নির্বাচনী চ্যালেঞ্জে জেতার পেছনের গল্প জানালেন সামাদ পুত্র ডন

Dawnডেস্ক রিপোর্টঃ বাবা ছিলেন সিলেট অঞ্চল তথা জাতীয়ভাবে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ। মন্ত্রীত্ব থেকে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন আব্দুস সামাদ আজাদ। তাঁরই ছেলে আজিজুস সামাদ ডনও সম্পৃক্ত আছেন রাজনীতিতে। সদ্য সমাপ্ত পৌর নির্বাচনে নিজ পৌরসভা সহ সিলেটের বেশ কয়েকটি পৌরসভায় আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছেন তিনি। ২ জানুয়ারি (শনিবার) সকালে ফেসবুকে এক পোষ্টের মাধ্যমে নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ জয়ের গল্প জানিয়েছেন তিনি। ডনের ফেসবুক স্ট্যাটাস সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের উদ্দেশ্যে তোলে ধরা হল:

বাবার কথা মনে পড়ে। আমার নির্বাচন পরিচালন অভিজ্ঞতা খুব বেশী নয়। বাবার নির্বাচনে আমাদের কাজ ছিল পোষ্টার ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া, নির্বাচনের শেষ মিটিং’এ দুই লাইন কথা বলা আর ভোট দেয়া। শুধুমাত্র ২০০১ এর নির্বাচনে বাবা অসুস্থ থাকার কারণে নির্বাচনকে আরেকটু কাছ থেকে দেখবার সুযোগ হয়েছিল। সেটাও খুব বেশী নয়। শুধু পর্যবেক্ষণ করা যে, বাবার নেতা কর্মীদের দায়িত্ব পালনে কোন যায়গায় কোন খুঁৎ নজরে আসলে বাবাকে জানানো। পরবর্তীতে বাবা নির্বাচনের সাতদিন আগে যখন মাঠে এলেন তখন তার সাথে সাথে ঘুরেছি। ব্যাস এটুকুই। এবারই প্রথম নির্বাচনী দায়িত্ব পেয়ে খুব কাছে থেকে নির্বাচন দেখলাম, পরিচালনা করলাম।

সত্যি কথা বলতে কি, যখন আমি জানলাম এবারের স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে তখন আমমার মনে কিছু শঙ্কা অবশ্যই কাজ করেছিল। দলের মূল শক্তি তৃণমূলের নেতা কর্মীরা। এই সিদ্ধান্তের কারণে সেই তৃনমূলে ভাঙ্গন ধরতে পারে। কিন্ত দলের শক্ত অবস্থানের কারণে সেই ভাঙ্গন ধরে নাই। আমার আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমি মনে করি এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব জননেত্রী শেখ হাসিনার এবং যারা তাকে এ বিষয়ে সহযোগিতা দিয়েছেন সঠিক তথ্যের যোগান দিয়ে।

আজ এক পত্রিকার শিরোনাম দেখে একটু থমকে দাঁড়ালাম। “চ্যালেঞ্জে জয়ী সামাদ পুত্র ডন”। নিজের জয় শুনতে কার না ভাল লাগে। তারপরও ভাবতে বসলাম, আমার চ্যালেঞ্জটা কি ছিল। নিজের মনের কাছ থেকে উত্তর পেলাম, চ্যালেঞ্জ জয়টা ছিল আসলে প্রথম বারেই সুষ্ঠু ভাবে একটা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করা। আমি আমার নিজ পৌরসভা, সুনামগঞ্জ সদর পৌরসভা আর ছাতক পৌরসভায় দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছি। তাছাড়া, বড়লেখা, গোলাপগঞ্জকে আমার পর্যবেক্ষণে রেখেছিলাম, নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছিলাম। এ সুবাদে সিলেটের আরও বহু পৌর সভা থেকে আমার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আমি সব যায়গায় না গিয়েও চেষ্টা করেছি তাদের কথা কেন্দ্রে পৌঁছাবার। আমি তাদের বলেছি, আওয়ামীলীগের মূল শক্তি জনগণ, তাদের কাছে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরলেই জননেত্রী শেখ হাসিনাকে তারা জয়ী করবেই।

