তিন ইস্যু নিয়ে পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা করছে সরকার
ডেস্ক রিপোর্টঃ আসন্ন পৌর নির্বাচনের ফলাফল সরকারের পক্ষে গেলে বিএনপি তা মেনে নিবে না। সেটা মেনে না নিয়ে নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ আনবে। এই ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালাবে। পৌর নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বর হবে। এর পাঁচদিন পর সামনে রয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই বছর পুর্তির দিন ৫ জানুয়ারি। ওই দিনকে গণতন্ত্র হত্যা ও কালো দিবস ঘোষণা করে বিএনপি কর্মসূচি দিতে চাইছে। এরসঙ্গে তারা যুক্ত করতে চাইছে পৌর নির্বাচনের বিষয়টি। এই দুই ইস্যুকে সামনে রেখে তারা নতুন করে আন্দোলনে যেতে চাইছে। সরকারের ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে খবর রয়েছে তারা তাদের উদ্দেশ্য সফল করার জন্য নানা ধরনের কৌশল নিবে। সেই সঙ্গে আগামী ৬ জানুয়ারি রয়েছে জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মামলার রায়ের তারিখ। ওই দিন আপিল বিভাগ তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আপিলের রায় দিবে। সেই হিসাবে জামায়াতও প্রস্তুতি রেখেছে নিজামীর বিরুদ্ধে আগের রায় বহাল থাকলে নতুন করে কর্মসূচি দেওয়ার। এরমধ্যে তাদের হরতালের পরিকল্পনাও রয়েছে। সব মিলিয়ে এই তিন ইস্যুকে সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াতও সরকারের উপর চাপ তৈরি করতে চাইছে।
সূত্র জানায়, বিএনপির উদ্দেশ্য সরকারকে সংলাপে বসানো আর আগাম নির্বাচনে রাজি করানো। আর জামায়াত লক্ষ্য এই দুটি ছাড়াও তাদের আমিরকে মুক্ত করে আনা। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই আশঙ্কা থেকেই নানা ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এরই অংশ হিসাবে তারা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমেরও উপর নজরদারি করছে। কারণ তারা মনে করছে বিএনপি ও জামায়াত পুলিশের ভয়ে মাঠে নামতে না পারায় সামাজিক মাধ্যমগুলো ব্যবহার করবে সেটাও যাতে করতে না পারে সেটাও প্রতিহত করতে চাইছে।
সূত্র জানায়, আমরা জানতে পেরেছি তিন ইস্যুকে সামনে রেখে তারা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এখন তারা মুখে জনগণের স্বার্থের কথা আর ঐক্যের কথা বললেও আসলে সেটা ঠিক নয়। এর পেছনে রয়েছে আগাম নির্বাচন আর ক্ষমতায় যাওয়া। মানবতাবিরোধি অপরাধে সাজাপ্রাপ্তদের রক্ষা করা ও এই বিচার কাজ বন্ধ করে দেওয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা জানি তারা দেশে বিদেশে ষড়যন্ত্র করছে, তাদের সঙ্গে বাইরে কেউ কেউ কাজ করছে। এই ষড়যন্ত্র আমরা নস্যাৎ করে দেব। তারা কিছুই করতে পারবে না। নানা দিক বিবেচনা করেই আমরা নানা ব্যবস্থা নিচ্ছি। তারা এগুলো করবে আর আমরাতো বসে থাকবো না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে যাতে কেউ সরকার বিরোধী প্রচারণা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড কিংবা নাশকতার ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করতে না পারে ও এবং একটি বিষয়ে সংগঠিত হয়ে দেশে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা কিংবা আন্দোলন করতে না পারে সেই ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে সরকার। সরকারের এই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে তাদের নজরদারি আরো বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তারা যাতে করে আরো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় সেই নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসাবে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সকলের ফেস বুকের পাসওয়ার্ডও তারা তাদের আয়ত্ত্বের মধ্যে নিয়ে এসেছে। এতোদিন যে কারো ইমেইলের পাসওয়ার্ড তারা বের করে এরপর তাদের মেইল চেক করতে