একাধিক ফতোয়া নিয়ে আসছেন মাওলানা মাসউদ
ডেস্ক রিপোর্টঃ ইসলাম সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করে না, আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে বেহেশত পাওয়া সম্ভব নয়— এমন সব ফতোয়া জারি করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করে এমন একটি ঈদগাহ ময়দান কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ইমাম ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। তিনি এখন তার এই ফতোয়ার সমর্থনে দেশের ইসলামী আলেমদের সাক্ষর সংগ্রহ করছেন।
এমন সময়ে এই ফতোয়া জারির কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন ফরিদ মাসউদ, যখন পুলিশ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে দেশের বিভিন্ন মসজিদ এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছে।
মূলত দুই সপ্তাহ আগে পুলিশ ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেম সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সভা হয়। এই বৈঠকের প্রেক্ষাপটেই ফরিদ মাসউদ কিছু ফতোয়া দেবার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
দেখা যাচ্ছে পুলিশ বাহিনীর সাথে একটি বৈঠক করবার পরই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী ফতোয়া দেবার উদ্যোগ আসছে। এটা করবার জন্য সরকার থেকে কি তাদের উপর কোনো চাপ দেয়া হয়েছে?
ফরিদ মাসউদ বলছেন, ‘না, কোনো চাপ নেই। বরং আমরা মনে করি আলেম সমাজের সহযোগিতা ছাড়া পুলিশের একার পক্ষে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রুখে দেয়া সম্ভব না। এ কারণে আমি নিজ উদ্যোগেই এই ফতোয়া দেবার প্রস্তাব দিয়েছি’।
ফরিদ মাসউদ জানাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্য হলো বিভাজন এড়াতে সারা দেশের আলেমদেরকে এই ফতোয়ার ব্যাপারে একমত করা এবং এজন্য তারা ফতোয়া ব্যাপক ভিত্তিতে প্রচারের আগে তাদের সাক্ষর নিচ্ছেন।
মূলত এগারোটি প্রশ্নকে সামনে রেখে কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বক্তব্যের আলোকে ফতোয়াগুলো চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ফরিদ উদ্দিন মাসউদের অনুসারীরা ঢাকার আফতাবনগরের একটি কওমী মাদ্রাসায় যান ফতোয়ার সমর্থনে সাক্ষর গ্রহণ ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে।
ফতোয়াগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি
- ইসলাম কখনো সন্ত্রাস সমর্থন করে না। বরং সন্ত্রাস হিংসা হানাহানি নির্মূল করার জন্যই ইসলামের আবির্ভাব।
- জিহাদ ও সন্ত্রাস এক জিনিস নয়। জিহাদ ইসলামের একটি অন্যতম নির্দেশ, পক্ষান্তরে সন্ত্রাস হারাম এবং অবৈধ।
- আত্মঘাতী হওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম।
- সন্ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টি হারাম হওয়ায় এটা বেহেশত পাওয়ার পথ নয়। এটা দোযখের পথ।
- ইসলামে নিরপরাধ মানুষকে গণহারে হত্যা বৈধ নয়।
- শিশু, নারী, বৃদ্ধ ও দুর্বল-যারা যুদ্ধে শরিক নয়, তাদেরকে হত্যা করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
- যেকোনো অবস্থায় খুন করা অপরাধ। ইবাদত বা উপাসনা রত কাউকে হত্যা করা সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ।
- অমুসলিমদের গির্জা, প্যাগোডা, মন্দির ইত্যাদি উপাসনালয়ে হামলা করা হারাম ও অবৈধ।
ফরিদ উদ্দিন মাসউদ যদিও বলছেন, এই ফতোয়া জারির ক্ষেত্রে তারা সরকার বা পুলিশের কোনো সাহায্য সহযোগিতা নিচ্ছেন না, কিন্তু এটা স্পষ্ট যে পুলিশের একটি প্রচ্ছন্ন সমর্থন তাদের একাজে রয়েছে।
আলেম-উলামাদেরকে জঙ্গি ও সন্ত্রাস বিরোধী প্রচারণায় অন্তর্ভুক্ত করবার প্রথম পদক্ষেপও পুলিশের তরফ থেকেই এসেছে।
অবশ্য একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষই মনে করে মাদ্রাসাগুলোই কট্টর ধ্যানধারণা গড়ে উঠবার উর্বর লীলাভূমি।
কিন্তু পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলছেন, ‘মৌলবাদী চিন্তা চেতনা একক ব্যক্তি থেকেই আসে। এটা মাদ্রাসায় পড়লেই যে হবে তা না। আমরা দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এমন মানুষদের মধ্যেও মৌলবাদী চিন্তা চেতনা আছে। তাদের অনেকেই জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাথে জড়িত।’
মোট এক লাখ সাক্ষর সংগ্রহের জন্য চলছে কর্মসূচি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দশ হাজারের মত সাক্ষর সংগ্রহ হয়েছে বলে যানা যাচ্ছে।
জঙ্গি ও সন্ত্রাসী তৎপরতা ঠেকাতে সরকার থেকেও মসজিদগুলোতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সরকারের গোয়েন্দা নজরদারিও চলছে গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে।
ঢাকার শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ সিফাতউল্লাহ বলেন, পুলিশের একটি দল এরই মধ্যে তাদের সাথে যোগাযোগ করেছিল তথ্য সংগ্রহ করবার জন্য।
‘তারা এসে আমাদের ইমাম, মুয়াজ্জিন এবং পরিচালনা কমিটির সব সদস্যদের নাম, ফোন নম্বর, স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে’।
সিফাতউল্লাহ আরো জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরে তার মসজিদে সাপ্তাহিক জুম্মার নামাজের সময় গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিও তার নজরে পড়ছে এবং তারা এসে তার সাথে পরিচিতও হয়ে গেছে।
দেশটির আনাচে কানাচে বহু সংখ্যক মসজিদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কেউ কেউ এর সংখ্যা আড়াই লাখ হবে বলেও উল্লেখ করেন।
পুলিশ প্রধান শহীদুল হক বলছেন, সবগুলোর তথ্যই সংগ্রহ করা হবে এবং এজন্য জনগণের সহায়তা তারা পাবেন বলে আশা করছেন।
‘পরিচালনা কমিটিগুলোতে জঙ্গিবাদ বা মৌলবাদী ধ্যানধারণা পুষ্ট কোনো ব্যক্তি আছে কি না এবং সংশ্লিষ্ট মসজিদের ইমামের উপর ওই কমিটির কোনো প্রভাব আছে কি না সেগুলো আমরা দেখব।’
এদিকে ফরিদ উদ্দিন মাসউদের অনুসারীরা জানাচ্ছেন, তারা এর মধ্যে সারা দেশে কমিটি গঠন করে অব্যাহতভাবে তাদের ফতোয়ার সমর্থনে সাক্ষর সংগ্রহ করছেন। এরই মধ্যে দশ হাজারে বেশি সাক্ষর নেয়া হয়ে গেছে।
তারা আশা করছেন ফেব্রুয়ারি নাগাদ তারা এক লাখ সাক্ষর গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবেন। তারপরই ব্যাপক ভিত্তিক প্রচারের জন্য সংশ্লিষ্ট মহলগুলোতে তারা ফতোয়াগুলো সরবরাহ করবেন।