গোলাপগঞ্জ, বড়লেখায় উপস্থিত হয়েই আমি নির্বাচনী হৃৎস্পন্দন অনুভব করেছি। আর ছাতক তো আমার বাবার ঘাঁটি, আমার পূর্বপুরুষদের বাড়ি। এখানের মানুষ বাবাকে সবসময় যে ভালবাসা দিয়েছে তা ভুলবার নয়। ছাতক নিয়ে প্রথম থেকেই আমার মনে কোন দ্বন্দ্ব ছিলনা। তাই সেখানে পেছন থেকে যতটুকু করা প্রয়োজন করেছি। আমার মূল কাজ সীমাবদ্ধ ছিল সুনামগঞ্জ সদর ও আমার নিজের পৌরসভা জগন্নাথপুর। দুইটি আসনে পৌঁছে আমি প্রথমে কিছুটা কিংকর্তব্য বিমূড় হয়ে পরেছিলাম এটা সত্য। পরে বাবার কথা মনে হল। উনি তার রাজনৈতিক জীবনের বেশীর ভাগ সময় কাটিয়েছেন উজানে নৌকা বেয়ে। বাবার পথ ধরলাম, ভাবলাম, “সাগরে বেঁধেছি ঘর, শিশিরে কি ভয়”। আমার কাজ আমি নিষ্ঠার সাথে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরলাম।

বিরোধী দলীয় কিছু মানুষ এবারের নির্বাচন নিয়ে অনেক ব্যঙ্গাত্মক কথা বলার চেষ্টা করছেন। তাদের বলবো অতীতের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের নথিপত্র ঘাঁটতে। সে তুলনায় এবারের নির্বাচন শুধু সুষ্ঠুই বললে ভুল বলা হবে, ১০০% ভাগ শুদ্ধ নির্বাচন হয়েছে। আমি পত্রিকার খবরের ভিত্তিতে কথাটি বললাম। আর আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে যে কথাটি বলতে পারি তা হবে সুনামগঞ্জের ৪টি আসন ও সিলেট বিভাগের ১৬টি আসন নিয়ে। কোথাও কোন কারচুপির প্রশ্নই আসেনা। প্রতিটি পৌরসভায় মানবাধিকার কমিশন থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি ছিল বিপুল, সাংবাদিকেরা ছিলেন চূড়ান্ত তৎপর। এরপরও কেউ কোথাও কোন ত্রুটি দেখাতে পারেননি, পারবেনও না। এ জয় গণতন্ত্রের জয়, এ জয় জনগণের জয়। জনগণ তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বতে আস্থা রাখে, তার উন্নয়ন যজ্ঞ তাদের গোচরীভূত হয়েছে, তারা বিশ্বাস রাখে জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্লোগান শুধু স্লোগান নয়। তিনি আজকের রাজনীতি নয় আগামীকালের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে চান বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।

সবশেষে বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদদের উদ্দ্যশ্যে একটি কথা বলবো। জ্বালাও পোড়াও আর মানুষ হত্যার যে রাজনীতি আপনারা শুরু করেছিলেন, দেশদ্রোহী যে কর্মকাণ্ড আপনারা আস্থা রেখেছিলেন, জনগণ তার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। আমি জোড় গলায় বলতে পারি ২১ আগস্ট ২০০৪ এ আপনারা আওয়ামীলীগ কে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়ে অসুস্থ রাজনৈতিক ধারার সূত্রপাত করেছিলেন। এবার সুস্থ রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসুন, নয়তো জনগণের কাছে আপনারা অস্তিত্ব শূন্য হয়ে পরবেন। এবারের স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের রায় তাই প্রমাণ করে।

নিজ এলাকা জগন্নাথপুর পৌরসভা নির্বাচনে ডন সমর্থিত আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী আব্দুল মনাফ বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী হন। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তাঁর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৯ হাজার ৩২৪ ভোট। মনাফের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপির প্রার্থী রাজু আহমেদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৯১ ভোট। এ পৌরসভার স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ নুরুল করিম পান ১৭১১ ভোট।