যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদকে অব্যাহতি, নিজামসহ ৮ জনকে কারণ দর্শানো নোটিশ
নিউইয়র্ক থেকে এনা: যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিবাদমান দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি অনুষ্ঠান এবং বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনা এবং অস্বস্তিকর পরিবেশ নিরসনে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করেছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির হস্তক্ষেপ এবং নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদিকা আইরীন পারভীনসহ আট জনকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় (নিউইয়র্ক সময়) জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ ঘোষণা দেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আবুল কাশেম, লুৎফুল করিম, শামসুদ্দিন আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশা, ফারুক আহমেদ, চন্দন দত্ত, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাইফুল ইসলাম রহিম, ডা. মাসুদুল হাসান, স্টেট আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান মিয়া, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা শাহ বখতিয়ার, হিন্দাল কাদির বাপ্পা, কাজী কয়েস, কোষাধ্যক্ষ আবুল মনসুর খান, শ্রমিক লীগের সভাপতি কাজী আজিজুল হক খোকন, সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান টুকু, রেজাউল করিম, সোলায়মান আলী, যুব লীগের সভাপতি মিসবাহ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আলম, মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মমতাজ শাহনাজ, সাধারণ সম্পাদিকা ফরিদা ইয়াসমীন, আওয়ামী লীগ নেত্রী শাহানা রহমান, সোলায়মান আলী, শেখ আতিকুল ইসলাম, সুবল দেবনাথ, আব্দুল মালেক, আব্দুল হামিদ, শহীদ কামরুল হীরা, হোসেন সোহেল রানা, শাখাওয়াত বিশ্বাস, জাহাঙ্গীর আলম, আশফাক মাসুদ, এম এ আলম বিপ্লব, সেলিনা সুলতানা, রুমানা আক্তার প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন যে, গত ৬ ও ৮ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ কার্যকরি কমিটির নামে সাধারণ সভা আহবান করে, যা সংগঠনের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সম্পূর্ণরূপে অবৈধ, অগঠনতান্ত্রিক এবং তার ক্ষমতার এখতিয়ারের বাইরে। যা গঠনতন্ত্রের ২২ ও ২২(ক) ধারার সুস্পষ্ট লংঘন। উক্ত সভায় অতিউৎসাহী হয়ে যোগ দেয় বাংলাদেশে থাকা দলের যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক আইরীন পারভীন। আহুত সভায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ সমস্ত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালায়। এমন কি সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ও কুৎসা রটনা করে সমস্ত মিডিয়ায় প্রচার করে। এমন সংবাদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের হাই কমান্ডের দৃষ্টিগোচর হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদকে অব্যাহতি দেয়ার নির্দেশ দেন এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উক্ত অব্যাহতি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত দেন। একই সাথে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, আইরীন পারভীনসহ উক্ত সভার আয়োজনে সম্পৃক্ত সকলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের জন্য বলা হয় এবং এটি দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর করার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশ ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে কার্যকর হবে। আরো যাদের কারণ দর্শনো নোটিশ প্রদান করা হয় তারা হলেন সহ সভাপতি মাহাবুবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক দেওয়ান মহিউদ্দিন, আব্দুল হাসিব মামুন, প্রচার সম্পাদক দুলাল মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, উপ- প্রচার সম্পাদক তৈয়বুর রহমান টনি। যাদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে তাদেরকে আগামী এক সপ্তাহর মধ্যে জবাব প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। উক্ত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব প্রদানে ব্যর্থ হলে তারা দল থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত হিসাবে গণ্য হবেন। এই সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট গত ৮ ডিসেম্বর সংবাদ সংস্থা এনা প্রকাশ করে। যা দেশে এবং প্রবাসের বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়। যদিও এনার সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। শেষ পর্যন্ত এনার সংবাদই সত্যি হলো।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী আরো বলেন, সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদের ছেলে লুৎফর রহমান সুইটকে নবীন লীগ নামে প্রধানমন্ত্রী আইটি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়কে তার অনুমোদন ব্যতিরেকে উপদেষ্টা বানিয়ে তার নামে চাঁদাবাজি করার অপরাধে জনসম্মুখে নোটিশ দিয়ে তার অবৈধ কাজকর্ম থেকে বিরত থাকতে সকলকে অবহিত করার সিদ্ধান্ত দেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ড. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, এখন দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ।
উল্লেখ্য, এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালামকেও কেন্দ্র থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিলো। এম এ সালামের ভাগ্যবরণ করলেন সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ। এম এ সালামকে অব্যাহতি দেয়ার পর সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন।