বড়লেখার মনোহর আলী মাস্টারের পাখির বাড়ী
বিশ্বজিৎ রায়, কমলগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হাকালুকি হাওর পারের ছোট্ট একটি গ্রাম হাল্লা। এ গ্রামের তীর ঘেঁষা মনোহর আলী মাস্টারের বাড়ী। এলাকার সকল মানুষ বাড়ীটিকে মনোহর আলী মাস্টারের পাখির বাড়ী নামে চেনেন। কারন মনোহর আলী মাস্টারের পতিত বাড়িটিতে বছর জুড়েই পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে। তবে শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে পাখির সমাগমও বৃদ্ধি পায়। হাজার হাজার পাখির আগমনে পুরো এলাকা পাখির রাজ্যে পরিণত হয়। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন বিল জলাশয় থেকে পাখিরা এসে আশ্রয় নেয় মনোহর আলীর পতিত বাড়ির গাছগাছালিতে। ভোর হলেই পুনরায় পাখিরা চলে যায় খাবারের সন্ধানে হাওরের বিভিন্ন বিল বাদাড়ে। এ পাখি বাড়ির অবস্থান বড়লেখা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে হাল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় লাগোয়া।
সরেজমিনে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ীটিতে গিয়ে দেখা গেছে, হাকালুকি পারের হাল্লা গ্রামের আশপাশের বিল জলাশয় থেকে হরেক রকমের হাজার হাজার পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে মনোহর আলী মাস্টারের বাড়ির গাছ গাছালিতে জড়ো হচ্ছে। এ যেন অন্যরকম এক পাখির মেলা। পাখির ডানার শব্দে মনে হয় পাশ দিয়ে বিমান যাচ্ছে। পাখি বাড়িতে বসবাসকারী হাল্লা প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রী মিতা এখানে আসা অনেক পাখির নাম এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল। সে জানায়, প্রতিদিন এখানে নিশি বক, সাদা বক, লাল বক, হাঁস পাখি, ঝাটিংগা, পানিকৌড়ি, শুকরাজ, হরালি, দুগদুগি ইত্যাদী প্রজাতির পাখিরা জড়ো হয়।
হাকালুকি হাওরের পাখি আভয়াশ্রম কাজে জড়িত এনজিও সংস্থা সিএনআরএসের লেখা সাইনবোর্ডে মনোহর আলী মাস্টারের পতিত বাড়ি লেখা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এখানে পাঁচটি পরিবার তাদের আপন মমতায় পাখিদের সঙ্গে বসবাস করে আসছে। এমন কথা জানালেন মৃত মনোহর আলী মাস্টারের ছেলে স্বপন আহমদ। তিনি জানালেন, ‘তারও জন্মের আগে থেকে তাদের বাড়িতে পাখির নিরাপদ আবাসস্থল ছিল। প্রায় পাঁচ একর জায়গাজুড়ে বছর চারেক ধরে সারা বছর পাখির বিচরণ থাকে তবে শীতকালে দেশীয় পাখির সঙ্গে পরিযায়ী পাখিরাও বসবাস করে। প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় হিজল করচসহ শতাধিক গাছে পাখির কিচিরমিচির শব্দে পুরো এলাকা পাখির নগরীতে পরিণত হয়। তারাও পাখিদের পরিবারের সদস্যদের মতো মনে করেন। প্রতিদিন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এখানে পাখি দেখতে সন্ধ্যার আগে ভিড় জমান।’
মৃত মনোহর আলী মাস্টারের ছেলে স্বপন আহমদ আরও জানান, এখানে পাখি বাস করায় শিকারিদের অনেক হুমকি-ধমকির কারণে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। রাতের আঁধারে পাখি শিকারিরা বন্দুক দিয়ে পাখি শিকারের চেষ্টা চালালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তা প্রতিহত করেন।
পাখি অভয়াশ্রমের কাজে জড়িত এনজিও সংস্থা সিএনআরএস-এর ফিল্ড অফিসার তৌহিদুর রহমান জানান, ‘পাখির অভয়াশ্রমে প্রকৃতপক্ষে পাহারাদার নেই। হাকালুকি বিলের বিসিজি লোকেরা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পাখি দেখভাল করেন।’
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘অচিরেই পাখির অভয়াশ্রমে স্থায়ীভাবে একজন পাহারাদার নিয়োগ দেয়া হবে। পাখিদের বসবাসের জন্য বাঁশ দিয়ে খাঁচা তৈরি করে দেয়া যায় কিনা সে বিষয়েও চিন্তাভাবনা চলছে।