বাংলাদেশের ৪ সন্ত্রাসীকে খুঁজছে ভারতের পুলিশ
ডেস্ক রিপোর্টঃ ‘বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের’ ৪ সদস্যকে খুঁজছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল তাদের ধরতে অভিযান চালানো হয়। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ২৩ থেকে ২৬শে জানুয়ারির মধ্যে তারা আত্মঘাতী বোমা হামলা চালাতে পারে। বার্তা সংস্থা পিটিআইএ-এর বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে দ্য স্টেটসম্যান। খবরে বলা হয়
, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো’র (আইবি) তথ্যের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দারা চার ব্যক্তিকে খুঁজছে। বলা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশভিত্তিক একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য। কলকাতা পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, তাদের দুজনকে ধরতে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতের কয়েকটি স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, বিগত কয়েকদিন ধরে তারা সেখানে আত্মগোপন করে ছিল। তিনি আরও জানান, বারাসাতে আত্মগোপনে থাকা দুই ব্যক্তির নাম আনিসুর রেহমান ও মোহাম্মদ আনসারি। অপর দুইজন মালদা জেলার কোনো একটি স্থানে লুকিয়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, গতকাল আনসারি ও আনিসুরকে ধরতে অভিযান চালানো হয়। এতে তাদের খোঁজ না মিললে রাজ্যের অন্যান্য স্থানে অভিযান শুরু হয়েছে। স্টেটসম্যানের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ১৮ই জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গসহ সকল রাজ্যকে একটি সতর্কবার্তা পাঠায়। এতে সতর্ক করা হয়- বাংলাদেশভিত্তিক গ্রুপ হিজবুত তাহরির ভারতের ২৩টি ভিন্ন স্থানে হামলা চালাতে পারে। ওই সতর্কবার্তা উদ্ধৃত করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রুপটি ২৬শে জানুয়ারির মধ্যে এ সপ্তাহের কোনো একটি সময়ে বোমা ও আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করছে। সতর্কবার্তার আলোকে- কালিঘাট মন্দির, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালসহ সকল রেলস্টেশন, হাওড়া ব্রিজ, জুবিলি ব্রিজ ও দক্ষিনেশ্বর মন্দিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে, ঘোজাডাঙা সীমান্ত দিয়ে গত সপ্তাহের কোনো এক সময়ে ভারতে প্রবেশ করে আনিসুর ও আনসারি।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশভিত্তিক এক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সম্ভাব্য হামলা পরিকল্পনা নিয়ে গোয়েন্দা তথ্য আসার পর উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে মহারাষ্ট্র ও গুজরাট।
ওদিকে, হিন্দুস্থান টাইমসের অপর এক রিপোর্টে, পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাসী ঝুঁকির প্রসঙ্গে এসেছে জেএমবি (জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) ও আইএসের যোগসূত্রের কথা। বলা হয়েছে, আইএসের সঙ্গে জেএমবি’র যোগসূত্র থেকে ভারতে উগ্রপন্থার যে ঝুঁকি রয়েছে তা মোকাবিলা করা শুরু করেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম রাজ্যে সম্ভাব্য হামলার উদ্বেগ রয়েছে বলে মনে করছে দেশটির নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। বাংলাদেশে কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলায় আইএসের দায় স্বীকারের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, বিভিন্ন রিপোর্টে ইঙ্গিত মিলছে তারা জেএমবির ক্যাডারদের সঙ্গে কাজ করছে। জেএমবি সদস্যরাই ২০১৪ সালের অক্টোবরে বর্ধমান বিস্ফোরণে দায়ী। জেএমবি ক্যাডাররা আইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদীর তথাকথিত ‘খিলাফতে’ আনুগত্য প্রদর্শন করেছে- এমন খবর এসেছে। বর্ধমান বিস্ফোরণের তদন্তে উঠে আসে দলটির ক্যাডাররা সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে অনুপ্রবেশ করেছে। এরপর জেএমবি নিয়ে উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে কর্তৃপক্ষ। তদন্ত চলাকালীন নিরাপত্তা সংস্থাগুলো পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ঝাড়খণ্ড থেকে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। গত বছরে বাংলাদেশে কমপক্ষে ১০টি আইএস হামলা হয়েছে। ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এখন পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে সম্ভাব্য হামলা নিয়ে উদ্বেগ পোষণ করছে। হিন্দুস্থান টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভারতে পাকড়াও হওয়া সন্ত্রাসী মডিউলগুলোর অর্থায়ন পশ্চিম এশিয়া থেকে আসতো বলে তথ্যপ্রমাণে উঠে এসেছে। আর অর্থায়ন হতো হুন্ডির মাধ্যমে। শনিবার রাতে মহারাষ্ট্রের আওরংবাদ থেকে আরও এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হওয়ার পর আইএস সংশ্লিষ্টতা সন্দেহে আটক মোট ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬। সরকারের শীর্ষ সূত্রের বরাতে বলা হয়, আইএসের ভারতীয় অংশের নামকরণ করা হয় জুন্দাল খলিফা (খিলাফতের সেনাবাহিনী)। আর এ নামকরণ করেন তথাকথিত আমিরে হিন্দ মুদাব্বির শেখ। তিনি ভারতের থানে জেলার মুম্ব্রা শহর নিবাসী। মুদাব্বির শেখ থানে পলিটেকনিক থেকে পড়াশোনা করা একজন প্রশিক্ষিত ওয়েব ডিজাইনার। গত দু’বছরে ইন্টারনেটে তিনি উগ্রপন্থায় প্রভাবিত হন। নিরাপত্তা বাহিনী তার ওপর নজর রাখছে। অতীতে ওয়াদাত-ই-ইসলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার পাশাপাশি মুদাব্বির শেখ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইন্ডিয়ান মুজাহিদীনের (আইএম) সাবেক সদস্য কর্ণাটকের মোহাম্মদ শাফি আরমারের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখেন। আরমার ও কয়েকজন সাবেক আইএম সন্ত্রাসী বর্তমানে সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের সঙ্গে লড়াই করছে। গত মে মাসে রতনম মডিউলকে ধরার পর ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো তাদের নজরদারিতে রেখেছে শতাধিক আইএস সমর্থককে। পশ্চিম এশিয়া থেকে আসা যোগাযোগ বার্তায় আড়িপাতা তথ্য থেকে ইঙ্গিত মেলে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি আসন্ন। এরপর তারা হরদ্বার ও শেখ মডিউলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়। সিনিয়র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিস্ফোরক ছাড়াও টাইমার, সার্কিট বোর্ড ও অর্থ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ আদান-প্রদানের তথ্যপ্রমাণ মেলে। ওই অর্থ ছিল অস্ত্র আর বিস্ফোরক কেনার জন্য।’(মানবজমিন)