কক্সবাজারে ছাত্রলীগ নেতার রগকর্তন, জামায়াত কার্যালয়ে আগুন
ডেস্ক রিপোর্টঃ কক্সবাজার সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক নেতাকে মারধর ও তার পায়ের রগ কেটে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর জেলা জামায়াতে ইসলামীর কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে ছাত্রলীগ। এছাড়া কার্যালয়ের ঘেরাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙচুর করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে কার্যালয় সংলগ্ন খাবার মেস। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তবে আগুন ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণে আনে দমকল বাহিনীর সদস্যরা।
আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ দাবি করেছে, ছাত্রশিবির ‘ক্যাডার’রাই সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগ নেতা রাজিবুল ইসলাম মোস্তাকের (২৪) ডান পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। একই ঘটনায় ‘শিবির ক্যাডার’দের হামলায় মোস্তাক মুখে, হাতে ও মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন। এই ঘটনার পরপরই ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা জামায়াত কার্যালয়ে হামলা চালায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
জামায়াত কার্যালয়ে আগুন দেয়ার পর হাসপাতাল সড়ক ছাড়াও কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কের অধিকাংশ দোকানই বন্ধ হয়ে যায়। শহরের লালদীঘির পাড় এলাকায় ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। ওই সময় ছবি তুলতে গেলে দুই সাংবাদিক তাদের মারধরের শিকার হন।
রাত ৮টার পর থেকে পুরো শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও একাধিক সূত্র মতে, বুধবার কক্সবাজার সরকারি কলেজে মিছিল করাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এই ঘটনার রেশ ধরেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জেলা জামায়াত কার্যালয়ের সামনে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের কলেজ শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল ইসলাম মোস্তাকের উপর হামলা চালায়। ওই সময় হামলাকারীরা মোস্তাকের ডানপায়ের রগ কেটে দেয়। এছাড়াও ধারালো অস্ত্র, কাঠের লাঠি দিয়ে আঘাত করে মাথা, মুখে ও দুই হাতে মারাত্মকভাবে মারধর করে।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রিদুয়ান তারিক সাংবাদিকদের জানান, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আহতাবস্থায় ওই ছাত্রলীগ নেতাকে হাসপাতালে আনা হয়। তিনি জানান, তার ডানপায়ের রগ কাটা হয়েছে। দুই হাতের আঙ্গুলের হাড় ভেঙ্গে গেছে। এছাড়াও সারা শরীরে ধারালো অস্ত্র ও কাঠের লাঠির আঘাত রয়েছে।
এদিকে এই ঘটনার পরপরই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা জামায়াতের কার্যালয়ে হামলা চালায়। ওই সময় হামলাকারীরা জামায়াত কার্যালয়ের টিনের বেড়া ভাঙচুর করে এবং জামায়াত কার্যালয়ের দুইতলা ভবনের সাথে লাগোয়া খাবার ‘মেসে’ আগুন লাগিয়ে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর দমকল বাহিনীর লোকজন দ্রুত ছুটে আসলেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের আগুন নেভাতে বাধা দেয়। পরে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মাবু এসে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নেন।
এই ঘটনার রেশ ধরে সারা শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠান আখ্যা দিয়ে কোরাল রীফ মার্কেট, ইসলামী ব্যাংক ও শহরের ঝাউতলায় ইউনি-কক্স প্রিন্টার্সে হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিক্ষোভকালে রাত ৮টার দিকে শহরের লালদীঘির পাড় এলাকায় দুই সংবাদকর্মী আমান উল্লাহ ও আবদুল আলীম নোবেল হামলার শিকার হন। তারা বিক্ষোভের ছবি তুলতে গেলে হামলা শিকার হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে অন্যত্র সরিয়ে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এই ঘটনা চলাকালে কোথাও জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি। অন্যদিকে হামলার শিকার রাজিবুল ইসলাম মোস্তাককে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করার পর শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান, জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান মাবুসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা হাসপাতালে ভিড় জমান। সেসময় পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথও হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান মাবু দাবি করেন, ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরাই এই হামলা চালিয়েছে।
জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রিদুয়ান তারিক জানান, ছাত্রলীগের ওই নেতার ডানপায়ের রগ কেটে দেয়া হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ইশতিয়াক আহমদ জয় সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ সংগঠন। তারা আগের মতোই গুপ্ত হামলা, গুপ্তহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ জামায়াত অফিসে আগুন দেয়নি। বিক্ষুব্ধ জনতাই আগুন দিয়েছেন।’
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত সাড়ে ৯টা) শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। অধিকাংশ দোকানপাটই বন্ধ ছিল। যানবাহন চলাচল ছিল সীমিত। এই ঘটনায় জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।