এয়াহিয়া আর হাসিনা সরকারের মধ্যে কোন প্রার্থক্য নেই
নিউইয়র্কে সিকিউরিটি বেস্টিত সভায় সাদেক হোসেন খোকা
নিউইয়র্ক থেকে এনা: বর্তমান শেখ হাসিনারের সাথে পাকিস্তানের স্বৈরশাসক এয়াহিয়া সরকারের কোন প্রার্থক্য নেই। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের এয়াহিয়া সরকার যেভাবে গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাংলাদেশে মানুষ হত্যা করেছিলো, জেল- জুলুম- হুলিয়া জারি করে অত্যাচার করেছিলো ঠিক একই কায়দায় বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করার চেষ্টা করছে এবং মানুষের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করছে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে অত্যাচার করছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রথমে নিজেকে রাষ্ট্রপতি বলেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার তিনি একে খন্দকারের অনুরোধে শেখ মুুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। গত ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একাংশ আয়োজিত সিকিউরিটি বেস্টিত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা এ সব কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শারাফত হোসেন বাবুর সভাপতিত্বে ও কোষাধ্যক্ষ জসীম ভুইয়ার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ড. শওকত আলী, তারেক পরিষদ আন্তর্জাতিক কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আকতার হোসেন বাদল, সাধারণ সম্পাদক ভিপি জসীম, নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সভাপতি মাওলানা অলিউল্যাহ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, বিএনপি নেতা আব্বাস উদ্দিন দুলাল, গিয়াস উদ্দিন প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাদেক হোসেন খোকা বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কোন উচ্চভিলাসী মানুষ ছিলেন না। ভবিষ্যতে রাষ্ট্রপতি হবেন এমন চিন্তা করে স্বাধীনতার ঘোষণাও দেননি। শেখ মুজিব যখন পাকিস্তানীদের বাহিনীর হাতে ধরা দেন, তখন জাতিকে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করতেই শহীদ জিয়া প্রথমে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আপনারা নিশ্চয় জানেন, পাকিস্তানের ২২ পরিবারের কথা। সেই ২২ পরিবারের একটি পরিবার হলো চট্টগ্রামের খান পরিবার। সেই পরিবারের এ কে খন্দকার জিয়াউর রহমানকে বলেছিলেন, আপনি শেখ মুুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, তা নাহলে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে। এই সময় বাঙালিকে বিভ্রান্তি করা যাবে না। তখন জিয়াউর রহমান তার দ্বিতীয় ঘোষণাটি দেন শেখ মুজিবের পক্ষে। সুতরাং জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষক। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধে শেখ মুজিবের অবদানকে খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই। তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, আপনারা যারা শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণকে স্বাধীনতার ঘোষণা বলার চেষ্টা করছেন, তাহলেতো আপনাদের বক্তব্য অনুযায়ী ৮ মার্চ স্বাধীনতা দিবস হবার কথা, ২৬ মার্চ কেন স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়? অন্যদিকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা তাজউদ্দিন সাহেব ৭ মার্চের পর শেখ মুজিবের পেছনে পেছনে ঘুরেছিলেন টেপ রেকর্ডার নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেবার জন্য। সেই সময় শেখ মুজিব বলেছিলেন, আমি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহী হতে চাই না এবং হটকারি সিদ্ধান্ত নিতে চাই না। এটা তাজউদ্দিনের কন্যাই তার বইতে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণকে স্বাধীনতার ঘোষণা বলার অর্থ হচ্ছে ইতিহাস বিকৃত করা। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বলেন, এই বিচার স্বচ্ছ না। এই বিচার যদি স্বাধীনতার পরপরই মুজিব সরকার করতো তাহলে প্রশ্ন থাকতো না। আজকে মিথ্যা সাক্ষী এবং মিথ্যা কাগজপত্র দিয়ে বিচার করা হচ্ছে। ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বিচার দাবি করে তৎকালীন শেখ মুজিব সরকারের কাছে স্মারকলিপি দেয়ার জন্য পান্না কায়সার এবং সূচন্দা বঙ্গভবনে যেতে চেয়েছিলেন, তাদের বঙ্গভবনে যেতে দেয়া হয়নি। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সেই দিন সাংবাদিক সেলিনা পারভীন এবং ডা. আলিমের লাশ উদ্ধার করেছিলাম বদ্ধভূমি থেকে। তখন যদি মুজিব সরকার বুদ্ধিজীবী হত্যর সঠিক তালিকা করে বিচার করতো তাহলে আজকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠতো না। শেখ হাসিনা সরকারকে এই বিচারের দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে বলেন, বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার ও পাকিস্তানের স্বৈরশাসক এয়াহিয়া সরকারের মধ্যে কোন প্রার্থক্য নেই। এয়াহিয়া সরকার গণতন্ত্র হত্যা করে, মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে, জেলে- জুলুম- হুলিয়ার মাধ্যমে স্বাধীনতাকামী বাঙালির উপর যেভাবে ঝাপিয়ে পড়েছিলো, শেখ হাসিনা সরকারও একই কায়দায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল কায়েমের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যদি গণতন্ত্রই প্রতিষ্ঠা করা না যায়, আমাদের স্বাধীনতা অপূর্ণ থেকে যাবে।
বিএনপি এই সভার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি আরেকটি সভা একই সময়ে জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার নেতৃত্বে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ স¤্রাট, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি গিয়াস আহমেদ, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, সাবেক সহ সভাপতি সোলায়মান ভুইয়া, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজম, জাসাসের সভাপতি গোলাম ফারুক শাহীন প্রমুখ। ঐক্যবদ্ধ বিএনপির নেতৃবৃন্দ সাদেক হোসেন খোকা যে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সেই সভা প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। যে কারণে সিকিউটি রাখা হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ বিএনপির নেতৃবৃন্দ প্রতিরোধে না গিয়ে আগামী ৩ জানুয়ারি কর্মী সমাবেশে ঘোষণা দেন। সেই অনুষ্ঠানে সাদেক হোসেন খোকা প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের অভিযোগ উপস্থাপন করবেন। এদিকে এই অনুষ্ঠান থেকে সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনকে আমেরিকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয় এবং তার স্টেট কমিটির গঠনের প্রক্রিয়াকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আব্দুল খালেক আকন্দ, সেলিম রেজা, জীবন শফিক, মাকসুদ চৌধুরী। এ অনুষ্ঠান থেকে কিছু নেতাকর্মী ঐ অনুষ্ঠান প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে হলত্যাগে করতে চাইলে সিনিয়র নেতারা তাদের বাধা দেন এবং কর্মী সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে তাদের শান্ত করেন।