পারতো। এখন এর পাশাপাশি ফেস বুকেরটাও পারবে। দিন যত যাচ্ছে সরকার ডিজিটাল সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণেও আনতে চাইছে। এই জন্য সরকার বিভিন্ন সামজিক মাধ্যমগুলোকে নজরদারিতে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে ফেস বুকের ব্যাপারে সক্ষমতা অর্জন করেছে। এখন যে কেউ চাইলেও তার ফেসবুকের কোন তথ্য গোপন রাখতে পারবে না। যারাই ফেস বুক ব্যবহার করবে তাদের সেই ফেস বুকের ব্যাপারে কোন সন্দেহ হলে সেটা গোয়েন্দারা জানতে পারবে এবং সেটা জেনে এরপর দেখতে পারবে ওই ফেস বুকের মাধ্যমে কোন কোন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তির সাথে কি ধরনের যোগাযোগ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এই ব্যাপারে কিছু কিছু নামের ফেস বুককে নজরদারীতে রাখা হয়েছে। ওই সব ফেস বুকে কারা ঢুকে এবং কারা কোন জায়গা থেকে কোন সার্ভার ব্যবহার করছে। পাশাপাশি তারা কি ধরনের যোগাযোগ করছে, সেটা দেখা হচ্ছে। তাদের নজরদারীও করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, এখন সরকার চাইলে সন্দেহভাজন যে কারও ফেসবুকে লগইন করতে পারবে। দুই জন বিদেশী হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ার পর, পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ধর্ম যাজককে হত্যার চেষ্টা এবং মসজিদের ইমামের উপর হামলা ও হত্যার ঘটনা, তাজিয়া মিছিলে হামলার ঘটনায় সরকার আরো সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দারা দেখেছে, যারা নেতিবাচক কাজে ফেস বুক ব্যবহার করছে তাদের কেউ কেউ সেটা করে আবার তাদের ব্যবহƒত আইডিগুলো সম্পূর্ন রূপে নিস্ক্রিয় করার চেষ্টা করে। পাশাপাশি সেখান তথ্য মুছে ফেলে। এতে করে যাদের গ্রেপ্তার করা হয় তাদের ফেস বুকে অনেক সময় সব তথ্য থাকে না। তারা না দিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেরাও তা বের করতে পারে না। এতে করে সমস্যা তৈরি হতো। সেই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এরই অংশ হিসাবে এখন কেউ তার কোন ফেসবুক বন্ধ করে দিলে কিংবা সব তথ্য মুছে ফেললে কিংবা হাইড করলেও ফেস বুক অথ্যরিটি ছাড়াও বাংলাদেশে থেকে সেটা বের করা সম্ভব হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, এনটিএমসিকে সরকার আরো সুবিধা দিয়ে নতুন করে ঢেলে সাজাতে চাইছে। তাদের সুযোগ সুবিধাও বাড়াতে চাইছে যাতে করে তারা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে। তাদের পাশাপাশি এতোদিন গোয়েন্দারা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিটিআরসি এই ব্যাপারে কাজ করতো। তারাও অনেক সময় সব তথ্য বের করতো সক্ষম হতো না। তারা যাতে আগামীতে এই ধরনের কোন সমস্যা হলে কে কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে সেটা বের করতে সক্ষম হয় তা সেই চেষ্টাতে সফল হতে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের দাবি, আইনশৃংখলা বাহিনী ও সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সক্ষমতা আছে। তবে তা আরো বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। সেই জন্য এটা বৃদ্ধি করা হয়েছে। দিন ও যুগের চাহিদার সাথে তা আরো বাড়ানো হবে। বাংলাদেশ নাশকতা ঠেকাতে, সন্ত্রাস দমনে ব্যাপকভাবে কাজ করছে। সব কথা হয়তো আপনারা জানতেও পারছেন না। কিন্তু আমরা সফলভাবেই সব ধরনের হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। সফলও হচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি এই সব ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে। বিশ্বের সন্ত্রাস দমনে যেই সব দেশগুলো সফল হয়েছে তাদের সুবিধাগুলো কি কি সেটা দেখতে। সেই হিসাবে আমরা কাজ করছি।
