ছিনতাই করল ‘ছাত্রলীগ’, টাকা ফেরত দিল পুলিশ!
চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার থানার কয়েকশ গজ দূরেই সিরাজউদ্দৌলা রোড এলাকার পোস্ট অফিস গলির সামনে দিন-দুপুরে এক প্রবাসীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। তবে সেই ছিনতাইকারীরা স্থানীয় এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতার অনুসারী কর্মী বলে পুলিশ জানতে পেরে পুলিশই মধ্যস্থতা করে সেই টাকা ফেরৎ দিয়েছে! ছিনতাই হওয়া টাকার পুরোটা না পেয়ে প্রথমে মুখ খুললেও পরে হয়রানির ভয়ে চুপসে গেছে ভুক্তভোগী প্রবাসীর পরিবার।
এদিকে ছিনতাই হওয়ার ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে মামলা না নিয়ে পুলিশ নিজে ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে টাকার বেশিরভাগ অংশ ফেরত এনে দিয়েছে। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। এ নিয়ে পুলিশেরও স্পষ্ট কোনো বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার সাধন চন্দ্র বসাকের শ্যালক রাজীব বলেন, ‘বিকেলে চকবাজার পোস্ট অফিসের সামনে ১০ লাখ টাকা ছিনতাই হয়। পরে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ আমাদেরকে রাতে ছিনতাই হওয়া টাকা ফেরৎ দেয়।’ তবে কত টাকা কীভাবে ফেরত দিয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাসায় কথা বলে জানাবেন বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
এরপর নিজ থেকে কলব্যাক করে রাজীব বলেন, ‘আপা আর দুলাভাই বলেছে, আমরা টাকা পেয়েছি। যা হওয়ার হয়েছে। এখন আর পেপারে দিয়ে লাভ নেই। আর নিউজ করতে হবে না।’ এরপর ‘সমস্যা’ হবে জানিয়ে আর কোনো উত্তরই দেননি তিনি।
এ প্রসঙ্গে চকবাচজার থানার ওসি আজিজ আহমেদের সাথে রাত ১১টার পর থেকে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তিনি ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা ছিনতাইয়ের ঘটনার জন্য মামলা নিতে চাইলেও ওই প্রবাসী থানায় যোগাযোগ করেই চলে গেছে। তাকে ফোনেও পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে ওই লোকের মধ্যে অন্য কোনো ঘাপলা আছে। এ ছাড়া সোমবার সাধন চন্দ্রের ব্যাংক স্টেটমেন্ট হাতে পেলে বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হবে।’
তবে থানায় পুলিশের সমঝোতার মাধ্যমে ছিনতাই হওয়া টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়টি নিয়ে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি পুলিশের পক্ষ থেকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রোববার বিকেলে রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী প্রকৌশলী সাধন চন্দ্র বসাক তার শ্যালকসহ আইএফআইসি ব্যাংকের শাহ আমানত মার্কেট শাখা থেকে দশ লাখ টাকা উত্তোলন করে রিকশায় করে চকবাজার আসছিলেন। তাদের রিকশাটি চকবাজার পোস্ট অফিস পৌঁছালে কয়েকজন ছিনতাইকারী তাদের জাপটে ধরে পাশের একটি গলিতে নিয়ে যায়। এরপর অস্ত্রের মুখে সাধনের কাছ থেকে ব্যাগভর্তি দশ লাখ টাকা, পকেটে থাকা সাড়ে দশ হাজার টাকা এবং শ্যালক রাজীবের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায়।
রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা সাধন চন্দ্র বসাক চকবাজার শাহ মোহাম্মদ আলী লেইনে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। দুবাই প্রবাসী এই প্রকৌশলী ভবনের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি দেখতেই দেশে এসেছেন। ভবনটি নির্মাণে আইএফআইসি ব্যাংক থেকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণও নিয়েছেন তিনি। ভবনের টাইলস কেনার জন্য তিনি টাকা নিয়ে চকবাজার যাচ্ছিলেন। এ সময় পোস্ট অফিসের সামনে তাদের জোরপূর্বক পাশের গলিতে নিয়ে দশ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা।
অভিযোগ রয়েছে, সাধন চন্দ্র এ ঘটনায় ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে উল্টো ছিনতাইকারীদের সাথে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়ে বসে! পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে, ছিনতাইকারীরা স্থানীয় এবং চকবাজার এলাকার প্রভাবশালী এক ছাত্রলীগ নেতার অনুসারী নেতাকর্মী। যিনি সরকারের একজন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এবং থানার সাথে তার বেশ খাতির। সে কারণে পুলিশ মামলা না নেয়ার চেয়ে সমঝোতার চাপই প্রয়োগ করে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া সাধন চন্দ্র বসাকের ওপর। শেষ পর্যন্ত সাধন চন্দ্র বসাককে রীতিমতো সমঝোতা করতে বাধ্য করা হয়েছে। রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের সমঝোতাই ‘উদ্ধার’ নাটকের মাধমে চকবাজার থানাতেই পুলিশ সাধন চন্দ্রকে ছিনতাই হওয়া টাকা ফেরত দিয়েছে।
তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, ছিনতাই হলে পুরো টাকা ফেরত পাওয়া যায় না এবং ছিনতাইকারীরা এলাকার ‘ছোটভাই’ ও ‘পরিচিত’ বলে ‘হাত খরচের’ জন্য ১০ লাখ টাকা থেকে ২ লাখ টাকা কেটে রাখা হয়েছে। বাকি আট লাখ টাকা প্রবাসী সাধন চন্দ্র বসাককে দেয়া হয়েছে। রাতে থানার বৈঠকে টাকা বুঝে পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সাধন চন্দ্রের শ্যালক রাজিব। তবে উত্তর পাওয়া যায়নি পুলিশের কাছ থেকে। (বাংলামেইল)