ছাতকে পুরুষকে মহিলা সাজিয়ে অর্ধলক্ষাধিক টাকা জালিয়াতি: তোলপাড়

Fraudনিজস্ব সংবাদদাতা, ছাতক: ছাতকের ১৩ইউনিয়নের কাবিখা, কাবিটা, টিআর, এডিবি, এলজিএসপিসহ সরকারী বিভিন্ন বরাদ্ধের টাকা ব্যাপকহারে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এসব বরাদ্ধের দায়সাড়া অডিট ও প্রকল্প কাজের সুষ্টু নজরদারি না থাকায় লুঠপাটের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এতে একের পর এক লুঠপাটের ঘটনা থেকে পার পেয়ে যাচ্ছে প্রকৃত অপরাধিরা। সম্প্রতি কালারুকা ইউনিয়নে লিঙ্গ পরিবর্তন করে নজিরবিহীন একটি জালিয়াতির ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। কালারুকা-লামাপাড়া গ্রামের আবদুর নূরের পুত্র পিয়ারা মিয়াকে পিয়ারা বেগম সাজিয়ে টিবওয়েল স্থাপনের ৫০হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ইউপি সদস্য নূরুল ইসলাম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহত্তর কালারুকা গ্রামে আবদুর নূরের পিয়ারা বেগম নামে কোন মেয়ে নেই। অথচ সরকারী গেজেটে ২০১৩-১৪অর্থ বছরে এলজিএসপির বরাদ্ধে কালারুকা পূর্বপাড়ার আবদুন মন্নানের পুত্র সফিক মিয়া ও পিয়ারা বেগমের নামে ৫০হাজার করে ১লাখ টাকায় দু’টি টিবওয়েল স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সফিক মিয়া সাড়ে ৫হাজার টাকা মেম্বার নূরুল ইসলামকে দিয়ে টিবওয়েল পেয়েছেন বলে জানান তার আপন ভাই রফিক মিয়া। তার ওয়ার্ডে এলজিএসপির ৬টি ও এডিবির একটিসহ মোট ৭টি টিবওয়েলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া জনগুরুত্ব সম্পন্ন রাস্তায় কাজ না করে নিজের বাড়ির রাস্তায় প্রথমে মাঠি ভরাট ও পরে আরসিসি ঢালাইয়ে পাকা করেছেন। যদিও তার বাড়িতে একটি পরিবার ছাড়া আর কোন লোকজন বসবাস করেনা।
কালারুকা জামাল মিয়ার বাড়ি হতে লামাপাড়া জামে মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা মাঠি ভরাটে অতিদরিদ্রদের জন্যে কর্মসংস্থান (ইজিপিপি) প্রকল্পের দেড় লাখ টাকা বরাদ্ধ হয়। এ প্রকল্পের টাকা উত্তোলনের জন্যে ছাতক জনতা ব্যাংকে ২৫শ্রমিকের নামে ব্যাংক একাউন্ট করেন প্রকল্প চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মেম্বার। কিন্তু এদের মধ্যে অধিকাংশই তার আত্মীয়-স্বজন ও স্বচ্ছল ব্যক্তি। বাস্তবে অতিদরিদ্র ব্যক্তির কর্মসংস্থান হয়নি। এপ্রকল্পে জালিয়াতির মাধ্যমে ভূঁয়া সীল-স্বাক্ষরে স্বচ্ছলদের নামে ব্যাংক থেকে অতিদরিদ্রদের টাকা উত্তোলনে জড়িত ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান এলাকাবাসী। এব্যাপারে স্থানীয় লোকজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ইউপি সদস্য নূরুল ইসলাম জানান, এডিবির বরাদ্ধে শংকরপুরের আবদুল আমিন একটি টিবওয়েল ও এলজিএসপির বরাদ্ধে খালপারের আরব আলী, নজমপুরের চান্দালী, কালারুকার আশ্রব আলী, নিজাম উদ্দিন, সফিক মিয়া ও নজমপুরের তাজ উদ্দিন টিবওয়েল পেয়েছেন। তবে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়নি। বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের উল্লেখ করে বলেন, কালারুকাবাজার রাস্তা হতে তার বাড়ি পর্যন্ত দেড় লাখ টাকার আরসিসি ঢালাই, খালপার জামে মসজিদের মাঠ ভরাটে টিআর প্রকল্পের মেঃটন গম, কর্মসংস্থান কর্মসুচির টাকা দিয়ে আবদুস সামাদের বাড়ি হতে কালারুকার খাল পর্যন্ত ২লাখ ও জামালের বাড়ি হতে লামাপাড়া মসজিদ পর্যন্ত আরো ২লাখ টাকার মাঠি ভরাট করা হয়। এছাড়া নিজের ৫০/৬০হাজার টাকা দিয়ে ছোয়াব আলীর বাড়ি হতে মারফত আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় মাঠি ভরাট করেন বলে জানান, মেম্বার নূরুল ইসলাম। ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল হক বরাবরে ৪৯জনের আবেদনের প্রেক্ষিতে রাস্তাটি পাকা করেন। তার বাড়ির রাস্তা দিয়ে লোকজন মহাজাল নিয়ে সুরমা নদীতে আসা যাওয়া ও নদীপারের কবরস্থান জিয়ারত করেন। এছাড়া পিয়ারা মিয়ার নামের টিবওয়েল সফিক মিয়ার বাড়িতে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।