আগামী দিনে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে, আধুনিক ডাটা সেন্টার স্থাপন, নানা ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করার। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তৈরি করার কাজ করছি। সেইসঙ্গে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছি। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)কে আরো সুবিধা দেওয়া হবে। আমরা আগে ফেস বুক মনিটরিং সরাসরি করতে পরতাম না এখন সেটা করা যাচ্ছে। যারা অপরাধ করবে তাদেরকে সহজেই ধরা সম্ভব হবে। সেই প্রযুক্তি আনা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ডিটিজাল পদ্ধতি ব্যবহারের যে সব ঝুঁিক রয়েছে সেগুলো যাতে ব্যবহার করতে না পারে এবং এগুলো যাতে ভাল কাজে ব্যবহার করা হয় সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তাও দেওয়া হয়েছে। আরো দেওয়া হবে। একটি সংস্থার সূত্র জানায়, সন্ত্রাসী ও নাশকতার পরিল্পনাকারীদের অনেকেই বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করছে। এটা করে তারা এক জায়গায় সংগঠিত হচ্ছে। তারা বেশির ভাগ সময় মোবাইল ফোন এড়িয়ে চলে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সব সময় তাদের কথা পাওয়া যায় না এবং গতিবিধিও জানা যায় না। কারণ তারা যখন দেখা করে তখন পরবর্তী দেখা কোথায় হবে সেটা ঠিক করে নেয়। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কেবল দিন ও সময় ঠিক করে। এই কারণে অনেকেই ধরা যায় না। এগুলো আমরা যাদেরকে ধরেছি তাদের কাছ থেকেই জানতে পেরছি। আমরা যেমন সতর্ক অপরাধীরাও তেমনি সতর্ক। তারাও নানা রকমের কৌশল করছে। আমাদেরকে সেই সব কৌশল বিবেচনা করেই এগুতে হচ্ছে। এমনকি আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সহ এই সংশ্লিষ্ট নামের যতগুলো সাইট আছে সবগুলোই তারা সামাজিক মাধ্যমে করছে। তাদের এমনিতে আলাদা করে কোন অফিস নেই। তারা এই সব সামাজিক মাধ্যম আর ইন্টারনেটেই যোগাযোগ রাখছে। বিভিন্ন সময় বার্তা দিচ্ছে। এটা যে কেবল দেশ থেকে দিচ্ছে, তাই নয় বিদেশ থেকেও দিচ্ছে। তাতে আমরা বুঝতে পারি তাদের বিদেশেও নেটওয়ার্ক আছে। কিন্তু আমরা সেটা বের করতে পারছি না। এই কারণে তাদেরকে এখনও ধরা যাচেছ না। আমরা তাদেরকে ধরার জন্যও ব্যবস্থা নিচ্ছি। সরকারের কাছে এই সব বিষয় জানানো হয়েছে। এরপর সরকার সাইবার ক্রাইম কমানোর জন্য আরো তৎপরতা বৃদ্ধি করে। সেই হিসাবে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতিও সংগ্রহ করা হয়। আরো করা হবে। এখন থেকে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যদি সন্ত্রাস, নাশকতার ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে কিংবা হত্যা করার পরিকল্পনা করে অথবা হুমকি প্রদান করে তাদেরকে ধরার ব্যবস্থা করা হবে পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে অপপপ্রচার চালানোর জন্য ও সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য বিএনপি জামায়াত ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় আগামী ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে তারা একটা ব্যাপক চেষ্টা করতে পারে। একদিকে পৌর নির্বাচনে জয়ী হতে না পারলে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালাবে। ৫ জানুয়ারি তারা নতুন করে সংগঠিত হতে চেষ্টা করবে। আবার ৬ জানুয়ারি মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মামলার রায়ের দিন রয়েছে। এই তিন ইস্যুকে সামনে রেখে তারা পরিস্থিতির অবনতি করার চেষ্টা করতে পারে সেই আশঙ্কা থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আগামীতে যাতে করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো ভাল করা যায়, স্বাভাবিক রাখা যায়, পাশাপাশি সব ধরনের হামলা ও নাশকতার ঘটনা রোধ করা যায় সেই ব্যাপারে চেষ্টা করা হবে। এই ব্যাপারে এনটিএমসি কাজ করছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও স্ব স্ব অবস্থান থেকে কাজ করছে। এইসব কাজের মধ্যে আগামীতে আরো সমন্বয় আনার জন্য চেষ্টা চলছে। সেই হিসাবে আমরা কাজ করছি।