বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতিরোধের মুখে মিলনের প্রক্রিয়া সমর্থকারীদের সভা পন্ড
নিউইয়র্ক থেকে এনা: যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মধ্যে গৃহদাহ যখন তুঙ্গে, কেন্দ্র কর্তৃক সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি এবং ৮ জন নেতাকে কারণ দর্শানো নোটিশ নিয়ে উত্তেজনা চলছে ঠিক সেই সময়ই যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিতে গৃহদাহ শুরু হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন আমেরিকায় এসেই কেন্দ্রের এবং দলের হাই কমান্ডের দোহাই দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশ কাটিয়ে নিজের ইচ্ছামত স্বৈরাচারি কায়দায় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। তার কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারেনি, বরং তাদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যদিও বিএনপির ক্ষুদ্র একটি অংশ তার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে। এই ক্ষুদ্র অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি শরাফত হোসেন বাবু, সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসিম ভুইয়া এবং স্টেট বিএনপির সভাপতি মাওলানা অলিউল্যাহ আতিকুর রহমান।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের এই প্রক্রিয়ার সাথে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি, সাবেক মন্ত্রী ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকাও রয়েছেন বলে জানা যায়। যদিও তিনি এখনো পর্যন্ত কোন স্টেট কমিটি গঠন করতে যাননি। এহসানুল হক মিলন ইতিমধ্যেই ইলিনয়ন এবং মিশিগান গিয়েছিলেন কমিটি গঠন করতে। এই দুটো স্টেটেই নিজের পছন্দের গুটিকতক ব্যক্তিকে নিয়ে কমিটি গঠন করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হন এবং কমিটি গঠন না করেই ব্যর্থ মনরথে ফিরে আসেন।
এহসানুল হক মিলনের কমিটি গঠনের অবৈধ প্রক্রিয়াকে মেনে নিতে পারেননি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী। তারা এই প্রক্রিয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে গত ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় (নিউইয়র্ক সময়) জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্টুরেন্টে এক কর্মী সমাবেশের আয়োজন করেন। কর্মী সমাবেশে নেতৃত্ব দেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ স¤্রাট, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি গিয়াস আহমেদ। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির এই চারটি গ্রুপ মেনে নিতে পারিনি এহসানুল হক মিলনের প্রক্রিয়াকে। যে কারণে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মী সমাবেশের আয়োজন করেন। তাদের এই কর্মী সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহ সভাপতি আলহাজ্ব সোলায়মান ভুইয়া, মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন, আবুল কাশেম, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, কাজী আজম, জাসাসের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গোলাম ফারুক শাহীন, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ আহমেদ, ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম জনি, বিএনপি নেতা সাঈদ মোহনসহ প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী।
সমাবেশ থেকে তারা দাবি জানান, আগে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি গঠন করা হবে, তারপরেই স্টেট কমিটি গঠন। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতৃবৃন্দই স্টেট কমিটি গঠন করবেন। তারা সভায় যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠানোর ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌঁছান। তারা নেতাকর্মীদের চাপের মুখে আরো সিদ্ধান্ত নেন যে, এহসানুল হক মিলনের অবৈধ প্রক্রিয়াকে যারা সমর্থন করবে তাদের সভা করতে দেয়া হবে না। এই সময় জ্যাকসন হাইটসের অন্য একটি রেস্টুরেন্টে মিলনের সমর্থনে বিএনপির একটি ক্ষুদ্র অংশ সভা করছিলো। অনুষ্ঠানে প্রায় ১৫ জনের মত কর্মী উপস্থিত ছিলেন। কর্মী সভায় থেকে তারা বিএনপির নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে তাদের সভা করতে বাঁধা দেন এবং সভা বন্ধের ঘোষণা দেন। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ নেতাকর্মীদের প্রচন্ড প্রতিরোধের মুখে মিলনের সমর্থকারীদের সভা পন্ড হয়ে যায়। এ সময় মিলনের সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে অনেকেই তেড়ে যান। অবস্থা বেগতিক দেখে তারাও স্থান ত্যাগ করেন। অন্যদিকে ঐক্যবদ্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরাও বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে ঐ রেস্টুরেন্টের নিচে চলে যান। তাদের স্লোগান ছিলো কমিটি গঠনের নামে চাঁদাবাজি চলবে না, মিলনের দালালরা হুঁশিয়ার সাবধান।
অন্যদিকে রেস্টুরেন্ট থেকে নেমেই তাৎক্ষণিক সমাবেশে আব্দুল লতিফ স¤্রাট এবং জিল্লুর রহমান জিল্লু বলেন, কেন্দ্রের নাম ভাঙ্গিয়ে কমিটি গঠনের নামে যুক্তরাষ্ট্রে কাউকে চাঁদাবাজি করতে দেয়া হবে না। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটির আগে কোন কমিটি মেনে নেয়া হবে না এবং কাউকে কোথাও কমিটি করতে দেয়া হবে না। তারা ক্ষোভের সাথে বলেন, কমিটির গঠনের নামে চাঁদাবাজি এবং দালালি বন্ধ করতে হবে। তারা আরো বলেন, আগামীতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে কাউকে সভা- সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। আগামী ১৯ ডিসেম্বর আমাদের পক্ষ থেকে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান ঘোষণা করা হয়েছে। এদিন অন্য কেউ বিএনপির নামে সভা করতে পারবে না। কেন্দ্রের কোন নেতা এলে তাকেও প্রতিহত করা হবে। তারা বলেন, প্রয়োজনে পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করবে তারপরেও সভা করতে দেয়া হবে না। আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে সেটা প্রতিহত করবো। আয়োজক, অতিথি কেউ রেহাই পাবে না।
উল্লেখ, শরাফত হোসেন বাবু, জসীম ভুইয়া এবং আতিকুল্লাহর নেতৃত্বাধীন বিএনপির ক্ষুদ্র অংশটি ১৯ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছিলো। অতিথি করা হয়েছে সাবেক মন্ত্রী সাদেক হোসেন খোকা ও সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনকে।