হবিগঞ্জে ফিরে যাচ্ছে কিবরিয়া হত্যা মামলা!
ডেস্ক রিপোর্টঃ কিবরিয়া হত্যা মামলা হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে সিলেট দ্রুত বিচার আদালতে আসে গত বছরের ১১ জুন। ৯ দফা পেছানোর পর গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর গঠিত হয়েছিল অভিযোগ। এরপর ১২ বার পিছিয়েছে স্বাক্ষ্যগ্রহণ। ১৭১ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালত জবানবন্দি শুনেছেন মাত্র ১৩ জনের। এরইমধ্যে দ্রুত বিচার আদালতের আইন অনুযায়ী পেরিয়ে গেছে বিচারের জন্য নির্ধারিত ১৩৫ কর্মদিবস। ফলে আলোচিত কিবরিয়া হত্যা মামলা ফের হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি সিলেট দ্রুত বিচার আদালতে রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছে।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদরের বৈদ্যের বাজারে এক জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া। হামলায় আরো ৪ জন নিহত হন। এ ঘটনায় হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ খান হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন। হত্যাকান্ডের প্রায় ৯ বছর পর তিন দফা তদন্তকরে সিআইডির সিলেট অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুন নেছা পারুল ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর ৩২ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন। হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ মো. আতাবুল্লাহ মামলাটি বিচারের জন্য গত ১১ জুন সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেন।
‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন ২০০২’ অনুসারে ট্রাইব্যুনালে কোনো মামলার আসার পর ৯০ কর্মদিবসে তা নিষ্পত্তি করতে হবে। তবে আইনের ১০ ধারার ২ উপধারায় বলা হয়েছে, ৯০ কর্মদিবসে মামলা নিষ্পত্তি না হলে কারণ লিপিবদ্ধ করে ট্রাইব্যুনাল বিষয়টি লিখিতভাবে সুপ্রীমকোর্টকে জানিয়ে অতিরিক্ত ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে মামলা শেষ করতে পারবেন। তাও সম্ভব না হলে একই ধারার ৩ উপধারা অনুসারে ট্রাইব্যুনাল আরো ১৫ কর্মদিবস সময় পাবে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও যদি মামলা নিষ্পত্তি না হয় তবে যে আদালত থেকে মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এসেছে, ওই আদালতে চলে যাবে মামলাটি।
কিবরিয়া হত্যা মামলাটি হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে ১১ জুন সিলেট দ্রুত বিচার আদালতে হস্তান্তরের পর এবং নির্ধারিত ৯০ কার্যদিবস শেষে অতিরিক্ত আরো ৩০ ও ১৫ কার্যদিবসের মেয়াদ গত ৯ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। এমতাবস্থায় আইন অনুযায়ী মামলাটি হবিগঞ্জ আদালতেই ফিরে যাওয়ার কথা। তবে মামলাটি দ্রুত বিচার আদালতে রাখতে রাষ্ট্রপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছে।
সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি কিশোর কুমার কর বলেন, ‘হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে সিলেট দ্রুত বিচার আদালতে এসেছিল কিবরিয়া হত্যা মামলাটি। দ্রুত বিচার আদালতে মামলাটি ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এ সময় পেরিয়ে যাওয়ায় নিয়মানুযায়ী মোট ৩৫ কর্মদিবস সময় বাড়ানো হয়। সেই সময় পেরিয়ে যায় গত ৯ ডিসেম্বর।’
তিনি আরো বলেন, ‘এমতাবস্থায় মামলাটি পুনরায় হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফিরে যাওয়ার কথা। তবে মামলার কার্যক্রম সিলেট দ্রুত বিচার আদালতে রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় আরো ১৩৫ কর্মদিবস সময় দিতে পারে কিংবা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে মামলাটি রাখার সিদ্ধান্ত দিতে পারে।’
তবে আইনে এরকম বিধান নেই বলে মন্তব্য সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি শহীদুল ইসলাম শাহীনের। তিনি বলেন, ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ১৩৫ কার্যদিবসে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে। এরপর সময় বাড়ানোর কোনো বিধান নেই আইনে।’