পার্বত্য চট্টগ্রামে সমস্যা ঘনীভূত হচ্ছে : দ্য হিন্দু
রাশেদ শাওন : বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমস্যা আরও ঘনীভূত হচ্ছে বলে শুক্রবার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের গণমাধ্যম দ্য হিন্দু। গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮ বছর পর গত বুধবার আগামি মাস থেকে নতুন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সামিতির (জেএসএস) নেতা জোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার, যিনি সন্তু লারমার হিসেবে পরিচিত, আন্দোলনের ঘোষণায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সমস্যা আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সীমান্তবর্তী পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটিতে শন্তু লারমা তার আন্দোলন পরিকল্পনা ঘোষণার সময় বলেন, আগামি বছরের ১ জানুয়ারী থেকে তিনি ‘একটি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার’ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সন্তু লারমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় অবৈধ পর্যটন বন্ধ করতে ও সামরিকীকরণ ঠেকাতে আমরা একটি অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় জনসংখ্যার পরিবর্তন ঘটাতে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মধ্যে উপজাতিদের ভূমি বণ্টন করা হয়েছে- এমন লেখা সংবলিত একটি পুস্তিকা বিতরণ করা হয়।
সন্তু লারমা আরও বলেন, ‘যদি এটা চলতে থাকে তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উপজাতিরা নিঃশেষ হয়ে যাবে। সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে।’
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার এবং লারমার জেএসএসের মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তি ত্রিপুরা এবং মিজোরামের সাথে সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ওই এলাকার শান্তি নিশ্চিত করে। এর আগে উপজাতিদের অভিযোগ অনুসারে ১৯৭০ সালের ‘সংখ্যালঘু বিরোধী নীতি’র কারণে বৌদ্ধ উপজাতি সম্প্রদায়গুলো বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে।
১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আ.লীগ সরকার বিভিন্ন বিবদমান ইস্যুতে তাদের সাথে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে। তবে জেএসএস নেতাদের অভিযোগ, ওইসব সমস্যা কখনোই সমাধান করা হয়নি, বরং প্রশাসন কর্তৃক জমি অধিগ্রহণ চলছেই।
জেএসএসের সভাপতি হিসেবে চুক্তিতে স্বাক্ষর করা সন্তু লারমা বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের ১৮ বছরেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের দাখিল করা প্রতিবেদনের কোনো উত্তর দেননি শেখ হাসিনাও।’ এর প্রতিবাদে ১ জানুয়ারী থেকে বিচারবিভাগসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেএসএস।
ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরামের সাথে সীমানা থাকায় এ ধরনের আন্দোলন দেশটিতে নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বলে দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এর আহে জেএসএস যখন একটি সশস্ত্র সংগঠন ছিল তখন তারা বাংলাদেশে তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদি কার্যক্রম চালিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে এমনকি পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিত।
পর্যবেক্ষকদের মতে, সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্ক পরিবর্তিত হয়েছে। তবে এ ধরনের আন্দোলনের ঘোষণা ভারতের উত্তর-পূর্বঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য ‘নতুন করে মাথাব্যাথা’ সৃষ্টি করতে পারে।