গ্যারেজ নয়, আলীর লেবু বাগানে হত্যা করা হয় ৪ শিশুকে
ডেস্ক রিপোর্টঃ হবিগঞ্জের বাহুবলে চার শিশুকে সিএনজি অটোরিকশা চালক বাচ্চুর গাড়ির গ্যারেজে নয়, হত্যা করা হয়েছে আব্দুল আলী বাগালের মালিকানাধীন লেবু বাগানে। সেখানেই দুইদিন লাশ রাখা হয়েছিল। লাশ মাটি চাপা দেয়া হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি। আব্দুল আলীর মোট ৩টি লেবু বাগান রয়েছে। হত্যা করা হয় উত্তরের লেবু বাগানে। যেখানে স্থানীয় শিমুলতলা ছড়া দিয়ে যেতে হয়।
পুলিশের তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। আর হত্যাকান্ডের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জড়িত ছিল ৯ জন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্রটি আরও জানায়, আব্দুল আলী বাগালের ৩টি লেবু বাগানের মাঝে দু’টি বাগান তল্লাসী করা হয়েছে। সেগুলোতে তেমন কোন তথ্য মেলেনি। এখন বাকি রয়েছে শুধু উত্তরের লেবু বাগান। ধারণা করা হচ্ছে সেটিতেই তাদেরকে হত্যা এবং হত্যার পর দু’দিন লাশ রাখা হয়েছিল।
এদিকে বুধবার বিকেল ৩টায় হত্যাকান্ডের বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে ৭ দিনের রিমান্ডে থাকা আসামী হাবিবুর রহমান আরজু। তার বক্তব্যে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. কাউছার আলমের আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত জবানবন্দি গ্রহণ চলে। এ নিয়ে উক্ত ঘটনায় মোট ৩ জন আসামী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এর আগে শুক্রবার আব্দুল আলী বাগালের ছেলে রুবেল মিয়া ও রোববার জুয়েল মিয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
অপরদিকে এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশের গাফিলতির অভিযোগের তদন্তের জন্য আরও ৫ দিন সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে তদন্ত দলের প্রধান সমন্বয়কারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম জানান, আব্দুল আলী বাগালের সেকেন্ড ইন কমান্ড হাবিবুর রহমান আরজু। সে আলীর সব নির্দেশ পালন করতো। উক্ত ঘটনার সাথে মূল নায়ক আব্দুল আলীসহ ৮/৯ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এখনও পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যায়নি। শিশুদের হত্যার পর দু’দিন কোথায় লাশ রাখা হয়েছিল তা জানার চেষ্টা চলছে। পুলিশের গাফিলতির অভিযোগের তদন্ত কমিটির সমন্বয়কারীও তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার জন্য আরও ৫ দিন সময় বাড়ানো হয়েছে। আগামী রোববার তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হবে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বুধবার বেলা ২টায় জবানবন্দি গ্রহণের জন্য কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে আনা হয় আব্দুল আলী বাগালের অন্যতম সহযোগি হাবিবুর রহমান আরজুকে। এর পর তাকে রাখা হয় কোর্ট পরিদর্শকের কক্ষে। বিকেল ৩টায় তাকে নেয়া হয় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. কাউছার আলমের খাসকামরায়। দুই ঘন্টাব্যাপী চলে জবানবন্দি গ্রহণ। পরে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এ সময় আদালত চত্ত্বরে তাকে দেখতে বিপুল সংখ্যক উৎসুক জনতা ভির করে।
১২ ফেব্রুয়ারি বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের মো. ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), তার দুই চাচাতো ভাই আব্দুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০) ও আবদাল মিয়ার ছেলে মনির মিয়া (৭) এবং তাদের আত্মীয় আবদুল কাদিরের ছেলে ইসমাঈল হোসেন (১০) অপহরণ হয়। ১৩ ফেব্রুয়ারী (শনিবার) এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়রি করেন জাকারিয়া শুভর বাবা ওয়াহিদ মিয়া। ১৬ ফেব্রুয়ারী (মঙ্গলবার) থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন নিহত মনির মিয়ার বাবা আব্দাল মিয়া। তখনও পর্যন্ত বিষয়টি তেমন গায়ে মাখেনি বাহুবল থানা পুলিশ। তারা যদিও শিশুদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে খোঁজেছে। আবার তাদেরকে এও বলেছে, তজবিহ পড়তে, মাজারে, মেলায় খোজতে। আর ১৭ ফেব্রুয়ারী (বুধবার) বাড়ির পার্শ্ববর্তী ইছাবিল নামক স্থান থেকে তাদের মাটিচাপা দেয়া লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পর থেকে বিষয়টি দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
বুধবার সকালে আব্দুল আলী বাগালের দু’টি লেবু বাগানে সরেজমিন গিয়ে জানা গেল চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য, তার রয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। স্থানীয় লোকজন তার বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ তুলে ধরেন। গরু চুরি থেকে শুরু করে, নিরিহ মানুষের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর, চা শ্রমিকদের মারধর, এলাকায় ত্রাস সৃষ্টিসহ এমন কোন অপরাধ নেই যা সে করেনি। এসব নিরহ মানুষ এখনও ভয় পান তাকে ও তার পরিবারকে। তারা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এ দুর্ধর্ষ বাগালসহ তার সাঙ্গপাঙ্গদের ফাঁসি দাবি করেন।