মৌলবাদ রুখতে “মুক্তচিন্তা আন্দোলন”

Ganajagaran+Mancha_Blogger_140815_0003মৌলবাদ রুখতে এবং মৌলবাদের কালো থাবা থেকে ব্লগার, অসাম্প্রদায়িকতা এবং বাক স্বাধীনতাকে সুরক্ষা দিতে “মুক্তচিন্তা আন্দোলন” নামে প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনসাধারণের সমন্বয়ে নতুন একটি আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকালে ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় স্মরণে গণজাগরণ মঞ্চ কর্তৃক আয়োজিত নাগরিক শোক সমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।
বিকাল চারটার কিছু পরে বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শোকসমাবেশের কর্মসূচি শুরু হয়। সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, যুব ইউনিয়ন, প্রগতি লেখক সংঘ, সমাজচিন্তা ফোরাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি প্রমুখ সংগঠন।
গনজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, “একাত্তরের আলবদররাই নতুন নাম নিয়ে নতুন হত্যার খেলায় মেতেছে। তারা বেছে বেছে তাদেরকেই হত্যা করছে, যারা যুদ্ধাপরাধের বিচারে সোচ্চার, যারা জামাত-শিবিরের রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। তারা যে নামেই আসুক, তাদের মূল উদ্দেশ্য যে জামাতের অস্তিত্ব রক্ষা, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেই এই খুনি মৌলবাদীদের মূলোৎপাটন সম্ভব, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
গতকাল সাদ নামের যে জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হল, তার তো জেলখানায় থাকার কথা। এর আগে এক ব্লগারের উপর হামলার অপরাধে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আমি স্পষ্টভাবে জানতে চাই, তাহলে কি নীলাদ্রিকে হত্যার জন্যই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল? তার একটি রাজনৈতিক পরিচয় আছে। সে সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রীর ভাতিজা। তাকে ছেড়ে দিয়ে নীলাদ্রিকে হত্যার সুযোগ করে দেয়ার দায় তাহলে সরকার এড়াতে পারে কিনা, আমি জানতে চাই”।
আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি সীমালঙ্ঘনের কথা বলেছেন। জঙ্গীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে আপনারা সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন, এটা কি সীমালঙ্ঘন নয়? বৈষম্যমূলক মাদ্রাসা শিক্ষা চালু রেখে, কৃত্তিম বৈষম্য বজায় রেখে আপনারা যে দুটি শ্রেণীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে রেখেছেন? এটা কি সীমালঙ্ঘন নয়? আপনাদের ভুলের খেসারত হিসাবে আজকে নতুন প্রজন্মকে, যারা সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়, তাদেরকে চাপাতির আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে। এর দায় কার?
একে একে চারজন ব্লগারকে এই ২০১৫ সালে ছয় মাসের মধ্যে হত্যা করা হল। আপনারা তামাশা দেখছেন আর বারবার বলছেন অপেক্ষা করতে, সীমালঙ্ঘনের কথা বলছেন। আপনাদের সীমা কোথায় সেটিও আমার জানতে ইচ্ছা করে। বাংলাদেশের জনগণের কাছে আপনাদের কি কোনো দায়বদ্ধতা নেই? আপনাদের কথায় মনে হচ্ছে, সেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মত আপনারা একটি কলোনি পেয়েছেন,শোষণ করতে এসেছেন,শোষণ করছেন আর আপনারা যাই বলবেন তাই জনগণকে মেনে নিতে হবে।
সরকারের কর্মকতাদের বক্তব্য দেখলে মনে হয় তারা রাজনীতি করতে এসেছেন। তাদের মনে রাখতে হবে তারা জনগণের সেবক”।
“মুক্তচিন্তা আন্দোলন” এর ঘোষণা দিয়ে ইমরান এইচ সরকার বলেন, “সকল প্রগতিশীল সংগঠনের সাথে মতবিনিময় করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নতুন একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের, যে আন্দোলন সুরক্ষা দেবে ব্লগারদের, যে আন্দোলনের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িকতার বাণী সমাজের সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেয়া দেয়া যাবে এবং মানুষের মত প্রকাশের অধিকার সংরক্ষণের আন্দোলনকে জোরদার করা যাবে। “মুক্তচিন্তা আন্দোলন” হবে আমাদের সেই জাতীয় ঐক্যের জায়গা। আমরা আগামী ১৫ দিন ধরে এর সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি, জনসংযোগ ও প্রচারণার কাজ চালিয়ে যাব। আমরা এই শোক সমাবেশ থেকে “মুক্তচিন্তা আন্দোলন” এর সাংগঠনিক কাঠামো ঘোষণা করছি। সর্বসম্মতিক্রমে এই আন্দোলনের ১০১ সদস্য বিশিষ্ঠ উপদেষ্টা কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য ইতোমধ্যেই সম্মতি জানিয়েছেন শহিদ সহযোদ্ধা ডঃ অভিজিৎ রায়ের পিতা ডঃ অজয় রায়। এছাড়া আমরা ৭১ সদস্য বিশিষ্ঠ জাতীয় কার্যকরী কমিটি ও ২১ সদস্য বিশিষ্ঠ স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করব। আগামী ২৮ আগস্ট শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে “মুক্তচিন্তা আন্দোলন” এর উদ্যোগে জনসমাবেশ আয়োজিত হবে। ২৮ আগস্টের জনসমাবেশ থেকে পরবর্তী বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে”।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, “রাজপথের আন্দোলন ছাড়া সমাজে কোনো শুভ পরিবর্তন সংঘটিত হয়না। রাজনৈতিক দলগুলোকে সে আন্দোলনে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে।
বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জঙ্গীবাদমমুক্ত করতে সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে রাজপথের এই আন্দোলনে অংশ নিতে হবে। “মুক্তচিন্তা আন্দোলন” কে শক্তিশালী করার জন্য আমি সকল প্রগতিশীল সংগঠন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষদের আহ্বান জানাচ্ছি”।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন লাকি আক্তার, জনার্দন দত্ত নান্টু, আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন, ভাস্কর রাসা, কামাল হোসেন বাদল, ডাক্তার নাজিম উদ্দিন, ডঃ মেসবাহ কামাল, অধ্যাপক বদিউর রহমান, নাসিমুন আরা হক, নজরুল কবির, তাহমিনা সুলতানা স্বাতী, সৈয়দ হাসান ইমাম, সৈয়দ আবুল মকসুদ, রোকেয়া রফিক বেবি, হায়দার আকবর খান রণো, মঞ্জুরুল আহসান খান প্রমুখ। সমাবেশ শেষে এযাবৎকালের প্রগতিশীল আন্দোলনের সকল শহিদের স্মরণে আলোক প্রজ্জ্বলন করা হয়। বিজ্ঞপ্তি