একটি বরই গাছের জন্য প্রাণ গেলো চার শিশুর!

17087ডেস্ক রিপোর্টঃ বাড়ির পাশে একটি বরই গাছ। মাস দেড়েক আগে এই বরই গাছের ডাল ছাটাই করেন কাজল মিয়া। এতে বাঁধা দেন তার চাচা রইছউল্লাহ। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এই বিরোধ মীমাংসা করতে আসেন প্রতিবেশী আব্দুল আলী। যিনি কাজল মিয়াদের ভিন্ন পঞ্চায়েতের লোক।
ফলে আব্দুল আলীর ফায়সালা মেনে নেন নি কাজল মিয়া। এ ঘটনার জের ধরে স্থানীয় বাজারে কাজল মিয়ার উপর হামলা করে আব্দুল আলীর লোকজন। এরপর দু’পক্ষ সংঘর্ষেও জড়ায়। মাসখানেক পূর্বে এই সংঘর্ষের শালিস হয়। এতে আব্দুল আলীর পক্ষ দোষী সাব্যস্ত হন। সালিশ বৈঠকেই দেখে নেওয়ার হুমকি দেন আব্দুল আলী।
সেই ক্ষোভ থেকেই আব্দুল আলী ও তার ছেলেরা বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি গ্রামের চার শিশুকে হত্যা করে বলে অভিযোগ কাজল মিয়ার চাচাতো ভাই ওয়াহিদুর রহমানের। তিনি খুন হওয়া শিশু জাকারিয়া শুভর পিতা।
নিহত আরেক শিশু তাজেল মিয়ার ভাই তারেক মিয়া বলেন, বরই গাছের একটি ডাল কাটাকে কেন্দ্র করে আব্দুল আলীর পরিবারের সাথে আমাদের বিরোধ বাঁধে। নিয়ে সংঘর্ষ ও শালিস হয়। সালিশে আব্দুল আলী হুমকি দিয়েছিলেন- ‘জীবনে অনেক পাপ করেছি, আরেকটি পাপ করে তওবা করে নেবো।’
বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জের বাহুবলের সুন্দ্রটিকি গ্রামে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, দুই পঞ্চায়েতের বিরোধ থেকেই চার শিশুকে হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী। হত্যার সাথে আব্দুল আলী ও তার ছেলেদের অভিযুক্ত করছেন তারা।
একই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আলীর পাঁচ ছেলে। বিলাল, জয়নাল, ফেরদৌস, জুয়েল ও রুবেল। এদের মধ্যে আব্দুল আলী ও জুয়েলকে বুধবার গ্রেফতার করে বৃহস্পতিবার ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ। এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে আব্দুল আলীর বাড়িতে গিয়ে কোনো পুরুষ সদস্যকে বাড়িতে পাওয়া যায় নি।
আব্দুল আলীর পুত্রবধূ তফিনা খানম জানান, তাদের পরিবার নির্দোষ। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে তার শশুড়, স্বামী এবং দেবররা জড়িত নন। গ্রাম্য বিরোধ থেকে তাদের ফাঁসানো হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন আব্দুল আলী, জুয়েল ছাড়াও তার আরেক দেবর রুবেলকে আটক করেছে পুলিশ। তবে পুলিশ রুবেলকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করেনি।
বৃহস্পতিবার দিনভর জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ভিড় ছিলো নিহত শিশুদের বাড়িতে। সকলেই খুনিদের গ্রেফতার ও দ্রুত বিচার সম্পন্নের আশ্বাস দিয়েছেন।
শোকের মাতম : তাজেল নেই। তার বই-খাতাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিছানা জুড়ে। এই বইগুলোই হারানো পুত্রের স্মৃতি হয়ে আছে পুত্রহারা মা আমেনা বেগমের কাছে। বইগুলো জড়িয়ে ধরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি।
নিহত মনির মিয়ার দাদী করমজান বিবি বিলাপ করে বলেন, যারা মাছুম বাচ্চাদের হত্যা করতে পারে তারা মানুষ নয়। তাদের উপর আল্লাহর গজব পড়বে।
নিহত চার শিশুর তিনজনই একই বাড়ির। পরস্পরের চাচাতো ভাই। এই বাড়িটির কান্না থামছে না কিছুতেই। প্রতিবেশীরা সান্ত্বনা দিতে এসেও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। পুরো সুন্দ্রাটিকি গ্রামজুড়েই এখন শোকের ছায়া। গ্রামজুড়ে বিলাপের সুর। শোকের পাশাপাশি রয়েছে ক্ষোভও। এমন নৃশংস ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করেছেন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
সহযোগিতা চাইলো পুলিশ : বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত শিশুদের বাড়িতে যান সিলেটের অতিরিক্ত ডিআইজি ড. আক্কাস উদ্দিন। তিনি বলেন, কেবল পুলিশের সমালোচনা না করে সকলে সহযোগিতা করলে আসামীদের গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি করা সহজ হবে। বিকেলে নিহতদের বাড়িতে ডিআইজি মিজানুর রহমান খানও সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার খেলতে গিয়ে বাড়ির পাশের মাঠ থেকে নিখোঁজ হয়েছিলো জাকারিয়া শুভ, মনির মিয়া, তাজেল মিয়া ও ইসমাইল মিয়া। শনিবার নিখোঁজের ঘটনায় বাহুবল থানায় জিডি করেন শিশু শুভ’র পিতা ওয়াহিদু রহমান। গত বুধবার সকালে বাড়ির পাশের একটি হাওর থেকে বালুচাপা অবস্থায় এই চার শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়।
বৃহস্পতিবার নিহতদের বাড়িতে এসে স্থানীয় নারী সাংসদ আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, শিশু রজন ও রাকিবের মতো এই চার শিশু হত্যার বিচারও দ্রুততম সময়ের মধ্যে করা হবে।