কালোবাজারিদের হাতে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ভিআইপি কোটার টিকিট
কাইয়ুম উল্লাসঃ শুধু সাধারণ টিকিটই নয়, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ভিআইপি কোটার টিকিটও এখন মিলছে কালোবাজারে। আর এই টিকিট যাচ্ছে রেলওয়ে ম্যানেজারের ডায়েরি হয়ে। কালোবাজারিদের কাছ থেকে টিকিট কিনে সাধারণ যাত্রীরাই ভিআইপি সেজে ওঠে পড়েন ভিআইপি ক্যাবিনে। অথচ খাতায় লিখে রাখা হচ্ছে রেল ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম। এমনকি তদবিরবাজ নেতা-পাতি নেতাদের নাম। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে টিকিট নিয়ে এসব অনিয়মের নানা চিত্র।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশন সূত্র জানায়, ভিআইপি ডায়েরী বজায় রেখে ম্যানেজার আবদুর রাজ্জাক কালোবাজারিদের সাথে যোগসূত্র করে মাসে ভাগ পান এক লাখ টাকা।
সরেজমিনে দেখা গেল, রেলওয়ে ম্যানেজার রাজ্জাক তার রুমে থাকেন না। তিনি সারাক্ষণ একটি ডায়েরী নিয়ে প্ল্যাটফরমে ঘুরতে থাকেন। কালোবাজারির নিযুক্ত লোকেরা তার কাছে গেলেই তিনি ভিআইপি যেকোনো একটি নাম লিখে তার কাছে ক্যাবিন বিক্রি করে দিচ্ছেন। আর ডায়েরীতে লিখে দিচ্ছেন নিজের রেলের কর্মকর্তাদের নাম, আরও নানা প্রতিষ্ঠান, নেতা-পাতি নেতাদের নাম। গত শনিবার (৩০ জানুয়ারি) ম্যানেজারের ওই ডায়েরীতে দেখা যায়, ভিআইপি ক্যাবিন বুক দিয়েছেন রেলের এফ এন্ড সিএও, ডিআরএম, জিআরপি পুলিশের এক এটিএসআই, শ্রমিক লীগের নেতা মতিন ভূইয়া, ছাত্রলীগ নেতা সাজু। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, রেলের কোনো কর্মকর্তা বা তাদের স্¦জনরা ওই টিকিটে ট্রেনের ভিআইপি ক্যাবিন চড়েননি। এমনকি মতিন ভূইয়া, সাজু নামেরও কেউ ওই টিকিট ব্যবহার করেনি। সাধারণ যাত্রীরা ভিআইপি ক্যাবিনে চড়েছেন। এখানে জিআরপির টিকিটটি অলি নামের একজন এডভোকেট ব্যবহার করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেল, সিলেটে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিদের একটি চক্র আছে। এই চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে মতিন ভূইয়া নামের এক রেলওয়ে শ্রমিক নেতা। সঙ্গে আছে কিছু ছাত্রলীগ নামধারী পাতি নেতা। এরাই কালোবাজারিদের সঙ্গে স্টেশন মাস্টার ও ম্যানেজারের একটি সুসম্পর্ক করে দিয়েছে। সে অনুযায়ী, স্টেশনের ভেতরে র্যাবের হাতে অনেকবার আটক কালোবাজারি কবির, আর বাইরে যমুনা মার্কেটে ওয়ান মিডিয়ার কর্মীরা টিকিট কালোবাজারে বিক্রি করছে। টিকিট কালোবাজারি হিসেবে তাহের, হানিফ ও মনিরের নামও পাওয়া গেছে। এরা ওয়ান মিডিয়ার নিযুক্ত ম্যানেজারের কাছের মানুষ। যমুনা মার্কেটের রুমান নামের একজনের হাত হয়ে এদের হাতে কালোবাজারের টিকিট পৌঁছে।
কয়েকজন কালোবাজারির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, একটি ভিআইপি ক্যাবিন বেচে তারা লাভ করেন দুই থেকে তিন হাজার টাকা। একেকটি ট্রেনে ১০ টা ক্যাবিন থাকে। প্রতিদিন ক্যাবিন থেকে ম্যানেজার পান ৩ হাজার। এতে তার মাসোহারা এক লাখ টাকা। এই টাকা পরে ভাগ হয় স্টেশন মাস্টার, কম্পিউটার রুমের জসিম, নিজাম, বুকিং রুমের জহর লাল ও খালেদের সঙ্গে।
কম্পিউটার রুমের অনিয়ম : ম্যানেজারের ইশারায় চলে স্টেশনের কম্পিউটার রুম। ম্যানেজার এসে বসে থাকেন কম্পিউটার রুমে। কাউন্টারে যাত্রীরা ট্রেনের টিকিট পান না। যখন কালোবাজারিরা যোগাযোগ করে, তখন ম্যানেজার ইশারা দেন ক¤িপউটার অপারেটরকে কাউন্টারে টিকিট ছাড়ার জন্য। তখন কালোবাজারিরা যাত্রী সেজে এসে কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়ে যায়। শুধু তাই-ই নয়, এখানে বসে চলন্ত ট্রেনের টিকিট বিক্রিও করা হয়ে থাকে। যে কারণে সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। আর পকেট ভারি হচ্ছে কালোবাজারি চক্রের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্টেশন ম্যানেজার মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন,‘ এখানে কোন কালোবাজারি হয় না। ট্রেনের আরও বগি দরকার। বগি হলে টিকিট সমস্যা থাকবে না।’ তার কাছে ডায়েরীতে লেখা কর্মকর্তাদের ট্রেনে না যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘ স্যার ফোনে ক্যানসেল করে দিসেন, পরে ওই ক্যাবিন আমাদের মতিন ভূইয়া নিয়ে গেছেন।’