জ্যাকেট কিনতে বন্ধুকে হ্ত্যা! সেফটিক ট্যাংক থেকে লাশ উদ্ধার
ডেস্ক রিপোর্টঃ কুড়িগ্রাম শহরের ব্যবসায়ী সুলতান আহম্মেদের একমাত্র ছেলে স্কুলছাত্র আলিফ আহম্মেদ স্বপ্নের (১৪) গলিত লাশ শৌচাগারের সেফটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শহরের ভেলাকোপা এলাকার হানাগর পাড়ার কুড়িগ্রাম সদর হাপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মোর্শেদা বেগমের বাড়ির সেফটিক ট্যাংক থেকে ওই লাশ উদ্ধার করা হয়। স্বপ্ন চারদিন ধরে নিখোঁজ ছিল।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার ঘটনায় পুলিশ মোর্শেদা বেগম ও তাঁর ছেলে রিফাতকে আটক করে। রিফাত ও নিহত স্বপ্ন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। স্বপ্ন কুড়িগ্রাম কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র ছিল। আর রিফাত ছিল কুড়িগ্রাম রিভার ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র।
কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুর্শেদুল করিম মোহাম্মদ এতেশাম জানান, কুড়িগ্রাম শহরের সরদারপাড়ার খাদ্য ব্যবসায়ী সুলতান আহম্মেদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। গত ২১ ডিসেম্বর সোমবার সকাল ১০টার দিকে আলিফ আহম্মেদ স্বপ্ন তার মা ফরিদা ইয়াসমিনকে বলে, বন্ধু রিফাতের সঙ্গে কথা বলে আসছে। এরপর আর তার ফেরা হয়নি। স্বপ্নর মুঠোফোনও ছিল বন্ধ। সারা দিন খোঁজাখুঁজির পর পরিবারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার কুড়িগ্রাম সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। নিখোঁজের ঘটনার পর থেকে রিফাতের মা মোর্শেদা বেগম রিফাতের সঙ্গে কাউকে কথা বলতে দিচ্ছিল না। পুলিশের সন্দেহ হলে বুধবার রাতে মা ও ছেলেকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ওসি জানান, আজ সকালে রিফাত আত্মগোপন করে। আর মোর্শেদা বেগম ফোন বন্ধ রাখেন। বিকেলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোর্শেদা বেগম ও রিফাতকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে স্বপ্নকে খুনের ঘটনা স্বীকার করে তারা। তাদের দেওয়া তথ্যের সূত্রধরে তাদের বাসার শৌচাগারের সেফটিক ট্যাংক ভেঙে স্বপ্নর গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে এই খবর পেয়ে হাজার হাজার মানুষ মোর্শেদার বাড়িতে ভিড় করে। ঘটনাস্থলে ছুটে যান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ, সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদ আলম ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম।
এদিকে লাশ উদ্ধার করার খবরে স্বপ্নের পরিবারে শোকের মাতম শুরু হয়। গোটা সরদারপাড়ায় নেমে আসে শোকের ছায়া। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বারবার মূর্চ্ছা যান বাবা সুলতান আহম্মেদ ও মা ফরিদা ইয়াসমিন। শোকাহত স্বজন ও প্রতিবেশীরাও সান্ত্বনা জানানোর ভাষা ভুলে যান। সবার চোখে গড়িয়ে পড়ে পানি। টক টকে ফর্সা, উচু লম্বা মেধাবী স্বপ্ন আর নেই এ কথা ভাবতেও পারছে না কেউ।
প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম জানান, নার্স মোর্শেদা বেগমের গ্রামের বাড়ি নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা এলাকায়। প্রথম স্বামী রেজাউল মারা গেলে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী আতাউর রহমানকে বিয়ে করেন। এক বছর আগে জেলা শহরের ভেলাকোপার হানাগরপাড়ায় বাড়ি তৈরি করে বসবাস করে আসছেন। বিশাল দেহের অধিকারী মোশের্দা প্রায়ই স্বামী আতাউরকে মারধর করতেন। এরই একপর্যায়ে তিন মাস আগে সালিশের মাধ্যমে তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। একমাত্র ছেলে রিফাতকে নিয়ে মোর্শেদা ওই বাড়িতে থাকেন। তবে ওই বাসায় কারো যাতায়াত নিষিদ্ধ ছিল। স্থানীয় আবেদ আলী নামের একজন বাড়িটি পাহারা দেন। আর রাবেয়া বেগম নামের এক নারী গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। এর বাইরে ওই বাসায় কারো প্রবেশাধিকার ছিল না। তাঁদের চলাফেরা, আচার-আচরণ সবই ছিল রহস্যময়।
সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল-এ) মাসুদ আলম জানান, অভিযুক্ত মোর্শেদা ও রিফাত ধুরন্ধর প্রকৃতির। রিফাত তার নাগেশ্বরী এলাকার এক বন্ধু আকাশের সহায়তায় এ হত্যার ঘটনা ঘটায়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আকাশ নাগেশ্বরী থেকে কুড়িগ্রামে আসে একটি জ্যাকেট কিনতে। কিন্তু টাকা নেই। তখন রিফাতসহ বুদ্ধি করে স্বপ্নকে শিকার বানাতে। রিফাত প্রথমে মোবাইল ফোনে স্বপ্নকে ডেকে আনে।
ফাঁকা বাড়িতে দুই বন্ধু স্বপ্নকে হাত-পা বেঁধে ফেলে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল মুক্তিপণ আদায় করা। কিন্তু ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা স্বপ্নকে বাগে আনতে পারছিল না। চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে তারা ভয় পেয়ে যায়। একপর্যায়ে মাফলার দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরলে স্বপ্নের মৃত্যু হয়। পরে অন্যদের সহায়তায় লাশ গুম করতে বাড়ির সেফটিক ট্যাংকে ঢুকিয়ে দেয়।