ফোরিডায় কমিটি না করেই পালালেন মিলন ॥ নিউইয়র্কে তার সমর্থকদের সভা দখল ও পন্ড করলো বিএনপি
নিউইয়র্ক থেকে এনা: ফেøারিডায় কমিটি না করেই পালালেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন। অন্যদিকে নিউইয়র্কে মিলন সমর্থকদের সভা পন্ড এবং দখল করে নিয়েছে ঐক্যবদ্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরা। গত ১০ জানুয়ারি এহসানুল হক মিলন ফেøারিডা গিয়েছিলেন ফোরিডা বিএনপির স্টেট কমিটি গঠন করার জন্য। একই দিন বিএনপির আরেকটি অংশ এহসানুল হক মিলনের অবৈধ কমিটি গঠন ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদে ফোরিডার ফোর্টলটারডলে আরেকটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ স¤্রাট। একটি সূত্র জানায়, ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ফোর্টলটারডলের প্রতিবাদ সভা থেকে এক মাইল দূরে সগ্রাম হোটেলে কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সভার আয়োজন করে মিলন সমর্থকরা। কিন্তু সভা না করেই সেখানে এহসানুল হক মিলন ৫ মিনিটের বক্তব্য দেন। সেই বক্তব্যে তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের প্রথমে আব্দুল লতিফ স¤্রাটের সভা পন্ড করার আহবান জানান। তার আহবানে দিনাজ খান গ্রুপ এবং চাকলাদার গ্রুপের কয়েকজন নেতা ফোর্টলটারডলের মাহফিল রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত ফোরিডা বিএনপির সভাপতি ব্যারিস্টার জমির
হোসেন কাজল ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান কর্তৃক আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় যান। গিয়েই সবার আগে ফেøারিডা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরিফ আহমেদ আশরাফ প্রতিবাদ সভায় ঢুকেই আব্দুল লতিফ স¤্রাটকে গালি দিতে দিতে সামনের দিকে যাওয়ার সাথে সাথেই উপস্থিত নেতাকর্মীরা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাকে উত্তম মধ্যম দিয়ে হল থেকে বের করে দেয়। এই সময় এহসানুল হক মিলনসহ অন্যান্য নেতারা প্রতিবাদ সভার বাইরে কেউ গাড়িতে এবং কেউ রাস্তায় অবস্থান করছিলেন। মারামারি শুরু হলে কে বা কারা পুলিশ কল করলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ যারা প্রতিবাদ সভা করছিলো সেই সব মারমুখী নেতাদের হলের ভিতরেই অবস্থান করার নির্দেশ দেয়। কারণ তারা বাইরে গাড়িতে অবস্থানরত মিলনের দিকেই তেড়ে যাবার চেষ্টা করছিলেন। অন্যদিকে মিলনসহ যারা বাইরে ছিলেন তাদের ৫ মিনিটের মধ্যেই এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয় পুলিশ। ৫ মিনিটের মধ্যে এলাকা না ছাড়লে পুলিশ গ্রেফতারেরও হুমকি দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে যে গাড়িতে এহসানুল হক মিলন এসেছিলেন, সেই গাড়িতে করেই পালিয়ে যান। অন্যের অনুষ্ঠান পন্ড করতে গিয়ে মিলন নিজেই পালিয়ে গেলেন।
এদিকে একই দিনে একই সময়ে নিউইয়র্কেও এহসানুল হক মিলনের সমর্থকারীদের সভা দখল এবং পন্ড করে দেয় ঐক্যবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতৃবৃন্দ। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বর্তমান সরকারের দু:শাসনের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি এবং ৩৪ অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় বিক্ষোভ সমাবেশের। এই বিক্ষোভ সমাবেশটি জ্যাকসন হাইটসের ড্রাইভার সিটি প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি নেতা ও ৩৪ অঙ্গ সংগঠনের সভাপতি কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজমের সভাপতিত্বে এবং যুক্তরাষ্ট্র জাসাসের সভাপতি ও জাসাসের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গোলাম ফারুক শাহীনের পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল সালাম। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি গিয়াস আহমেদ, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুব দলের সভাপতি জাকির এইচ চৌধুরী, যুব দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এম এ বাতিন, স্টেট বিএনপির সভাপতি আব্দুল খালেক আকন্দ, সিটি বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা, বিএনপি নেতা নিয়াজ আহমেদ জুয়েল, মাহমুদ চৌধুরী, এবাদ চৌধুরী, জাহাঙ্গীর সরোয়ার্দি, বিলাল চৌধুরী, শেখ হায়দার আলী, সৈয়দা মাহমুদা শিরিন, শাহাদত হোসেন রাজু, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রদলের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম জনি প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আব্দুল সালাম বলেন, বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার হচ্ছে ১/১১ এর অবৈধ সরকারের বেনিফিশিয়ারি সরকার। ১/১১ এর অবৈধ সরকার যেভাবে গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশ পরিচালনা করেছিলো, শেখ হাসিনাও ঠিক সেই ধারাবাহিকতায় দেশ পরিচালনা করছেন। ১/১১ এর অবৈধ সরকারের লক্ষ্য ছিলো বিএনপিকে দুর্বল করা শেখ হাসিনাও এখন সেই কাজটি করছেন। আমরাও হামলা মামলার বাইরে নই। তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা কুত্তা এবং গরু মার্কা নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছে। আমি আজকে স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, বিএনপিকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে ঐক্যবদ্ধ বিএনপির নেতৃবৃন্দ এহসানুল হক মিলনের সমর্থনে আয়োজিত সিটি বিএনপির ক্ষুদ্রাংশের সভায় হামলা করে। প্রথমে তারা ঐ সমাবেশের ব্যানার খুলে নেয়। দ্বিতীয়বার সভা শুরু হলে পুনরায় তারা হামলা চালায় এবং এক পর্যায়ে পুরো অনুষ্ঠানের দখল তারা নিয়ে নেয়। শুধু তারা দখলই নেয়নি, অনুষ্ঠানে রীতিমত বক্তব্য দিয়েছেন। এই সময় মিলনের সমর্থকরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। অসহায়ারের মত ঐক্যবদ্ধ বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে সায় দেন। ঐক্যবদ্ধ বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, এখানে চাঁদাবাজের দালালি চলবে না। দালালি ছাড়া সভা করতে চাইলে সভা করতে পারেন। পরে অবশ্য তারা সভা করেছিলেন। ঐ সময়েই জ্যাকসন হাইটসে আকতার হোসেন বাদলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে গিয়ে উপস্থিত হন। সেখানে গিয়ে তারা বলেন, বিএনপির নাম দিয়ে সভা করা যাবে না, দালাল এহসানুল হক মিলনের পক্ষে সভা করতে দেয়া হবে না। ঐক্যবদ্ধ বিএনপির নেতাকর্মীদের বক্তব্যে আকতার হোসেন বাদল সম্মতি দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।