বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে, বাড়ছে জালিয়াতি
যুক্তরাজ্যের প্রতিবেদন প্রকাশ
ডেস্ক রিপোর্টঃ ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে, বাড়াচ্ছে জালিয়াতি আর সহিংসতা। দেশের নির্বাচন কমিশন এসব সমস্যা ধরছে না, নিশ্চিত করছে না স্বচ্ছতা।’ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে করা একটি প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
ব্রিটিশ সংস্থা ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ডিএফআইডি) সহযোগিতায় প্রতিবেদনটি তৈরি করেন হান্নাহ রবার্টস নামের এক বিশেষজ্ঞ। গত বছর ২৯ মার্চ প্রতিবেদনটি জমা দিলেও তা প্রকাশ করেনি ব্রিটিশ সরকার।
বৃহস্পতিবার আল-জাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষজ্ঞের ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করলে বাংলাদেশে সহিংসতা হতে পারে এ আশঙ্কায় তা প্রকাশ করেনি ব্রিটিশ সরকার।
আল-জাজিরার সাংবাদিক ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশের ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকারের তথ্য কমিশনারের কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ নভেম্বর দেওয়া এক চিঠিতে তথ্য কমিশনের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, প্রতিবেদনের বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সরকার। এতে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সাধারণ নির্বাচনের পাশাপাশি ওই বছর অনুষ্ঠিত কিছু উপজেলা নির্বাচনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়। ওই বছর ২৩ মার্চ চতুর্থ দফায় ৯২টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা নিয়েও ১৬ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বিশদ আলোচনা করা হয়।
আল-জাজিরার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে আগামী ৩০ ডিসেম্বর বিভিন্ন পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে প্রতিবেদনটি প্রকাশের কথা জানাল ব্রিটিশ সরকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে কাজ করার জন্য ২০১৪ সালের ১৪ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত পরামর্শক (হান্নাহ) ঢাকায় ছিলেন। তিনি নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন নিয়ে কাজ করা সংস্থা, দাতা সংস্থা, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। এ ছাড়া ওই সময়ে চলা উপজেলা নির্বাচনও প্রত্যক্ষ করার কথা বলা হয় ওই প্রতিবেদনে। ডিএফআইডির ১৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের শুরুতেই ২০১৪ সালের জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবে হলেও ‘…বৃহত্তর কোনো অংশগ্রহণ ছিল না।’ চতুর্থ পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে তুলে ধরেন, স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের চোখে ভোট জালিয়াতি ধরা পড়লেও নির্বাচন কমিশন এতে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশনাররা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। যেখানে সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করা হয়নি। ব্যাপারটি ভবিষ্যতের অব্যবস্থাপনাকেই ইঙ্গিত করে।’
প্রতিবেদনে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তীব্র সমালোচনা করা হয়। সেখানে বলা হয়, স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিজের লোক না দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিয়োগের ব্যাপারটি সরকারি দলের প্রভাবকে কেবল বাড়াবে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘(সমস্যা) আমলে না আনার নিয়মতান্ত্রিক দুর্বলতা নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতাকেই দুর্বল করে দিচ্ছে।’ এ প্রতিবেদনের বিষয়ে আল-জাজিরা কথা বলে নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। সিরাজুল ইসলাম জানান, এ মুহূর্তে নির্বাচন কমিশন পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে খুবই ব্যস্ত। তবে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একেবারেই স্বাধীন। এখানে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বাংলাদেশের অন্য কোনো নির্বাচন কমিশন এত স্বাধীন ছিল না।’ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ব্যাপারে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের সময় স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকেন। তাঁরা সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকেন।’