪ জন কারাগারে রয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আব্দুল আলী বাগালের ২ ছেলেসহ ৩ জন উক্ত ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ইতিমধ্যে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।