এবার ১৯৫ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর তথ্য সংগ্রহ শুরু
ডেস্ক রিপোর্টঃ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাক হানাদার বাহিনীকে সহায়তাকারী রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর নেতাকর্মীদের বিচার শুরুর পর এবার ১৯৫ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)।
রোববার দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হাননান খান।
তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তদন্ত করছেন না তারা। সরকারের নির্দেশনা এলেই এবং ক্ষেত্র তৈরি হলেই আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করবেন তারা।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা পরবর্তী তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বাছাইকৃত ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনাকর্মকর্তার বিচারের জন্য সংসদে স্বতন্ত্র একটি আইন তৈরি করেছিল ১৯৭৩ সালে। কিন্তু ১৯৭৪ সালে সবাইকে ক্ষমা করে দিয়ে ৯২ হাজার পাকিস্তানি সেনাকে ভারত থেকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পাকিস্তান তখন এদের বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
তবে পাকিস্তানিদের সহায়তাকারী এবং খুন, ধর্ষণ, লুটতরাজ, ঘরবাড়িতে আগুন দেয়াসহ কয়েকটি অপরাধে দেশীয় যারা জড়িত ছিল তাদের বিচার চলমান ছিল। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান সরকার তা বন্ধ করে দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় গাইবান্ধা ও হবিগঞ্জের আট রাজকারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে তদন্ত সংস্থা। এদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।
১৯৫ যুদ্ধাপরাধী, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ
প্রধান যুদ্ধাপরাধী
এই আটজন হলেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা এবং গাইবান্ধা-১ আসনে জামায়াত ইসলামীর সাবেক সংসদ সদস্য আবু সালেহ মোহাম্মদ আবদুল আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ, সুন্দরগঞ্জের মোহাম্মদ রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু, মোহাম্মদ আবদুল মতিন, আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ নাজমুল হুদা, মোহাম্মদ আবদুর রহিম মিয়া। এদের প্রত্যেকের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। এরা প্রত্যেকেই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। অপর দুই জন হলো- হবিগঞ্জের লাখার থানার মো. লিয়াকত আলী ও আমিনুল ইমলাম ওরফে রজব আলী।এদের মধ্যে মো. লিয়াকত আলী লাখাই থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। অপরজন আমিনুল ইসলাম স্বঘোষিত আলবদর নেতা ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আবদুল হাননান খান বলেন, ‘একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পরও জামায়াত নেতা আবদুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম ধরে রেখেছেন। আজিজ একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধা মারতে গিয়ে একটা ঘোড়া মেরে ফেলেছিল বলে কথিত থাকায় স্থানীয়ভাবে তিনি ঘোড়ামারা আজিজ বলে পরিচিত। এই মানবতাবিরোধী অপরাধী ২০০১ সালে জামায়াতে ইসলামী থেকে গাইবান্ধা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।’
আজিজসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে একাত্তরে সুন্দরগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ ১৩ জনকে হত্যা-গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলার সাক্ষী ২৫ জন ও জব্দ তালিকার ৩ জন সাক্ষী রয়েছে।
অপরদিকে, আরেকটি মামলায় হবিগঞ্জের রাখাই থানার দুই আসামি আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলী ও লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা। এই দু’জনের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও লুটপাটের সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
হান্নান খান জানান, আমিনুল ইসলাম স্বঘোষিত আলবদর নেতা। নিজেও বই লিখেছেন ‘আমি আলবদর বলছি’। আর লিয়াকত হোসেন লাখাই থানা আওযামী লীগের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি ওই পদে নেই।
রোববারই তদন্ত প্রতিবেদন দুটি প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেয়া হবে বলে জানান আবদুল হান্নান খান।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এসময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা উপস্তিত ছিলেন।