হবিগঞ্জে কারারক্ষীর মৃত্যু, পরিবারের দাবি হত্যা
ডেস্ক রিপোর্টঃ হবিগঞ্জ কারাগারের সাইফুল আলম (৩৪) নামে এক কারারক্ষীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও পরিবারের দাবি, আত্মহত্যা নয় পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
বুধবার হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মৃত কারারক্ষী সাইফুল আলমের স্ত্রী আকলিমা বেগম এমন দাবি করেন। এ সময় তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে হত্যার বিচারও দাবি করেন। এর আগে, সিলেট থেকে লাশ নিয়ে সরাসরি প্রেসক্লাবে হাজির হন তিনি।
মৃত করারক্ষী সাইফুল আলম চট্টগ্রামের মিরেরসরাই উপজেলার মসজিদিয়া চৌধুরীপাড়া গ্রামের মো. আবুল খায়েরের ছেলে। তিনি হবিগঞ্জ কারাগারে গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল আলমের স্ত্রী বলেন, ‘স্বামী সাইফুল আলম বিভিন্ন সময় বলতেন, এখানে খুব কষ্টে আছেন। প্রশাসনিক কিছু সমস্যা আছে। তিনি এখান থেকে বদলী হয়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন। জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলতেন, তুমি বুঝবে না। বাড়ি এসে বলবো।’
আকলিমা বলেন, ‘গত ১০ জানুয়ারি ছুটি নিয়ে তার বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। ওইদিন সকালে তার স্বামী বলেছেন, কিছুটা অসুস্থ লাগছে। আমি বললাম, তুমি গাড়িতে উঠতে পারবা। সে বলেছে পারব। সমস্যা নেই। এরপর থেকেই সে মোবাইল ফোন ধরছে না। দুপুরে নাজিম উদ্দিন নামে তার এক বন্ধু (সুনামগঞ্জে কর্মরত কারারক্ষী) ফোন ধরে বলেন, আপনার সঙ্গে কি তার ঝগড়া হয়েছে। আমি বললাম না। কেন ওর কি হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বাবা বা ভাইকে দিন। আপনাকে বলা যাবে না। তার কাছ থেকে খবর পেয়ে আমরা সিলেটে যাই। মঙ্গলবার ভোর ৫টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আমার ধারণা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এর বিচার চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে মৃত কারারক্ষী সাইফুল আলমের শ্বশুর ফয়েজ আহমদ দাবি করেন, তার জামাতা গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত থাকায় প্রায়ই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করতে হতো। এ জন্য মাঝে মাঝে সমস্য হতো বলে তিনি তার কাছ থেকে জেনেছেন।
সাইফুল আলমের ভগ্নিপতি জয়নাল আবেদীন দাবি করেন, তিনি বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন বলে সিলেটের ডাক্তাররা রিপোর্ট দিয়েছে। তারা বলেছে, যদি সেখানে তাকে বিষমুক্ত করা যেতো তবে বাঁচানো সম্ভব ছিল। কিন্তু হবিগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তির সময় বলা হয়, তিনি গলায় ফাঁস লাগিয়েছেন। এমন ভুল তথ্যের কারণে তার উপযুক্ত চিকিৎসা হয়নি।
কারা সূত্রে জানা যায়, সাইফুল আলম এক বছর দুই মাস ধরে হবিগঞ্জ জেলা কারাগারে কর্মরত ছিলেন। আর ১২ বছর ধরে তিনি এ পদে বিভিন্ন কারাগারে কর্মরত ছিলেন। গত ১০ জানুয়ারি ছুটি নিয়ে তার বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওইদিন তাকে ব্যারাকে গলায় লুঙ্গি লাগানো ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায় অন্য করারক্ষীরা। প্রথমে তাদের হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল এবং পড়ে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার ভোর ৫টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘১০ জানুয়ারি সকালে সাইফুল গলায় ফাঁস লাগায়। তবে আমি দেখিনি। যারা খুলেছে তারা বলেছে, লুঙ্গি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়েছে। জিহ্বা বেরিয়ে গেছে। তাকে তাৎক্ষণিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
সাইফুলের পরিবারের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তার পরিবার কিসের উপর ভিত্তি করে বিষের কথা বলছে তা আমি জানি না। সাইফুল প্রিজন সিকিউরিটি ইউনিটের (কারা গোয়েন্দা বিভাগ) অধীন ছিলেন। তার নিয়ন্ত্রণ সরাসরি অধিদপ্তরের কাছে। সে হেড অফিসের স্টাফ। তাকে ছুটি দেয় হেড অফিস। আমি তা বলতে পারি না।’