‘সালমান নয়; গাড়িটাই আসলে মাতাল ছিলো’

449771928বিনোদন ডেস্কঃ গুগল-এর আগে ভারতই তৈরি করেছিল প্রথম চালকহীন গাড়ি! গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা মামলায় সালমান খানকে বম্বে হাইকোর্ট বেকসুর রেহাই দেওয়ার জেরে এমনই তির্যক মন্তব্যে সরব হল সোশ্যাল মিডিয়া।

গাড়ি চাপা দিয়ে কাউকে হত্যা করেননি সালমান খান। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থাতেও ছিলেন না। ২০০২ সালে আমেরিকান বেকারির সামনে ফুটপাথবাসীকে তাহলে কে গাড়ির নীচে পিষে হত্যা করেছিল? না কি, চালকহীন গাড়ি নিজেই নিঃসাড়ে উঠে এসেছিল ঘুমন্ত ফুটপাথবাসীর উপর? জবাব মেলেনি, তবে বৃহস্পতিবার মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বম্বে হাইকোর্ট বলিউড নায়ককে সমস্ত অভিযোগ থেকে নিঃশর্ত নিষ্কৃতি দিয়েছে। আদালত জানিয়েছে, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান থেকে সালমানের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের কোনও প্রমাণ মেলেনি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সমালোচনার জোয়ার বয়ে গিয়েছে। ব্যঙ্গচিত্র ও টিপ্পনিতে ভরে গিয়েছে টুইটার-ফেসবুকের পাতা। এই প্রসঙ্গে মর্মস্পর্শী পোস্ট করেছেন এক ইউজার, যিনি নিজেও এমনই এক ‘হিট-অ্যান্ড-রান’ কাণ্ডের শিকার। দাবি, আইনের দৃষ্টিহীনতার ফলে ন্যায়-বিচার তিনিও পাননি।

‘১৯৯৮ সালের অক্টোবর মাস, আমি তখন বছর ২৮-এর তরতাজা যুবক। কিছু দিন আগে বিয়ে করেছি, সন্তানের পিতা হওয়ার সম্ভাবনা সবে দেখা দিয়েছে। আমেরিকান বেকারির কাছে এক বিখ্যাত শিল্পপতি কন্যা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সবেগে আমার অটোর পিছনে ধাক্কা মারলেন। দলা পাকিয়ে যাওয়া অটো থেকে চালক যখন হিঁচড়ে বের করলেন, আমার বাঁ পা’টা তখন রক্তাক্ত হাড়-মাংসের পিণ্ড। ধনকুবেরের সন্তান স্টিয়ারিং ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন বটে, কিন্তু পরক্ষণেই গাড়ি নিয়ে উধাও হন। হঠাত্‍ একজোড়া সবল হাত আমায় তুলে নিয়ে একটি গাড়ির সিটের পিছনে বসাল। তার পর সোজা হাসপাতালের বিছানায়। জেনেছিলাম উদ্ধারকর্তা পেশায় প্রবাসী ভারতীয়, অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত।

এর পর একাধিক অপারেশন, থেরাপি, ওষুধের লাইন। হাসপাতালে দেখা করতে এসেছিলেন অটোচালক। আর যাঁর গাড়ির চাকার নীচে চিরদিনের মতো থেঁতলে গিয়েছিল আমার যৌবন, সেই তরুণী দেখা করতে এসেছিলেন হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর। ফুলের তোড়া উপহার দিয়েছিলেন…এবং কিছু নীরব মুহূর্ত ও অশ্রুবিন্দু। সেদিনের পর তার দেখা পাওয়া গিয়েছিল ফের আদালতে। বলা বাহুল্য, প্রভাবশালী বাবার হাতযশে তাকে কোনও শাস্তি পেতে হয়নি।

ওই দুর্ঘটনা অর্থনৈতিক, পেশাগত, মানসিক এবং অনুভূতিগত ভাবে আমার প্রচুর ক্ষতি করেছে। ভাগ্য ভালো, পারিবারিক ও পেশাগত নির্ভরতা আমায় শেষ পর্যন্ত বাঁচিয়ে দিয়েছে। কিন্তু স্বল্পশিক্ষিত, গরিব মানুষদের সেই অবলম্বনটুকু থাকে না। তাই তাদের রক্ষা পাওয়ার সৌভাগ্য হয় না। হিট অ্যান্ড রান- দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু হতভাগ্যদের অসহায় অবস্থায় ফেলে রেখে যারা পালিয়ে যায়, তারা ক্ষমার অযোগ্য।

আমেরিকান বেকারির সামনে নিজের এসইউভি-র চাকায় মানুষ চাপা দিয়ে ১৩ বছর ধরে পালিয়ে বেড়িয়েছেন সালমান খান। প্রথমে দুর্ঘটনাস্থল থেকে, পরে জেলে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে। দৌড়শেষে তার অভীষ্ট পূর্ণ হয়েছে, বেকসুর রেহাই পেয়েছেন তিনি। আর এই ১৩টি বছর নির্লজ্জের মতো তাকে সমর্থন জানিয়ে গিয়েছে মেরুদণ্ডীন বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, যারা এই অভিনেতাকে ভাঙিয়ে কোটি কোটি টাকার মুনাফা লোটে।

আজ যারা সালমানের বেকসুর রেহাইয়ে উল্লসিত তাদের বলতে চাই, একবার কল্পনা করুন: আমেরিকান বেকারি থেকে বাড়ির জন্য পেস্ট্রি কিনে বেরোতেই, দুম! আপনার শরীর থেঁতলে দিল বিশাল এসইউভি। দরজা খুলে বেরিয়ে এসে আপনাকে একঝলক দেখলেন ম্যাটিনি আইডল সালমান খান, তারপরই গাড়ি নিয়ে ধাঁ। এরপর হাসপাতালে একাধিক অস্ত্রোপচার, আদালতে আইনি লড়াইয়ে একাধিকবার হাজিরা দিতে দিতে আপনি ক্লান্ত-বিধ্বস্ত ও ঋণের ভারে জর্জরিত। মাঝরাতে দুঃস্বপ্ন দেখে আপনি জেগে ওঠেন, ছেলে ফুটবল খেলতে চাইলে নিজের বিকল পা চেপে ধরে হাউহাউ করে কেঁদে ওঠেন। ১৩ বছর পর আদালত জানায় ঘাতক গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে আদৌ ছিলেন না নায়ক। এরপর ভক্তদের উচ্ছ্বাসে ভাসতে ভাসতে হাসিমুখে টিভি ক্যামেরার সামনে বাইট দেন সদ্য রেহাই পাওয়া নায়ক, বাড়ি ফিরে বন্ধুদের দেন পার্টি। আর আদালত থেকে ফেরার পথে রিক্ত আপনি বাসের প্রতিবন্ধী লেখা সিটে বসে হতাশার অন্ধকারে আরও তলিয়ে যেতে থাকেন।

১৩ বছর ধরে জ্বলতে থাকা আশার প্রদীপ হঠাত্‍ নিভে গিয়ে বুঝিয়ে দেয়, এই ভাবেই চিরজীবনের জন্য আপনাকে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছেন মানবতার প্রতিমূর্তি উদার-হৃদয় এক সুপারস্টার এবং আইনের অন্ধ বিচার।’