যেভাবে ভাগ্যের জোরে বেঁচে ফিরল শিশু রায়হান
ডেস্ক রিপোর্টঃ সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই। কোচিং ছুটি হয়েছে। কোচিং শেষে বাড়ী ফিরছিল ৫ম শ্রেণির ছাত্র রায়হান (১১)। পায়ে হেঁটে রায়হান সাদুল্যাপুরের জামুডাঙ্গা ব্রিজের কাছে পৌঁছালে ওঁৎ পেতে থাকা তার ৯ বন্ধু তাকে সুকৌশলে ডেকে ঘাঘট নদীর নির্জন তীরে নিয়ে যায়। সেখানে সবাই মিলে রায়হানের বুকে, পেটে, মাথায় উপর্যপুরি কিল, ঘুষি মারতে শুরু করে। সবাই চলতি প্রাইমারী স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি) পরীক্ষার্থী ও একই স্কুলের ছাত্র।
ঘটনার এক পর্যায়ে রায়হান জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর রায়হানকে মৃত্যু নিশ্চত করতে ঘাঘট নদীতে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনাও আটে তারা। সে সময় ছালেমা বেওয়া নামে স্থানীয় এক মহিলা ওই স্থানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি ঘটনাটি দেখে চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসে।
পরে ওরা ৯ জনের মধ্যে ৮ জনেই পালিয়ে যায়। জনতার হাতে ধরে পড়ে আশা মিয়া (১২) নামের ছেলেটি। ধৃত আশা মিয়া জামুডাঙ্গা গ্রামের আবুল বাসার এর ছেলে।
পরে নির্যাতনকারী আশাকে ও নির্যাতিত শিশু রায়হানকে একত্রিত করে সাদুল্যাপুরের কোচিকন্ঠ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের সভাপতি ও জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। সেখানে আশা জানায়, সহপাঠিকে মারধর করাই তাদের কাজ।
এ ঘটনায় ওই স্কুলের অন্যান্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে ভয়-ভীতি বিরাজ করছে। নির্যাতিত শিশু রায়হান দামোদরপুর ইউনিয়নের মরুয়াদহ গ্রামের আব্দুল ওহাব আলীর ছেলে।
কচিকণ্ঠ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের সভাপতি ও জামালপুর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রেজা জানান, দুজনকে ডেকে সব ঘটনা শুনেছি। তারা ৯ বন্ধু মিলে অপর বন্ধুকে মারপিট করার জন্য ঘাঘট নদীর তীরে নিয়ে যায়। কিন্তু তারা এতোটাই চড়াও হয়েছিল যে, বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারতো। এমনকি হত্যার মতো ঘটনাও ঘটতে পারতো। যেহেতু বৃহস্পতিবার তাদের পরীক্ষা আছে। সেহেতু আগামী ৩০ নভেম্বর পিএসসি পরীক্ষা শেষে ১০ জনের অভিভাবককে ডেকে বিষয়টি মীমাংসা করা হবে।
নির্যাতনকারী অন্য ৮জন হচ্ছে- কচিকণ্ঠ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের হযরত (১১), আরাফাত (১১), মল্লিক (১২), সৌরভ (১০), রাফি (১১), রাশেদ (১২), মমিনুল (১২) ও আসান (১২)। এরা সবাই চলতি পিএসসি পরীক্ষার্থী।
নির্যাতিত রায়হানের বাবা মো. আব্দুল ওহাব জানান, তার সন্তানকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তারা নদীর তীরে ডেকে নিয়ে গিয়ে মারপিট করেছে। তিনি এই নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার দাবিসহ তার সন্তানের নিরাপত্তার দাবি জানান। এনিয়ে রায়হানের বড় ভাই ফজলে রাব্বী বৃহস্পতিবার বিকালে সাদুল্যাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।