নিরাপত্তার চাদরে সিলেট : ১৬ পৌরসভায় পৌছেছে নির্বাচনী সরঞ্জাম
ডেস্ক রিপোর্টঃ সিলেট বিভাগের ১৬টি পৌরসভায় পৌঁছেছে ব্যালট বক্স, ব্যালট পেপার ও অমোচনীয় কালিসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম। আজ মঙ্গলবার এগুলো ভোট কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌছাবে বলে সিলেটের উপ-নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয় সুত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, সিলেটের চার জেলার নির্বাচন অফিস থেকে পৌরসভা গুলোতে এসব সরঞ্জাম গতকাল সোমবারই পৌছে গেছে।
এছাড়া নির্বাচন কমিশন অন্যান্য আনুষাঙ্গিক প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে। গতকাল সোমবার রাত ১২টায় বন্ধ হয়ে গেছে সকল নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। ফলে এখন আর মাইকের শব্দদুষণ নেই। নেই কান ফাটা স্লোগানও। ফলে পৌরশহরগুলোতে অন্যরকম এক পরিবেশ বিরাজ করছে। এখন শুধু প্রার্থী-সমর্থকরা শেষ সময়ে এসে কে কোন কেন্দ্রে কত ভোট টানবেন এমন হিসেব কষছেন। আবার অনেক প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা রাত জেগে গোপনে প্রচারণা চালাবেন। কালো টাকা ছড়ানো রোধে থাকবে নির্বাচন কমিশনের টিম ও প্রার্থীদের পাহারা। অনেকেই আবার টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেস্টাও করবেন। ইতোমধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব রকম প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আজ সোমবার মধ্যরাত থেকে সিলেটসহ দেশের পৌরসভার গুলোর নিরাপত্তায় র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি নামানো হচ্ছে বিজিবি সদস্যদের। নির্বাচন পরবর্তী দিন আগামি ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিজিবি সদস্যরা নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে মাঠে থাকবে। দেশের অন্যান্য পৌরসভার সাথে গতকাল মধ্যরাতে সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ জেলার সুনামগঞ্জ, জগন্নাথপুর, ছাতক ও দিরাই, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, মৌলভীবাজার, বড়লেখা, কমলগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলার হবিগঞ্জ, নবীগঞ্জ, মাধবপুর, সায়েস্তাগঞ্জ ও চনারুঘাট পৌরসভায় সব ধরণের নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌছেছে বলে স্ব-স্ব জেলার নির্বাচন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। সিলেট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আজিজুল ইসলাম জানান, নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করতে নির্বাচনী কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রস্তুত রয়েছেন। গত রোববার তাদের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। নির্বাচনী কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারসহ সকল ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারাও প্রস্তুত। আজিজুল ইসলাম আরো জানান, পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্ট্যাম্প প্যাড, লাল সিলগালা, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্র্যাশ সিল, অমোচনীয় কালি, হেসিয়ান বড় ব্যাগ ও হেসিয়ান ছোট ব্যাগসহ নির্বাচনী সব উপকরণ পাঠানো হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিরা ওইসব উপকরণ গ্রহণ করেছেন। এসব উপকরণ নির্বাচনের আগেরদিন মঙ্গলবার (আজ) কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছানো হবে। এবারই প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনকে ঘিরে সিলেট বিভাগের সর্বত্র বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। বিভাগের ১৬টি নির্বাচনী এলাকার ৩ লাখ ৪০ হাজার ভোটার অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন ৩০ ডিসেম্বরের দিকে। ওই দিনই ভোটাররা বেছে নিবেন তাদের পছন্দের পৌর পরিষদ। এদিকে সিলেটের চার জেলায় ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ১৬ পৌরসভার ১৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৪৬টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে সিলেটের তিন পৌরসভায় ২৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৫টি, মৌলভীবাজারে চার পৌরসভায় ৪১টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৮টি, হবিগঞ্জে পাঁচটি পৌরসভায় ৫৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৩টি এবং সুনামগঞ্জে চারটি পৌরসভায় ৬৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪০টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া হবিগঞ্জের ৫৭টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে জানান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান মনির। মৌলভীবাজার জেলায় চার পৌরসভায় ৪১টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৮ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার মো. শাহজালাল।
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুনুর রশিদ বলেন, জেলার চার পৌরসভায় ৬৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪০টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকা করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের হিসেবে অনুযায়ী নিরাপত্তা চকও সাজানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে।
সিলেট বিভাগের সিলেট জেলায় ৩টি, সুনামগঞ্জে ৪টি, মৌলভীবাজারে ৪টি এবং হবিগঞ্জে ৫টি পৌরসভায় মেয়র পদে ৭৫ জন, কাউন্সিলর পদে ৫৮৪ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৫৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। ৮১২ প্রার্থী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকরা প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় পৌর নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণের আগ্রহও বেশ তুঙ্গে।
এদিকে গত রোববার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর সকাল ৬ পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। আর নির্বাচনী এলাকাতে সব ধরনের যান্ত্রিক যান চলাচল বন্ধ থাকবে ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত।