যৌতুক না পেয়ে গৃহবধূর মুখে খুন্তির ছ্যাঁকা
ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে দাবিকৃত যৌতুকের টাকা না পেয়ে রেখা বেগম (৩০) নামে এক গৃহবধূকে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা ও হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (০৭ জানুয়ারি) দুপুরে ওই গৃহবধুর মা মঞ্জুমা বেগম বাদি হয়ে মনোহরগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর আগে গত সোমবার দুপুরে উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নে মানরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটলেও ভয়ে মুখ খোলেনি ওই গৃহবধুর পরিবার।
নির্যাতিত গৃহবধু রেখা ওই গ্রামের মৃত.মোস্তফা মিয়ার ছেলে লোকমান হোসেনের স্ত্রী। গত বুধবার দুপুরে ওই গৃহবধূ গুরুত্বর আহত অবস্থায় লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্র ও ওই গৃহবধুর মা মঞ্জুমা বেগম জানায়, গত সোমবার দুপুরে অতীতের ন্যায় গৃহবধূ রেখা বেগমের কাছে যৌতক বাবদ ২০ হাজার টাকা দাবি করে তাঁর স্বামী লোকমান হোসেন। রেখা বেগম তার পিতার অস্বচ্চলতার কথা চিন্তা করে স্বামীর দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে উভয়ের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় স্বামী লোকমান, শাশুড়ী রোকেয়া বেগম, ননদ বিউটি আক্তার, দেবর রকি মিয়া ও হিরণ মিয়া ওই গৃহবধুর হাত-পা বেধে তাকে বেধম মারধর শুরু করে।
এক পর্যায়ে ওই যৌতুকলোভীরা চুলা থেকে গরম করে আনা খুন্তি দিয়ে গৃহবধু রেখার মুখে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে চেকা দিত থাকে। এতে ওই গৃহবধুর মুখ ও শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। এদিকে, এ ঘটনার পর ওই গৃহবধূর মায়ের অভিযোগ পেয়ে গত বুধবার দুপুরে মনোহরগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল হাই ঘটনাস্থল থেকে ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে তাঁর মা মঞ্জুমা বেগমের নিকট হস্তান্তর করে।
পরে আহত ওই গৃহবধূকে লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে তার পরিবারের লোকজন। ওই গৃহবধুর মা মঞ্জুমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, গত সোমবার আমার মেয়ের উপর নির্যাতন চালিয়ে তারা (স্বামীর বাড়ির লোকজন) আমার মেয়েকে হত্যার হুমকি দিয়ে ঘটনাটি ধামাপাচা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে আমি স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশের সহায়তায় আমার মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, হাসপাতালে ভর্তি করার পর থেকেই ওই যৌতুকলোভীরা আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিতে থাকে। এ কারণে আমি ঘটনাটি কাউকে বলতে সাহস পাইনি। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় নিজে বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে থানায় অভিযোগ দিয়েছি। এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত লোকমান হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মনোহরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বিপুল চন্দ্র ভট্রো জানান, বুধবার ওই গৃহবধুর মা অভিযোগ করে তাঁর মেয়েকে আটক করে রাখা হয়েছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই গৃহবধুকে তার মায়ের হাতে তুলে দেয়। তবে আজকের (বৃহস্পতিবার) কোনও অভিযোগ আমি এখনও পাইনি। তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে ঘটনাটি তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।