বাহুবলের ৪ শিশু অপরহরণ ও হত্যার গোমড় ফাস! : অটোরিকশায় অজ্ঞান করে গলাটিপে হত্যা
ডেস্ক রিপোর্টঃ পূর্ব বিরোধের জের ধরেই হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের চার শিশুকে অপরহরণ ও হত্যা করা হয়েছে। আর এ ঘটনার অন্যতম হোতা হচ্ছে আব্দুল আলী। তার নেতৃত্বেই চার শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে বালি চাপা দেওয়া হয়েছে। আলীর ছেলেরাসহ ৬ জন অংশ নেয় হত্যাকান্ডে। এই ছয়জন মিলে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে চার শিশুকে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি শিশুদের বাড়ি পৌছে দেওয়ার কথা বলে অপহরণ করা হয়। তারপর একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে নিয়ে যাওয়া হয় পাশ্ববর্তী এক গ্যারেজে। সেখানেই চেতনানাশক দ্রব্য প্রয়োগে অজ্ঞান করে রাতে চারজনকে শ্বাসরোধ ও বুকে আঘাত করে হত্যা করা হয়। ওই রাতেই হত্যাকারীরা মরদেহ গ্রামের পাশের একটি হাওরে বালুর গর্তে লাশ চাপা দিয়ে রাখে।’
আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ৪ শিশু হত্যার এমন রোহমর্ষক দিয়েছে রুবেল মিয়া (১৭)। রুবেল আব্দুল আলীরই ছেলে। যে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। শুক্রবার বিকেল ৫টা ১০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত আদালতে জবানবন্দি দেয় রুবেল।
হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহম্মদ খন্দকারের আদালতে এ জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। জবানবন্দি শেষে রুবেল মিয়া ও বাকি দুই আসামি কারাগারে পাঠান বিচারক।
হত্যাকান্ডে জড়িত ৬ জনের মধ্যে- বাহুবলের সুন্দ্রাথিকি গ্রামে আব্দুল আলী ওরফে বাগলের ছেলে রুবেল মিয়া (১৭), আরজু মিয়া (২০) ও সিএনজি অটোরিকশা চালক বাচ্চু মিয়ার (২৫) নাম প্রকাশ করেছে পুলিশ। রাত সোয়া ৮টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান এসপি জয়দেব কুমার ভদ্র।
তিনি জানান, এক মাস আগে এ হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করে ঘাতকরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদেরকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
সুন্দ্রাটিকি গ্রামের গ্রাম পঞ্চায়েত আব্দুল আলী ওরফে বাগল মিয়ার সঙ্গে নিহত শিশুদের অভিভাবকদের পক্ষের পঞ্চায়েত খালেক মিয়ার দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। মাসখানেক আগে গ্রামের একটি বড়ইগাছ কাটাকে কেন্দ্র করে বাগল মিয়ার সঙ্গে খালেক মিয়ার আবারও দ্বন্দ্ব হয়। এর পর থেকেই ৪ শিশুকে হত্যার পরিকল্পনা নেয় পঞ্চায়েত আব্দুল আলী ওরফে বাগল মিয়া।
এসপি জয়দেব ভদ্র আরো জানান- হত্যাকান্ডে জড়িত অভিযোগে বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রুবেলের সঙ্গে আটক আরজু ও বশিরকে শুক্রবার সন্ধ্যায় আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করলে বন্ধের দিন থাকায় বিচারক শুনানি নেননি। বিচারক সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) শুনানির দিন ধার্য করেন।
পুলিশের বিরুদ্ধে উঠা গাফিলতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন- বিষয়টি তদন্ত করা দেখা হচ্ছে। কোন সদস্যের অবহেলার দায় সমগ্র পুলিশ বিভাগ নিতে পারে না। এজন্য কেউ দায়ী হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদুল আলম, সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) মাসুদুর রহমান মনির, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তাদির আলম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের সুন্দ্রাটিকি গ্রামের মো. ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), তার চাচাত ভাই আব্দুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০) ও আবদাল মিয়ার ছেলে মনির মিয়া (৭) এবং তাদের প্রতিবেশী আব্দুল কাদিরের ছেলে ইসমাঈল হোসেন (১০)। গত বুধবার সকালে বালুচাপা অবস্থায় তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এই ঘটনায় বুধবারই দুই আসামী আব্দুল আলী ও তার ছেলে জুয়েল আহমদকে আটক করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।