সিলেটে খুন হওয়া ছাত্রলীগ কর্মী হাবিবের লাশ পৌঁছলো বাড়িতে : গ্রেফতার নেই
ডেস্ক রিপোর্টঃ গ্রুপিংয়ের জের ধরে সিলেটে খুন হওয়া ছাত্রলীগ কর্মী কাজী হাবিবুর রহমান হাবিবের লাশ তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার ব্রাক্ষ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের রাণীঘাট গ্রামে পৌঁছেছে। বুধবার বিকাল ৫টার দিকে স্বজনরা তার লাশসহ বাড়িতে পৌঁছেন।
এর আগে বুধবার বেলা সোয়া ১টার দিকে ভাই কাজী জাকিরসহ অন্য স্বজনরা কাজী হাবিবের লাশ নিয়ে সিলেট থেকে রওয়ানা দেন। এরও আগে বুধবার সকালে কাজী হাবিবের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
প্রসঙ্গত, গ্রুপিংয়ের জের ধরে মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ ৪র্থ বর্ষের ছাত্র কাজী হাবিবকে বেধড়ক পেটায় নগরীর শামীমাবাদ এলাকার ছাত্রলীগ নেতা হুসাইন আহমদ সাগরের অনুসারী নেতাকর্মীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় কাজী হাবিবকে প্রথমে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে তাকে মাউন্ট অ্যাডোরা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে রাতে হাবিবের মৃত্যু হয়।
কাজী হাবিব খুনের ঘটনায় তার ভাই কাজী জাকির হোসেন বাদি হয়ে সাগরসহ ১১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। তবে এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ওসি সোহেল আহমদ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি অনুসারে খুনিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদেরকে আটকের জন্য অভিযান চলছে।
এদিকে, এ ঘটনার সূত্র ধরে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি দু’দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, আজ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।
নিহতের বড় ভাই কাজী বাদল জানিয়েছেন, বুধবার ময়না তদন্ত সম্পন্নের পর হাবীবের লাশ দাফনের জন্য গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন। নিহত হাবীব কুমিল্লার ব্রাক্ষণপাড়া উপজেলার রাণীগঞ্জ গ্রামের কাজী সিদ্দিকুর রহমানের পুত্র।
সিলেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর মুহিব ইবনে সিরাজ জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় দু’দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রলীগ কর্মী কাজী হাবিব নিজ দলের প্রতিপক্ষ গ্রুপের হামলায় গুরুতর আহত হন। রাতে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু কোলে ঢলে পড়েন তিনি।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সফরে আসার একদিন আগে এ ঘটনা ঘটলো।
হাবীব সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ ৪র্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে এগারোটায় নগরীর শামীমাবাদে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাঠে ছাত্রলীগ ক্যাডার হোসাইন আহমদ সাগর ও সোহেলের নেতৃত্বে একদল ছাত্রলীগ কর্মী তার উপর হামলা চালায়। এ সময় হাবিবকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তারা। পরে আশপাশের শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। তার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানায়, কাজী হাবিবুর রহমান দীর্ঘ দিন থেকে শামীমাবাদ এলাকার ছাত্রলীগ নেতা হোসাইন আহমদ সাগর গ্রুপের সঙ্গে ছিল। কিন্তু গত কয়েক দিন আগে সে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষার গ্রুপে চলে যায়। মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট আগমনকে স্বাগত জানিয়ে সাগরের নেতৃত্বে ওই এলাকায় একটি মিছিল বের করা হয়। কিন্তু, ওই মিছিলে অংশ নেয়নি হাবীব। যে কারণে মিছিলশেষে সাগরের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ কর্মীরা হাবীবের ওপর হামলা চালায়।
ছাত্রলীগের অন্য একটি সূত্র জানায়, সাগর প্রথমে ছাত্রলীগ নেতা বিধান সাহা গ্রুপের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। গ্রুপ বদল করে সে নগরীর কালীবাড়ি এলাকার ছাত্রলীগ ক্যাডার ‘কিলার’ সাহেদ গ্রুপে যোগ দেয়। বর্তমানে ওই গ্রুপের সাথে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি শুনেছি, নিজেদের মধ্যে বিরোধে খুন হয়েছে হাবীব। হাবীব তার গ্রুপের কিনা- তিনি সে বিষয় এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, এ হত্যাকান্ডের সাথে যারাই জড়িত থাকুক-আমি তাদের বিচার চাই।
২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের বন্দুক যুদ্ধ চলাকালে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সুমন রায় খুন হন। এর ১৪ মাসের মাথায় খুন হলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাবীব।