লাইফ সাপোর্টের নামে আইসিইউ বাণিজ্য
ডেস্ক রিপোর্টঃ সরকারি-বেসরকারি কিছু হাসপাতালে চলছে আইসিইউ বাণিজ্য। গুরুতর অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে এলেই কৌশলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই নেয়া হচ্ছে আইসিইউতে। এরপর ঘণ্টা হিসেবে সেখান থেকে আদায় করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের ফি। হাসপাতালের আইসিইউর সিটের সংকটকে কেন্দ্র করে এ ব্যবসা এখন তুঙ্গে। রাজধানীর বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতালেই ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) সেবার নামে চলছে রমরমা বাণিজ্য। সরকারি হাসপাতালে আইসিইউর জন্য কোনো খরচ নেই। অভিযোগ রয়েছে, রোগী মারা গেলেও লাইফ সাপোর্টে রাখার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওইসব হাসপাতাল। আবার অনেক হাসপাতালেই নেই দক্ষ ডাক্তার, নার্স ও যন্ত্রপাতি। সব মিলিয়ে আইসিইউর নামে হাসপাতালগুলোয় বিছিয়ে রাখা হয়েছে প্রতারণার জাল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ভাগ্যে জোটে না সেখানকার অনেক রোগীর। চলে আইসিইউর সিট পেতে মন্ত্রী-এমপিসহ প্রভাবশালীদের তদবির। দিনে দুই শতাধিকের সিরিয়াল থেকে ভাগ্যে জোটে শুধু দু-একজনের সিট। বাকি মুমূর্ষু রোগীদের নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন স্বজনরা। কখনও পড়েন দালালের খপ্পরে। রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, ঢাকা মেডিকেলসহ সরকারি বেশির ভাগ হাসপাতালে আইসিইউর সিট বরাদ্দ হচ্ছে তদবিরের মাধ্যমে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় হাসপাতালের বাইরের রোগীরাই বেশি সিট পাচ্ছেন। এর মধ্যে থাকে মন্ত্রী, এমপি এবং চিকিৎসক নেতাদের তদবির। তারা বলেন, আইসিইউ সংশ্লিষ্টদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে দু-একদিন অপেক্ষা করলেও সিট পাওয়া যায়। বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতালে মুমূর্ষু রোগীদের আইসিইউ ও সিসিইউ সেবা দেয়ার নামে চলছে উচ্চ মুনাফা। অভিযোগ আছে, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের আইসিইউতে রোগী মারা গেলেও লাইফ সাপোর্টে রেখে অর্থ আদায় করা হয়। এ সুযোগে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় লাখ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি এবং কয়েকটি করপোরেট হাসপাতাল ছাড়া বেশির ভাগ হাসপাতালেই আইসিইউতে নেই প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্স। নেই মানসম্পন্ন চিকিৎসা যন্ত্রপাতিও। এ কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত নয়, সরকারি হাসপাতালের জন্য লাইন ধরে থাকেন বিত্তশালীরাও। সূত্র জানায়, রাজধানীর উচ্চমানসম্পন্ন বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ ও সিসিইউতে প্রতিদিনের খরচ ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। মাঝারি মানসম্পন্ন হাসপাতালের আইসিইউতে প্রতিদিন খরচ হয় ২৫ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। তবে মান নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের আইসিইউতে চিকিৎসা খরচ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ ও সিসিইউর (করনারি কেয়ার ইউনিট) স্বল্পতা থাকায় রোগীরা বাধ্য হয়েই দালাল চক্রের প্রলোভনে পড়ে নিম্নমানের আইসিইউতে যেতে বাধ্য হন। আর এ ক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের আবেগকে পুঁজি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় অসাধু চক্র। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি নীতিমালা না থাকায় নিবিড় পরিচর্যার (ইনটেনসিভ কেয়ার) নামে এক শ্রেণির প্রতারক প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নজরদারির অভাবে অসাধু চক্র একের পর এক তথাকথিত আইসিইউ-সিসিইউর নামে গড়ে তুলছে প্রতারণার ফাঁদ। এসব আইসিইউ-সিসিইউতে দক্ষ জনবল, প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম, উপযুক্ত চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত নার্স, টেকনেশিয়ান, পরীক্ষাগার কিছুই নেই। তারা জানান, আইসিইউতে একজন রোগীকে ওঠানো-নামানো, বিভিন্ন দিকে ঘোরানোসহ বিভিন্ন অবস্থানে রাখার জন্য বিশেষায়িত শয্যার দরকার। প্রত্যেক রোগীর জন্য পৃথক কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণযন্ত্র ভেন্টিলেটর এবং হৃদযন্ত্রের অবস্থা, শরীরে অক্সিজেন মাত্রা, কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের মাত্রা, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি, রক্তচাপ পরিমাপের জন্য দরকার হয় কার্ডিয়াক মনিটর। স্যালাইনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মাত্রা নির্ধারণের জন্য দরকার ইনফিউশন পাম্প। আইসিইউতে হৃদযন্ত্রের গতি হঠাৎ থেমে গেলে তা চালু করার জন্য প্রয়োজন হয় শক মেশিনও। পাশাপাশি আইসিইউতে কিডনি ডায়ালিসিস মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম, মুমূর্ষু রোগীর রক্তে বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা নির্ধারণের জন্য এবিজি মেশিন থাকতে হবে। এ ছাড়া জরুরি পরীক্ষার জন্য আইসিইউর সঙ্গে একটি অত্যাধুনিক ল্যাব থাকা প্রয়োজন। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকটি হাসপাতালের আইসিইউ ছাড়া বেশির ভাগ হাসপাতালের আইসিইউতে নেই এসব সুযোগ-সুবিধা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আইসিইউর একটি সিট বাসাতে কমপক্ষে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা খরচ হয়। একটি সিটের পেছনে হাসপাতালের দৈনিক খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। এটা ওষুধ ছাড়াই। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন পিজি (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ডা. গাজী মেজবাহ উদ্দিন ইকবাল এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, হাসপাতালে প্রতিদিন আইসিইউতে খরচ হয় ৫ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ২০১৪ সালে সারা দেশের ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালগুলোতে আট বেডের সিসিইউ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু সেই কার্যক্রম কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতাল পর্যায়ে আইসিইউ সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি বিশেষায়িত হাসপাতালের অধীনে বর্তমানে ৭৬টি আইসিইউ বেড রয়েছে এবং আরও ১৯টি বাড়ানোর প্রস্তাবনা রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে বড়দের জন্য মোট আইসিইউ বেডের সংখ্যা ৩০০। ১৯টি হাসপাতালে শিশুদের জন্য ৭০টি করে বেড আছে। তবে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে বর্তমানে কতগুলো আইসিইউ চালু আছে তার পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে কয়েকটি হাসপাতাল প্রতিবেদন আকারে জমা দিয়েছে। তাতে ৪০০ বেড আছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম সাদী মানবজমিনকে বলেন, সরকারি হাসপাতালে এমনিতেই আইসিইউর ব্যাপক সংকট। সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে কোনোভাবে রোগীদের চাহিদা পূরণের চেষ্টা চলছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী বিশেষায়িত হাসপাতালসহ সব জেলা হাসপাতালে আইসিইউ-সিসিইউ ইউনিট করার চেষ্টা চলছে। মানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানহীন আইসিইউ মালিকদের একদিনে প্রতিহত করা সম্ভব নয়। এজন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর উচ্চ ফি আদায় প্রসঙ্গে ডা. সামিউল বলেন, দেশে হাসপাতাল স্থাপনের নীতিমালা আছে। তবে আইসিইউ ও সিসিইউ বিষয়ে তারা পরিদর্শন করছেন এবং নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন। মানসম্পন্ন সেবা দেয়ার জন্য কাজ করছেন তারা। যাতে সেবা নিতে গিয়ে কেউ প্রতারিত না হন। এ বিষয়ে ঢামেকের অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগ এবং ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, বাইরের রোগীদের প্রাধান্য, তদবির এবং টাকা দিয়ে আইসিইউর সিট পাওয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ঢামেকে আইসিইউর ২০টি সিট রয়েছে। সিট বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। আইসিইউর রোগীর ক্ষেত্রে অপারেশন, পোস্ট অপারেশন এবং এ হাসপাতালের ভর্তি-রোগীর কথা আগে চিন্তা করা হয়। এ ক্ষেত্রে যেসব রোগী বাঁচবেন তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি জানান, মন্ত্রী-এমপিদের তদবির থাকতে পারে, এমনকি আপনাদেরও। তিনি জানান, মন্ত্রী-এমপিদের তদবির করলে তাদের বলা হয়, রোগীর লোককে আমাদের কাছে পাঠান। আর বিষয়টি কীভাবে হ্যান্ডেল করা হলো তাই দেখার বিষয়। ডা. রহমান বলেন, অভিযোগ থাকতেই পারে। কারণ দুই শতাধিক লোক সিরিয়ালে থাকেন। এত রোগীর মধ্য থেকে দু-একজন আইসিইউতে সিট পান দিনে। বাকিরা অভিযোগ করেন। দৈনিক ৩০ জন সিরিয়ালে নাম লেখান। অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে তা সম্ভব হয় না। এর মধ্যে ল্যাব সুবিধা নেই, জনবলেরও অভাব রয়েছে। প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইউনিট (পিসিইউ) বাড়াতে হবে। অর্থাৎ চিকিৎসার কোনো সুযোগ নেই, কষ্ট কমানো, মৃত্যু পর্যন্ত ব্যক্তিকে সম্মানের সঙ্গে রাখা। এ রকম ১২টি সিট রয়েছে ঢামেকে। তিনি বলেন, আমাদের প্রাথমিক ও দ্বিতীয় পর্যায়ের হেলথ কেয়ারের প্রতি বেশি নজর দিতে হবে। টারশিয়ারি পর্যায়ে হেলথ কেয়ার নয়।
কেইস স্টাডি-১: ব্যবসায়ী আসলাম (৫৪) চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর একটি অভিজাত হাসপাতালে মারা যান গত ১৬ই আগস্ট, ২০১৪ সালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আসলামের মরদেহ আটকে রেখে বিল পরিশোধের চাপ দেয়। মৃত ব্যক্তির চিকিৎসা বাবদ স্বজনদের কাছে প্রায় ৩১ লাখ টাকার একটি বিল দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্বজনরা ১২ লাখ টাকা পরিশোধ করে বাকি টাকা পরে দেয়ার শর্তে লাশ নিয়ে যেতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তখন বাধা দেয়। দুদিন ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিল না দেয়ায় আসলামের লাশ আটকে রেখেছিল। মৃত আসলামের মেয়ে সাদিয়া ইসলাম ওই সময়ে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, লাশ আটকে রাখার বিষয়টি মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু শর্তে লাশ হস্তান্তর করে। স্বজনরা জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আসলামকে ওই বছরের ৩রা জুলাই বারিধারার অন্য একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তাকে সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর কয়েক ধাপে তারা ১২ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। ওই বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, হাসপাতালের লাশ আটকে রাখার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক ও অমানবিক। হাসপাতাল পরিচালনা একটি সেবা সে কথা মনে রাখতে হবে।
কেইস স্টাডি-২: সম্প্রতি ঘটনাটি ঘটে কণ্ঠশিল্পী দিলরুবা খানের সঙ্গে। তার স্বামী মকবুল হোসেন খানকে মৌচাকের একটি হাসপাতালের লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। খুলে নেয়া হয়েছিল লাইফ সাপোর্ট। চিকিৎসকদের বক্তব্য অনুযায়ী তিনি ‘মৃত’। তার মৃত্যু-সংবাদ জানাতে এলাকায় হয়েছিল মাইকিং। গ্রামের বাড়িতে খোঁড়া হয়েছিল কবর। হাসপাতালে ভিড় স্বজনদের। শোকাতুর পরিবেশ। এরই মধ্যে মেটানো হয় হাসপাতালের সব পাওনা। লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে যখন মকবুল হোসেনের ‘লাশ’ তোলা হচ্ছিল, এমন সময় চোখ মেলে তাকান তিনি। স্বজনরা বিস্ময়ে হতবাক! দ্রুত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় অন্য আরেকটি হাসপাতালে। মৃত ঘোষণার পরও বেঁচে থাকা মকবুল হোসেনকে চিকিৎসা দেয়া হয় হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। অবশ্য সেখানে আরও কয়েকদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি মারা যান। মকবুল হোসেনের স্বজনরা জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ওই হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। অবস্থা সংকটাপন্ন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে আইসিইউতে নিয়ে যায়। সেদিন চিকিৎসকরা বলেছিলেন, লাইফ সাপোর্ট ছাড়া তাকে বাঁচানোর আর কোনো উপায় নেই।
মকবুল হোসেনের কন্যা শিমুল খান মানবজমিনকে বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকরা বাবাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়ার জন্য বারবার তাগাদা দিতে থাকেন। মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের চাপ দেন। শেষ পর্যন্ত আমরা তাদের চাপে বাবাকে লাইফ সাপোর্টে রাখার সিদ্ধান্ত নিই। এজন্য ২০ হাজার টাকা অগ্রিমও দেয়া হয়। লাইফ সাপোর্টে প্রতিদিন বিল উঠবে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা, যা আমাদের সামর্থ্যের একেবারেই বাইরে। তিনি বলেন, পরদিন দুপুর সাড়ে ১২টার সময় বাবার লাইফ সাপোর্ট খুলে মৃত ঘোষণা করা হয়। হাসপাতালের পাওনা ৫৭ হাজার ৪৫৭ টাকা পরিশোধও করি। কিন্তু দুপুরে যখন লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে বাবাকে তোলা হয় তখনই তিনি নড়েচড়ে ওঠেন। লিফট দিয়ে নামানোর সময় তিনি চোখ মেলে তাকান। শিমুল খান আরও বলেন, তখনই আমরা বুঝতে পারি লাইফ সাপোর্টের নামে আমরা প্রতারণার ফাঁদে পড়েছি। পরে এ হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেয়ার মতো আর কোনো ভরসা পাইনি।
কেইস স্টাডি-৩: ২০১৪ সালের আগস্টে আব্বাস নামের এক রোগী বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে ঢামেকে আসেন। তিনি জিবিএস রোগে ভুগছিলেন। আব্বাসের বোন সাঈদা আক্তার বলেন, জরুরি বিভাগ থেকে ভাইকে নতুন ভবনের ছয় তলার ৬০১ ওয়ার্ডে রেফার করেন ডাক্তার। পরে ওই ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা দুদিনের মাথায় রোগীকে আইসিইউতে রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু আইসিইউতে সিরিয়াল দিয়েও সিট পাওয়া যাননি বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আমরা গরিব, তাই কেউ তদবির করেনি। ফলে আইসিইউতে সিট আমাদের ভাগ্যে জোটেনি। এরপর ১০-১২ দিনের মধ্যে ওই রোগী মারা যান বলে জানান তিনি। শুধু এগুলোই শেষ নয়। (মানবজমিন)